Main Slogan:

হে ইমানদারগণ! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ কর (সূরা বাকারা : ২০৮)

মঙ্গলবার, ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

ইসলামে বেকারত্ব দূর করার উপায়

আমিনুল ইসলাম

বেকার সমস্যা বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়। বেকারত্বের হার বাংলাদেশে ক্রমে বেড়েই চলছে। এর মধ্যে যোগ হলো করোনা মহামারীর কারণে সৃষ্ট নতুন বেকারত্ব। করোনাভাইরাস বিশ্বব্যাপী আর্থিক সঙ্কট সৃষ্টি করেছে। চাকরিজীবী, শ্রমজীবীসহ প্রায় সব পেশার বহু মানুষ এতে কর্মহারা হয়েছে। তাই এই সঙ্কট থেকে উত্তরণের উপায় হিসেবে ইসলামের দৃষ্টিতে আমরা যা করতে পারি, তার একটা ধারণা এখানে আলোকপাত করা হলো:

এক. হতাশ না হয়ে মনোবল রাখা। দৃঢ় বিশ্বাস রাখা যে, এই সঙ্কট স্থায়ী নয়, সাময়িক। অচিরেই তা চলে যাবে, শিগগিরই আমরা সচ্ছলতা ফিরে পাবো ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ কুরআনে ইরশাদ করেছেন, কষ্টের সাথেই তো স্বস্তি আছে। অবশ্য কষ্টের সাথেই স্বস্তি আছে। (সূরা ইনশিরাহ-৫, ৬)
সুতরাং হতাশ না হয়ে বিশ্বাস রাখুন; বিপদ দূর হয়ে শান্তি আসবে।

দুই. লাজ না রেখে যেকোনো পেশায় আত্মনিয়োগ করা। ছোট-বড় কোনো পেশাকেই তুচ্ছ বা মর্যাদাহীন জ্ঞান না করে, নিজের যোগ্যতা সুবিধা ও পরিবেশের আলোকে যেকোনো পেশায় আত্মনিয়োগ করতে হবে। কামার, কুমার, ছুতার, জেলে, নাপিত ইত্যাদি কোনো পেশাই ইসলামের দৃষ্টিতে নিন্দনীয় নয়, যদি হালালভাবে হয়। বৈধ পন্থার সব পেশায় মুসলমান আত্মনিয়োগ করতে পারে। এতে অসম্মানের কিছু নেই। কুরআন কারিমে আল্লাহ এরশাদ করেন, সালাত সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর ফজল অনুসন্ধান করো। (সূরা জুমুআ-৯) মুফাসসিরে কেরাম বলেন, এ আয়াতে ‘ফজল’ দ্বারা ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে রিজিক সংগ্রহ করাকে বুঝানো হয়েছে। তাই ছোট-বড় সব হালাল ব্যবসাই সম্মানিত। হোক না তা ফুটপাথে। আরেক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, যখন তোমরা ইহরামমুক্ত হবে তখন শিকার করবে। (সূরা মায়িদা-২) এই আয়াতে শিকার পেশার কথা বলা হয়েছে। এতে বুঝা গেল মাছ শিকার বা জেলে পেশাও সম্মানিত।
হাদিস শরিফে নবীজী সা: এরশাদ করেছেন, হালাল রিজিক উপার্জন করা অপরাপর ফরজের পর একটি ফরজ কাজ। (মু’জামে কাবির-তাবারানি, হাদিস : ৯৯৯৩)
সুতরাং বেকারত্ব দূরীকরণে আমাদের হালাল উপায়ে যেকোনো একটি পেশা গ্রহণ করতে হবে।

তিন. কায়িক শ্রমের প্রতি অনীহা দূর করা। কায়িক শ্রমের প্রতি অনীহা আজকের বেকারত্বের হার বৃদ্ধির অন্যতম একটি কারণ। অভাব-অনটন সত্ত্বেও বর্তমান প্রজন্ম কায়িক বা শারীরিক পরিশ্রম করতে আগ্রহী নয়। পরিশ্রম করে নিজ উদ্যোগে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করতে চায় না। সবাই প্রাতিষ্ঠানিক চাকরির আশায় বেকার বসে থাকে। অথচ আল্লাহ তায়ালা কুরআন কারিমে ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তায়ালা কোনো সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজ অবস্থা নিজে পরিবর্তন করে। (সূরা রা'দ-১১) আরেক আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি কষ্টসহিষ্ণু করে। (সূরা বালাদ-৪)
এছাড়া বর্তমানে আমাদের শারীরিক সুস্থতা রক্ষার জন্যও কায়িক পরিশ্রম বা কাজ করা জরুরি।
অতএব প্রত্যেকটি বেকার লোক যদি প্রাতিষ্ঠানিক চাকরির আশায় বসে না থেকে, নিজের যোগ্যতার আলোকে ছোট বড় যেকোনো কাজে লেগে যায় এবং পরিশ্রম করে তাহলে বেকারত্ব দূর হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।

চার. নতুন নতুন আইডিয়া গ্রহণ করা। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতির ফলে পুরনো কাজগুলোই নতুনরূপে করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তাই এখন প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে হালালভাবে টাকা ইনকামের পথ সুগম হয়েছে। যেমন পরিবহন সেক্টরে উবার-পাঠাও, মার্কেটিং সেক্টরে অনলাইন শপ ইত্যাদি পেশাগুলো জাস্ট আইডিয়ার প্রয়োগ।
নতুন আইডিয়া প্রয়োগ করার ধারণা আমরা হাদিস থেকেই পাই। যেমন এক হাদিসে এসেছেÑ একবার নবীজী সা: সাহাবিদের মজলিসে বসা ছিলেন। এমন সময় একজন গরিব আনসার সাহাবি সেখানে হাজির হলেন। আনসারি তার কাছে কিছু ভিক্ষা চাইলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমার ঘরে কি কিছুই নেই?’ আনসারি বললেন, ‘শুধু নিম্নমানের একটা কম্বল আর একটা কাঠের পেয়ালা আছে। কম্বলের একদিক আমরা বিছাই এবং একদিক গায়ে জড়াই। আর কাঠের পেয়ালাটা পানি পান করার কাজে ব্যবহার করি।’
‘যাও, সে দুটি আমার কাছে আনো।’ প্রিয়নবী সা: সাহাবিকে হুকুম দিলেন। কিছুক্ষণের মধ্যে আনসারি সাহাবি কম্বল ও কাঠের পেয়ালা এনে প্রিয়নবীর সামনে রাখলেন। প্রিয়নবী সা: সে দুটি হাতে তুলে নিলেন। তিনি জিনিস দুটি নিলাম করলেন। ‘কে কিনবে এই জিনিস দুটি?’ তিনি আওয়াজ দিলেন। ‘আমি, হে আল্লাহর রাসূল! আমি এ দুটি জিনিস এক দিরহামে কিনে নিতে চাই।’ বললেন একজন সাহাবি। ‘কে এক দিরহামের বেশি দাম দিতে পারে।’ দু’বার, তিনবার প্রিয়নবী সা: আওয়াজ দিতে থাকলেন। ‘আমি দুই দিরহামে নিতে পারি।’ আরেকজন সাহাবি বলে উঠলেন।
তিনি দুই দিরহামের বিনিময়ে কম্বল ও পেয়ালাটি বিক্রি করে দিলেন। দিরহাম দুটি আনসারিকে দিয়ে বললেন, যাও, এক দিরহাম দিয়ে খাবার কিনে ঘরে নিয়ে যাও। আর অন্য দিরহামটি দিয়ে একটি কুঠার কিনে নিয়ে এসো। প্রিয় নবীর কথামতো আনসারি সাহাবি বাজারে গেলেন; এক দিরহাম দিয়ে খাবার কিনে ঘরে নিয়ে গেলেন। আরেক দিরহাম দিয়ে একটি লোহার কুঠার কিনে নিয়ে নবীর কাছে এলেন। প্রিয়নবী নিজের হাতে কুঠারটিতে কাঠের বাঁট লাগিয়ে দিলেন। ‘যাও, বনে যাও, কাঠ কাটতে থাকো এবং বাজারে এনে বিক্রি করতে থাকো।’ প্রিয়নবী সা: আনসারিকে হুকুম দিতে থাকলেন। ‘তবে হ্যাঁ, মনে রেখো আগামী ১৫ দিন তোমাকে যেন আর এদিকে না দেখি।’
আনসারি সাহাবি কুঠারটি হাতে নিয়ে বনের পথে চলে গেলেন। এরপর থেকে তাকে আর কারোর কাছে হাত পাততে দেখা যায়নি। বন থেকে কাঠ কেটে এনে বাজারে বিক্রি করতেন এবং তার বিনিময়ে যা পেতেন তা দিয়ে বেশ ভালোভাবে তার সংসার চলে যেত। এমনকি সংসারের খরচ চলার পরও প্রতিদিন কিছু পয়সা থাকত। ১৫ দিন পর যখন তিনি প্রিয়নবীর কাছে এলেন তখন তিনি বাড়তি ১০ দিরহামের মালিক। (সুনানে আবু দাউদ হাদিস ২১৯৮)
তাই বেকার বসে না থেকে, গবেষণা করে নতুন আইডিয়ার প্রয়োগ করে স্মার্টভাবে অনলাইন বিজনেসের মাধ্যমে বেকারত্ব দূর করে স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। আমীন।

লেখক : মুহাদ্দিস, জামেয়া রাহমানিয়া দারুল ইসলাম, দক্ষিণ কাজলা, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা

Please browse this link: 



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Relaeted Other Islamic Blog

Other Blog-site: