Main Slogan:

হে ইমানদারগণ! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ কর (সূরা বাকারা : ২০৮)

বুধবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১১

ঈদুলফিতরের মাহাত্ম্য ও তাৎপর্য

ঈদুলফিতরের মাহাত্ম্য ও তাৎপর্য

লেখক: মাওলানা জাকির হোসাইন আজাদী | বুধ, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১১,


এক মাস সিয়াম সাধনার পর সমগ্র মুসলিম বিশ্বে পবিত্র ঈদুল ফিতরের আনন্দের হিল্লোল প্রবাহিত হয়। রমজান শেষ হলে ঈদুল ফিতরের রাতটি খুবই মাহাত্মপূর্ণ। যেমন রসূলুল্লাহ (স.) বলেন ঃ যে ব্যক্তি দু’ঈদের নেকীর আশাধারী হয়ে সালাতে দাঁড়াবে তার হূদয় সেদিন মরবে না যেদিন অনেক মানুষ মনমরা হয়ে থাকবে। (ইবনে মাজাহ, তালখীসুল হাবীব ১৪৩ পৃঃ, কানযুল উম্মাল ১৯৮ পৃঃ)
বিখ্যাত তাবেঈ আল্লামা মুজাহিদ (রহ.) বলেন, রমজানের শেষ দশকের রাতের মত ঈদুল ফিতরের রাতও মাহাত্ম্যপূর্ণ এ কারণেই মনে হয় এই প্রসিদ্ধ তাবেঈ (কারো মতে সাহাবী) আবদুর রহমান ইবনে আসওয়াদ বলেন, ঈদুল ফিতরের রাতে অন্যান্যদের মত দুনিয়াবী রং ঢংয়ে রোজা পালনকারীদের মজে থাকা কোন মতেই চলবে না। বরং পারতপক্ষে ঐ রাত নফল ইবাদাতে কাটানো উচিত।
আল্লামা হাফিয ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) বলেন, একথা বর্ণিত আছে যে, রসূলুল্লাহ (স.) সর্বপ্রথম যে ঈদের সালাত পড়েন তা হল দ্বিতীয় হিজরীতে। তারপর থেকে তিনি দুনিয়া ত্যাগ করা পর্যন্ত আজীবন দু’ঈদের সালাত পড়েন। (তালখীসুল হাবীর ১৪২ পৃঃ)
রসূলূল্লাহ (স.) দু’ঈদের দিনে গোসল করতেন। (ইবনে মাজা ৯৪পৃঃ) তারপর তিনি সবচেয়ে সুন্দর কাপড় পরতেন। কখনো তিনি সবুজ রংয়ের চাদর পরতেন। (নাসাঈ ১ম খণ্ড-১৭৮পৃঃ) আবার কখনো লাল ফুলের বুটি দেয়া চাদর পরতেন।(যাদুল মা’আদ ১ম খণ্ড-১২১পৃঃ) জাবির (রা.) বলেন, দু’ঈদে ও জুমআতে নবী (স.)তাঁর লাল বুটি দেয়া বিশেষ চাদরটি পরতেন। (ইবনে খুযায়মা, নায়লুল আওতার ৩য় খণ্ড -১৬৬ পৃঃ) প্রত্যেক ঈদে তিনি এক বিশেষ ইয়েমেনী চাদর পরতেন। (কিতাবুল উম্ম ২০৬ পৃঃ) তারপর তিনি সর্বোত্তম খুশবু লাগাতেন। (হাকিম, ফতহুল আল্লাম ১ম খণ্ড -২২১পৃঃ) তিনি বেজোড় খেজুর খেয়ে ঈদুল ফিতরের জন্য সকালে ঘর থেকে বের হতেন। (বুখারী ১৩০ পৃঃ) এবং ঈদুল আযহার দিনে সালাত না পড়া পর্যন্ত কিছু খেতেন না। (তিরমিযী ১ম খণ্ড-৭১ পৃঃ ইবনে মাজাহ, মিশকাত ১২৬ পৃঃ) আলী (রা.) বলেন, সুন্নাত হল ঈদগাহে পায়ে হেঁটে যাওয়া। (তিরমিযী ১ম খণ্ড-৬৯পৃঃ বুলুগুল মারাম ৩৫ পৃঃ) তাই তিনি হেঁটে ঈদগাতে যেতেন এবং হেঁটেই বাড়ী ফিরতেন। (ইবনে মাজাহ ৯৩) তিনি এক রাস্তা দিয়ে ঈদগাহে যেতেন এবং অপর রাস্তা দিয়ে বাড়ী ফিরতেন। (ইবনে খুযায়মা ২য় খন্ড, ৩৪৩ পৃঃ) এবং ঘর থেকে ঈদগাহ পর্যন্ত তিনি তাকবীর দিতে দিতে যেতেন। (হাকিম, তালখীসুল হাবীর, ১৪২ পৃঃ)
আবূ সাঈদ খুদরী (রা.) বলেন, নবী (স.) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিনে ঈদগাহে যেতেন। (বুখারী, ১৩১ পৃঃ, মুসলিম ১ম খণ্ড-২৯০ পৃঃ, মিশকাত ১২৫পৃঃ)
আবূ হুরায়রাহ (রা.) বলেন, একবার বৃষ্টি হওয়ায় নবী (স.) সবাইকে নিয়ে মসজিদে ঈদের সালাত পড়েন। (আবু দাঊদ ১ম খণ্ড-১৬৪ পৃঃ ইবনে মাজাহ ৯৪পৃঃ, মিশকাত ১২৫পৃঃ)
উক্ত দু’টি হাদীস প্রমাণ করে যে, কোন এক মাঠেই ঈদের সালাত পড়া উত্তম ও সুন্নাত। তবে বৃষ্টি হলে এবং মাঠে সালাত পড়া সম্ভব না হলে মসজিদে ঈদের সালাত পড়া যাবে।
ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত নবী (স.) ঈদের দিন দু’ রাকআত সালাত পড়েন। তার আগে এবং পরে কোন সালাতই তিনি পড়েননি। (সিহাহ সিত্তা ও মুসনাদে আহমাদ, বুলুগুল মারাম- ৩৫পৃঃ) একদা ওয়াসিলাহ ঈদের দিনে রসূলূল্লাহ (স.) এর সাথে সাক্ষাত করে বলেন, ‘আল্লাহ আমাদের এবং আপনার তরফ থেকে ঈদকে কবূল করুন। তখন তিনি বললেন, হ্যাঁ। তাকাব্বালাল্লা-হু মিন্না ওয়া মিনকা। (ইবনে আদী) রসূলুল্লাহ (স.) এর সাহাবীগণ যখন ঈদের দিন সাক্ষাত করতেন তখন একে অপরকে বলতেন তাকাব্বালাল্লা-হু মিন্না ওয়া মিনকা। (ফতহুল বারী ২য় খণ্ড-৪৪৬ পৃঃ) রসূলূল্লাহ (স.) ঈদগাহে যাবার সময় একটা লাঠি বা বল্লম নিয়ে যেতেন এবং সালাত শুরুর আগে সেটা তাঁর সামনে সুতরা হিসেবে ব্যবহার করতেন। (বুখারী ১৩৩ পৃঃ) অতঃপর তিনি আল্লাহু আকবার বলে তাকবীরে তাহরীমা বলে হাত বাঁধতেন। তারপর তিনি সানা পড়তেন। (ইবনে খুযায়মা)
নু’মান বিন বাশীর (রা.) বলেন, রসূলূল্লাহ (স.) দু’ ঈদের ও জুমআতে সূরা সাব্বিহিসমা রব্বিকাল আ’লা (সূরা-আ’লা) ও হাল আতা-কা হাদীসুল গাশিয়াহ (সূরা গাশিয়া) পড়তেন। আর যখনই ঈদ ও জুম’আএক দিনে পড়তেন তখনও তিনি ঐ সূরা দু’টিকে উক্ত দুই সালাতেই পড়তেন। (মুসলিম ১ম খণ্ড ২৮৮পৃঃ)
রসূলূল্লাহ(স.) ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতরের দিনে সূরা কাফ ও সূরা কামার পড়তেন। (মুসলিম ১ম খণ্ড ২৯১পৃঃ, আবূ দাঊদ ১ম খণ্ড ৬২ পৃঃ, শিকাত -৮০পৃঃ)
আবূ সাঈদ খুদরী (র.) বলেন, নবী (স.) ঈদুল ফিতর ও আযহার দিনে ঈদগাহের দিকে রওয়ানা হতেন। অতঃপর প্রথম কাজ সালাত আদয় করতেন। তারপর সালাম ফিরে লোকেদের দিকে মুখ করে দাড়াতেন। তখন সব লোকেরা লাইন দিয়ে বসে থাকতো। অতঃপর তিনি তাঁদেরকে ওয়াজ ও নসীহাত করতেন এবং কোন কাজের নির্দেশ দিতেন। তারপর বাড়ী ফিরতেন। (বুখারী ১৩১পৃঃ মুসলিম ১ম খণ্ড-২৯০ পৃঃ, মিশকাত-১২৫পৃঃ, নাসাঈ ১ম খণ্ড-১৭৯পৃঃ)
ইবনে আব্বাসের (রা.) বর্ণনায় আছে যে, পুরুষদের সামনে নাসিহত করার পর রাসুলুল্লাহ (স.) মেয়েদের নিকটে যেতেন এবং তাদেরকেও ওয়াজ ও নসিহত করতেন এবং দান খয়রাত করার হুকুম দিতেন। তখন মেয়েরা তাদের কানের ও হাতের গহনা খুলে বেলালের মাধ্যমে রসূলূল্লাহ (স.) এর কাছে পাঠাতেন। (বুখারী ১৩১ পৃঃ, মুসলিম ১ম খণ্ড-২৮৯ পৃঃ, মিশকাত ১২৫ পৃঃ)
এ হাদীস প্রমাণ করে যে, পুরুষদের সামনে ঈদের যে নসীহাত হয় তার আওয়াজ যদি নারী মুসল্লীরা শুনতে না পায়, তাহলে ইমামের উচিত পুরুষদের খুত্বা শেষ করে মেয়েদের কাছে গিয়ে কিছু বক্তব্য পেশ করা। ইমাম নবনী (রহ.) বলেন, খতীবের উচিত ঈদুল ফিতরের খুত্বায় শ্রোতাদেরকে ফিতরার নিয়মনকানুন শেখানো এবং ঈদুল আজহার খুত্বায় কুরবানীর বিধান শেখানো। (রওযাতুত তা-লেবীন ২য় খণ্ড, ৭৩ পৃঃ)
মহানবী (স.) এর ঈদের খুত্বাহ দেয়ার সময় ঈদগাহে কোন মিম্বার থাকত না। (বুখঅরী-১৩১ পৃঃ)
তাই তিনি বেলালের কাঁধে হাত রেখে বৃক্ততা করতেন। (মুসলিম ১ম খন্ড-২৮৯পৃঃ) কখনো তীরের উপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে খুত্বাহ দিতেন। (আবূ দাঊদ ১ম খণ্ড-১৬২পৃঃ) আবার কখনো বল্লমের উপর ভর রেখে খুত্বাহ দিতেন। (মুসনাদে শাফিঈ, মিশকাত ১২৬পৃঃ) খুত্বার ভেতরে তিনি বেশী করে তাকবীরও দিতেন। (ইবনে মাজাহ ৯২পৃঃ)
ঈদের দিনে ‘খাস করে’ মুসাফাহ এবং কোলাকুলি ও আলিঙ্গন করার ব্যপারে কুরআন ও হাদীসে কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। তবে কোন কোন হাদীস দারা প্রমাণিত হয় যে, কোন মুসলিম ব্যক্তির সাথে সাক্ষাত হলেই তাকে সালাম করতে হবে। (মুসলিম মিশকাত ১৩৩পৃৃঃ)।
রসূলূল্লাহ (স.) বলেন ঃ যেদিন ঈদুল ফিতরের দিন সেদিন আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাদের সামনে গর্ব করতে থাকেন। অতঃপর বলেন, হে আমার ফেরেশতাগণ! মজদুরের পুরস্কার কি, যে তার কাজ পুরোপুরি করেছে? তখন ফেরেশতাগণ বলেন, হে আমাদের প্রতিপালক! তার পুরস্কার তাকে পুরোপুরি এর প্রতিদান দেয়া। এবার আল্লাহ বলেন, হে আমার ফেরেশতাগণ! আমার দাস ও দাসীরা তাদের ওপর চাপানো কর্তব্য পালন করেছে। তারপর তারা উচ্চঃস্বরে (তাকবীর) ধ্বনি দিতে দিতে দো’য়ার জন্য (ঈদগাহে) রওয়ানা হয়েছে। আমার সম্মান ও গাম্ভীর্যের কসম! এবং আমার উদারতা ও উচ্চমর্যাদার কসম! আমি তাদের ডাকে অবশ্য সাড়া দেব। অতঃপর তিনি বলেন, আমি তোমাদের ক্ষমা করে দিলাম এবং তোমাদের পাপগুলি পূণ্য দ্বারা বদলে দিলাম। নবী (স.) বলেন, তাই তারা ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়ে ফিরতে থাকে। (বায়হাকীর শুআবুল ঈমান, (মিশকাত ১৮৬-১৮৩ পৃঃ)
আল্লাহ আমাদের সংযম সাধনা কবুল করে ঈদগাহ হতে নিষ্পাপ অবস্থায় ফেরার তাওফীক দান করুন, আমীন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Relaeted Other Islamic Blog

Other Blog-site: