Main Slogan:

হে ইমানদারগণ! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ কর (সূরা বাকারা : ২০৮)

মঙ্গলবার, ৩১ আগস্ট, ২০১০

সাহাবীদের রোজা পালন

সাহাবীদের রোজা পালন
-হোসাইন আল-খালদুন

সফরের এবং যুদ্ধের মত সংকটময় মুহূর্তেও সাহাবায়ে কিরাম সিয়াম ছাড়তেন না। যেমন আবূ বকর (রা.)-এর যুগে ইমামার যুদ্ধে এক সাহাবী আবদুলস্নাহ ইবনে মাখরামাহ (রা.) সিয়াম অবস্থায় যুদ্ধ করতে করতে খুব আঘাত পেয়ে যমীনে নেতিয়ে পড়েন। তাঁকে দেখে সাহাবী আবদুলস্নাহ ইবনে ওমর (রা.) তাঁর কাছে এলেন। তখন যখমে জর্জরিত ও পিপাসায় ব্যাকুলিত ইবনে মাখরামাহ (রা.) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, এমতাবস্থায় সিয়াম ভাঙ্গা যাবে কিনা? তিনি বললেন, হঁ্যা। তখন ইবনে মাখরামাহ (রা.) বললেন তাহলে ভাই! ঢালে করে একটু পানি এনে দাও। ইবনে ওমর (রা.) গেলেন এবং একটি হাওজ থেকে আঁজলভরে চামড়ার ঢালটি ভরলেন। অতঃপর পানি নিয়ে তিনি যখন এলেন তখন ইবনে মাখরামাহ (রা.) যখমে জর্জরিত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। ফলে তিনি রক্তাক্ত দেহে মাটিতে লুটোপুটি খেয়ে শহীদ হয়ে আলস্নাহ রাব্বুল 'আলামীনের কাছে ইফতার করতে গেলেন। (তারীখে বুখারী, ইসা-বাহ- ৩য় খণ্ড ২৬৬ পৃষ্ঠা) আর এক সাহাবী ইবনে আবী হাইয়্যাহ আহমাসী (রা.) একদা সিয়াম অবস্থায় যুদ্ধের মাঠে লড়ছিলেন। ভীষণ যুদ্ধ হচ্ছিল। লড়তে লড়তে তিনি আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে পড়লেন। তাঁর সঙ্গীরা তাকে নিজেদের জায়গায় নিয়ে আসলেন। অতঃপর তাঁরা তাঁকে পানি পান করতে দিলেন, কিন্তু সিয়াম ভেঙ্গে যাবে বলে তিনি তা পান করলেন না। কিছুক্ষণ পর তিনি দুনিয়া ছেড়ে চলে গেলেন তাঁরই কাছে যাঁর জন্য তিনি সিয়াম রেখেছিলেন। (ইসা-বাহ ফী মা'রি ফাতিস সাহা-বাহ)

সবাই দুনিয়াতে রোজা রাখে এবং দুনিয়াতেই ইফতার করে। কিন্তু এ সাহাবী (রা.) দুনিয়াতে রোজা রেখে আখিরাতে আলস্নাহ রাব্বুল 'আলামীনের কাছে ইফতার করতে গেলেন। তাই ওমর (রা.) যখন তাঁর শহীদ হবার খবর শুনলেন তখন বললেন, তিনি দুনিয়া দিয়ে আখিরাতকে ক্রয় করে নিয়েছেন।

হায়! আমার সিয়াম ত্যাগকারী ভাইয়েরা এত্থেকে কোন শিক্ষা নেবেন কি? আর তাঁদের সিয়াম রাখার সুমতি হবে কি?

বিশিষ্ট হাদীস বিশারদ হাফেজ ইমাম যাহাবী (রহ.) বলেন, যে ব্যক্তি বিনা অসুখে রমজানের সিয়াম ছেড়ে দেয় বরং তার ইসলাম সম্পর্কে সন্দেহ আছে। লোকেরা তাকে যিনদীক মনে করে। (ফিকহুস সুন্নাহ, ১ম খন্ড-৪৩৪ পৃষ্ঠা)

তিনি (স.) বলেন: আমার উম্মাতকে রমজান মাসে পাঁচটি জিনিস দান করা হয়েছে, যা আমার আগে কোন নাবীকেই দান করা হয়নি। প্রথম এই যে, রমজান মাসের প্রথম রাত যখন আসে তখন আলস্নাহ রাব্বুল 'আলামীন তাদের প্রতি দৃষ্টিপাত করেন। আর যার উপর তাঁর দৃষ্টি পড়ে তাকে তিনি কখনো শাস্তি দেবেন না। দ্বিতীয় হল, তাদের মুখের গন্ধ আলস্নাহর নিকট মেশ্কের সুবাসের চেয়ে সুগন্ধ। তৃতীয় হল, ফেরেশতারা তাদের জন্য প্রত্যেক দিন ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকে। চতুর্থ হল, আলস্নাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা জান্নাতকে নির্দেশ দিয়ে বলেন, তুমি আমার বান্দাদের জন্য তৈরী হও এবং সজ্জিত হও। অতি শীঘ্রই তারা দুনিয়ার ক্লান্তি থেকে আমার ঘরে ও আমার সম্মানে স্বস্তি চাইবে। পঞ্চম হল, যখন শেষ রাত আসে তখন তাদেরকে ক্ষমা করে দেয়া হয়। একজন সাহাবী জিজ্ঞেস করল, এটা কি ক্বদরের রাত? তিনি বললেন, না। তুমি কি মজদুরদের দেখনি যে, তারা যখন কাজ থেকে অবসর পায় তখন তাদের মজুরি পুরোপুরি প্রদান করা হয়। (বাইহাকীর শুআবুল ঈমান কানযুল উমমা-ল ৩০২ পৃষ্ঠা)

আবূ সাঈদ খুদরীর (রা.) বর্ণনায় রাসূলুলস্নাহ (স.) বলেন: নিশ্চয় আলস্নাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার কাছে (রমজানের) প্রত্যেক দিনে ও রাতে (জাহান্নাম থেকে) মুক্তি দেয়া অনেক দাস রয়েছে। ওর প্রত্যেক দিন ও রাতে প্রত্যহ মুসলিমের জন্য কবূলযোগ্য একটি দু'আ অবশ্যই রয়েছে। (মুসনাদে বাযযার, সহীহুত তারগীব, ১ম খণ্ড, ৪৯১ পৃষ্ঠা, হাদীস নম্বর-৯৮৮)

বর্জনকারীরাও কাফিরে পরিণত হয়। উক্ত দুই নির্দেশ লঙ্ঘনকারীর হুকুমের বিষয় বিনা ব্যবধানে একই। সালাত দিন ও রাতের কর্তব্য, যা প্রতিদিনে পাঁচবার এবং সিয়াম বাৎসরিক কর্তব্য, যা সারা বছরের মাত্র একবার অপরিহার্য। (বাযলুল মানফাআহ, ৭৮ পৃষ্ঠা)

আবূ 'উমামাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুলস্নাহ (স.) বলেনঃ একদা আমি স্বপ্নে দেখলাম যে, একটি সম্প্রদায় উল্টোভাবে ঝুলছে। তাদের গালটি ফাড়া। তা থেকে রক্ত ঝরছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এরা কারা? বলা হয় এরা তারা, রমজান মাসে বিনা ওজরে যারা সিয়াম রাখে না। (সহীহ ইবনে খুযাইমাহ, ৩য় খণ্ড, ২৩৭ পৃষ্ঠা, ইবনে হিব্বান, বাশারাতুল ফোসসাক- ৩৭ পৃষ্ঠা) রাসূলুলস্নাহ (স.) বলেনঃ বিনা ওজরে রমজানের সিয়াম ত্যাগকারী অবিশ্বাসীরূপে পরিগণিত। (ফিকহুস সুন্নাহ, ১ম খণ্ড, ৪৩৪ পৃষ্ঠা) যে ব্যক্তি শারীয়তী ওর ছাড়া এ মাসের একটি রোজাও ছেড়ে দিবে সে যদি সারা জীবনও সিয়াম পালন করে তবুও তার পাপের খেসারত হবে না। (বুখারী)।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Relaeted Other Islamic Blog

Other Blog-site: