Main Slogan:

হে ইমানদারগণ! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ কর (সূরা বাকারা : ২০৮)

রবিবার, ২৯ আগস্ট, ২০১০

সাহারী ইফতারের মাহাত্ম্য ও তাৎপর্য



সাহারী ইফতারের মাহাত্ম্য ও তাৎপর্য

আলস্নাহ রাব্বুল আলামীন দয়া ও করুণার আধার। তিনি কখনই চান না তার কোন বান্দাকে শাস্তি দিতে। বরং তিনি সবসময় চান তার বান্দাদেরকে পাপমুক্ত করে জান্নাত লাভের উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে। সেজন্য তিনি ক্ষমা লাভের অবাধ সুযোগ দিয়েছেন প্রতি বছর রমজানুল মোবারকের মাধ্যমে। এর মধ্যে ইফতার ও সাহারী অন্যতম অবদান। নিম্নে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-

ইফতার: রসূল (স.) বলেনঃ কেউ যদি রমজান মাসে কোন রোজাদারকে ইফতার করায় তাহলে ঐ ইফতার করানোটা তার গুনাহ মাফের ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির কারণ হবে এবং সে একটি রোজার সওয়াব পাবে অথচ রোজা পালনকারীর নেকী মোটেই কমানো হবে না। সাহাবীরা বলেন, হে আলস্নাহর রসূল (স.) আমাদের এমন সংস্থান নেই, যা দিয়ে আমরা কাউকে ইফতার করাতে পারি? তিনি (স.) বলেন, আলস্নাহ তাকেও এই সওয়াব দেবেন, যে ব্যক্তি কোনো রোজা পালনকারীকে এক ঢোক দুধ অথবা একটা শুকনো খেজুর কিংবা এক চুমুক পানি দিয়েও ইফতার করাবে আর যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে পরিতৃপ্তিসহকারে খাওয়াবে আলস্নাহ তাকে আমার "হাউজে কাওছার" থেকে এমনভাবে পানি পান করাবেন যার ফলে সে জান্নাতে না পেঁৗছানো পর্যন্ত আর তৃষ্ণার্ত হবে না। (বায়হাকী ওয়াবুল ঈমান, মেশকাত ১৭৪ পৃষ্ঠা)

আলস্নাহর রসুল (স.) বলেনঃ লোকেরা ততক্ষণ কল্যাণে থাকবে যতক্ষণ তারা ইফতার জলদি করবে। (বুখারী, মুসলিম ১ খণ্ড-৩২১ পৃঃ মিশকাত ১৭৫ পৃঃ) আলস্নাহ রাব্বুল আলামীন বলেনঃ আমার নিকট সবচেয়ে প্রিয় সেই বান্দা যে ইফতার সঠিক সময়ে করে। (তিরমিযী ১ম খণ্ড, ৮৮ পৃঃ, মেশকাত ১৭৫ পৃঃ) সমস্ত নবীরও স্বভাব ছিল ইফতারে দেরী না করা। (তাবারানী কাবীর, মাজমাউজ যাওয়ায়িদ ২য় খণ্ড,. ১০৫ পৃঃ) এ হাদীসগুলো প্রমাণ করে যে, ইফতারের নির্দিষ্ট সময় থেকে দেরী করা মোটেই উচিত নয়। যদি কেউ ইচ্ছা করে ইফতারে দেরী করে তাহলে সে রসূলুলস্নাহ (স.)-এর নির্দেশ অনুযায়ী কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হবে এবং আলস্নাহর নিকট অপ্রিয় হবে। সুতরাং এ ব্যাপারে আমাদের সচেতন হওয়া উচিত।

আব্দুলস্নাহ ইবনে আবী আওফ (রা.) বলেন, একবার আমরা (রমজানে) আলস্নাহর রসূল (স.)-এর সাথে সফরে ছিলাম (তখন তিনি রোজা অবস্থায় ছিলেন)। অতঃপর (সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর) তিনি একজন সাহাবীকে বললেন, নামো এবং আমার জন্য ছাতু গুলে দাও। সাহাবী (সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর) লালিমা দেখে বলল, হে আলস্নাহর রসূল (স.) ঐ যে সূর্য (দেখা যায়) তিনি (তাঁর কথায় কান না দিয়ে) আবার বললেন, তুমি নামো এবং আমার জন্য ছাতু গুলো। এভাবে তিনবার বললেন। অতঃপর তিনি (বেলাল রা.) নামলেন এবং রসূলুলস্নাহ (স.)-এর জন্য ছাতু গুললেন। তিনি তা পান করলেন। তারপর তিনি পূর্বদিকে ইশারা করে বললেন, যখন তোমরা দেখবে যে, রাত ঐ দিক থেকে আসছে তখন বুঝবে সিয়াম পালনকরীর ইফতারের সময় হয়ে গেছে। (বুখারী ২৬০ পৃঃ মুসলিম ১ম খণ্ড ৩৫১ পৃঃ)

নবী (সঃ) মাগরিবের সালাত কখন পড়তেন সে সম্পর্কে রাফে ইবনে খাদীজ (রা.) বলেন, আমরা রসূলুলস্নাহ (স.)-এর সাথে মাগরিবের সালাত পড়তাম। তারপর আমরা কেউ তীর ছুঁড়লে সেই তীর পড়ার জায়গাটা দেখতে পেতাম। (বুখারী, মুসলিম, মেশকাত ৬০ পৃঃ) এ হাদীসটি প্রমাণ করে যে, নবী (স.)-এর মাগরিবের সালাত পড়ার পরও আলো থাকতো। একটু অন্ধকার হোক বলে তিনি মোটেই দেরী করতেন না। আনাস (রা.) বলেন, নবী (স.) মাগরিবের সালাতের আগেই ইফতার করতেন। (তিরমিযী, আবূ দাউদ, মেশকাত ১৭৬ পৃঃ) অন্য বর্ণনায় আছে, তিনি (স.) ইফতার না করা পর্যন্ত মাগরিবের সালাত পড়তেন না। যদিও তার ইফতার এক ঢোক পানি দিয়েও হতো। (সহীহ ইবনে খুযায়মা ৩য় খণ্ড, ২৭৬ পৃঃ) এ হাদীস দুটি প্রমাণ করে যে, মাগরিবের সালাত পড়ার আগে ইফতার করতে হবে। রসূল (স.) বলেন, আমার উম্মত ততক্ষণ আমার সুন্নাত ও নিয়মের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে যতক্ষণ তারা ইফতারের জন্য তারকা উদয়ের অপেক্ষা করবে না। (ইবনে খুযায়মা ৩য় খণ্ড, ২৭৫ পৃঃ)

রসুলুলস্নাহ (স.) বলেনঃ রমজানের প্রত্যেক রাতে আলস্নাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা বহু জাহান্নামীকে মুক্তি দেন (তিরমিযী ১ম খন্ড ৮৬ পৃ, আহমাদ, মেশকাত ১৭৩পৃঃ) । অন্য হাদীস দ্বারা জানা যায় যে, জাহান্নাম থেকে মুক্তি বিশেষ করে ইফতারের সময় হয়। (ইবনে মাজাহ ১২০পৃঃ, মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৪র্থ খণ্ড ১৭৬পৃঃ) রোজাদারের দু'আ সম্পর্কে নবী (স.) বলেনঃ সিয়াম পালনকারীর দু'আ ফেরত দেয়া হয় না। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ৩য় খন্ড, ৭ম পৃঃ) অন্য হাদীসে বলা হয়েছে যে, বিশেষ করে ইফতারের সময় তা রদ হয় না। যেমন তিনি (স.) বলেন, ইফতারের সময়ে দু'আ খুব তাড়াতাড়ি কবুল হয়। (বায়হাকী) উলেস্নখিত হাদীসগুলো আমাদের শিক্ষা দেয় যে, ইফতারের সামগ্রী সাজাতে কিংবা মিসওয়াক করতে অথবা আজেবাজে গল্পগুজবে সময় নষ্ট না করে ইফতারের ১০/১৫ মিনিট আগে ইফতারের খাদ্যদ্রব্য নিয়ে বসা এবং দু'আ তাসবীহ পাঠে রত হওয়া দরকার। এ সময় আলস্নাহ তায়ালা যেহেতু প্রতিদিন অসংখ্য জাহান্নামীকে মুক্তি দেন। সে কারণে প্রার্থনারত রোজাদারগণ জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে যেতে পারেন। হাদীসে খেজুর ও পানি দিয়ে ইফতার শুরু করার কথা বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে ইবনে কাইয়্যেম (রহ.) বলেন, খালি পেট মিষ্টি জিনিস পছন্দ করে এবং এর দ্বারা তা শক্তি সঞ্চয় করে। বিশেষ করে দৃষ্টিশক্তি এর দ্বারা সবল হয়। তাই খেজুর দিয়ে ইফতার শুরু করতে বলা হয়েছে। পানির ব্যাপার হলো রোজা রাখার ফলে পেটের মধ্যে শুষ্কতা সৃষ্টি হয়। পানি দ্বারা তা সতেজ হয়। এজন্য একজন ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত ব্যক্তির উচিত খাওয়া শুরু করার আগে সামান্য পানি পান করা, তারপর খাওয়া শুরু করা। আর তা যদি খেজুর ও পানি দিয়ে হয় তাহলে হূদয়কে সুস্থ করার ব্যাপারে একটা বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে। (যাদুল মা'আদ ১ম খণ্ড, ১৬০পৃঃ)

সাহারী:নবী (স.) বলেন, তোমরা দিনে শুয়ে রাতের সালাতের জন্যে এবং সাহারী খেয়ে দিনে রোজা রাখার জন্যে সাহায্য গ্রহণ কর। (ইবনে মাজা, ১২৩ পৃঃ, ইবনে খুযায়মা, ৩য় খণ্ড, ২১৪ পৃঃ মুসান্নাফ আঃ রাযযাক, ৪র্থ খণ্ড, ২২৯পৃঃ) নবী (স.) এও বলেন- তোমরা সাহারী খাও, যদিও তা এক ঢোক পানি হয়। (মুসান্নাফ আঃ রাযযাক, ৪র্থ খণ্ড, ২২৮ পৃঃ ইবনে আবী শায়বা ৩য় খণ্ড. ৮ম পৃঃ) অথবা একটা খেজুর হয় কিংবা কিসমিসের দানা হয়। (তাবারানী, আওনুল বারী ৪র্থ খণ্ড, ৩২১পৃঃ) কারণ, যারা সাহারী খায় তাদের ওপর আলস্নাহর রহমত বর্ষিত হয় এবং ফেরেশতারা তাদের জন্য মাগফিরাত কামনা করে। (আহমাদ, নায়লুল আওতার ৪র্থ খণ্ড, ১০৫ পৃঃ, ইবনে হিব্বান, তালখীসুল হাবীর ১৯৩ পৃঃ) রসুল (স.) তার সাহাবীদের বললেন, তোমরা এটাকে মোটেই ছেড়ো না । (মুসনাদে আহমাদ, নাসাঈ ১ম খণ্ড, ২৩৫)

সামুরাহ ইবনে জুনদুব (রা.) বলেন, রসুলুলস্নাহ (স.) বলেছেন ঃ বেলালের আজান তোমাদেরকে সাহারী খেতে কখনই যেন বাধা না দেয় (মুসলিম, তিরমিযী, মেশকাত, ৬৬ পৃঃ) ইবনে ওমর (রা.)-এর বর্ণনায় নবী (স.) বলেন ঃ বেলাল রাতে (সাহারী খাবার) আজান দেয়। তাই তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত খাও এবং পান কর যতক্ষণ ইবনে উম্মে মাখতুমের (ফজরের) আজান শুনতে না পাও। (বুখারী, মুসলিম, মেশকাত ৬৬ পৃষ্ঠা, নাসাঈ ১ম খণ্ড, ৭৫পৃঃ)

যায়েদ ইবনে সাবিত (রা.) বলেন, আমরা রসুলুলস্নাহ (স.)-এর সাথে সাহারী খেতাম, তারপরে সালাতে দাঁড়াতাম। কেউ যায়েদকে জিজ্ঞেস করলেন, সাহারী ও ফজরের নামাজের মধ্যে কত সময়ের পার্থক্য থাকতো? তিনি বলেন, ৫০টি আয়াত পড়ার সময় পরিমাণ। (বুখারী ২৫৭ পৃঃ, মুসলিম ১ম খণ্ড ৩৫০ পৃঃ, ইবনে মাজাহ ১২৩পৃঃ) সাধারণতঃ ৫০টি মধ্যম শ্রেণীর আয়াত পড়তে ১৫/২০ মিনিট সময় লাগে। তাই প্রতীয়মান হয় যে, আলস্নাহর রসুল (স.) ও সাহাবায়ে কেরাম ফজরের নামাজের মাত্র ১৫/২০ মিনিট আগে সাহারী খাওয়া শেষ করতেন। অতএব আমাদেরও উচিত রসুলুলস্নাহ (স.)-এর সুন্নত পালনার্থে ফজরের সালাতের ১৫/২০ মিনিট আগে সাহারী খাওয়া শেষ করা। দেরী করে সাহারী খাওয়ার ব্যাপারে নবী (স.) বলেন ঃ নবুওতের ৭০ ভাগের এক ভাগ হলো দেরীতে সাহারী খাওয়া এবং ইফতারে জলদি করা। ইফতারের নির্দিষ্ট সময় হলে ইচ্ছা করে বিলম্ব না করা। (মুসান্নাফ আঃ রাযযাক, ৪র্থ খন্ড, ২৩২ পৃঃ) সমস্ত নবীদেরই আদর্শ ছিল ইফতারে তাড়াতাড়ি এবং সাহারীতে দেরী করা। (মুসান্নাফ আঃ রাযযাক, ৪র্থ খণ্ড, ২৩২ পৃঃ ইবনে আবী শায়বা, ৩য় খণ্ড, ১৩ পৃঃ নাসবুর রা-য়াহ ২য় খণ্ড, ৪৭০ পৃঃ)

এজন্যই নবী (স.) সাহারীর খাবারকে বরকতময় প্রভাতী খাবার নামে অভিহিত করেছেন। (আবু দাউদ, নাসাঈ, মেশকাত, ১৭৬ পৃঃ ইবনে খুযাইমা ৩য় খণ্ড, ২১৪পৃঃ ইবনে আবী শায়বা, ৩য় খণ্ড ৯পৃঃ)

গ্রন্থনা
মাওলানা জাকির হোসাইন আজাদী

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Relaeted Other Islamic Blog

Other Blog-site: