Main Slogan:

হে ইমানদারগণ! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ কর (সূরা বাকারা : ২০৮)

শুক্রবার, ৮ অক্টোবর, ২০১০

হ জে যা বে ন : জেনে নিন জরুরি নিয়ম কানুন

-মাওলানা মোঃ আবুল হোসেন পাটওয়ারী


হজ ইসলামের ৫টি স্তম্ভের একটি গুরুত্বপূর্ণ অপরিহার্য রোকন। এটি একটি ফরজ ইবাদত। পৃথিবীর প্রাচীনতম ইবাদতের স্থান এবং বিশ্ব মুসলিমের মহা মিলন কেন্দ্রস্থল পবিত্র কা’বা শরীফ। হজ ও পবিত্র কাবা শরীফ বিশ্ব মুসলিমের ঐক্যের প্রতীক। হজ শারীরিক, মানসিক ও আর্থিক ইবাদত এবং ত্যাগের সমন্বয়।হজ আরবি শব্দ, অর্থ ইচ্ছা করা, সংকল্প করা, নিয়ত করা ইত্যাদি। কোনো সম্মানিত স্থানে গমনের ইচ্ছা করা। পরিভাষায় আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট সময়ে, নির্ধারিত স্থানে নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম-কানুনসহ বিশেষ অনুষ্ঠান পালন বা উদযাপন করাকে হজ বলে।
শারীরিক ও মানসিক দিক দিয়ে সুস্থ, প্রাপ্তবয়স্ক ও সামর্থ্যবান মুসলমানের ওপর হজ করা ফরজ। জীবনে একবার হজ করা ফরজ। আল্লাহ বলেন, ‘মানুষের মধ্যে যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে সে ঘরের হজ করা তার অবশ্য কর্তব্য।’ সুরা ইমরান। রাসুল (সা.) বলেন, হে মানব সকল! মহান আল্লাহ তোমাদের ওপর হজ ফরজ করে দিয়েছেন। সুতরাং তোমরা হজ পালন কর। মুসলিম শরীফ। রাসুল (সা.) আরও ইরশাদ করেন, ‘যাকে আল্লাহ হজ করার সামর্থ্য দিয়েছেন, সে যদি হজ না করে মারা যায়, তবে সে জাহান্নামের অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষিপ্ত হবে।’ মিশকাত শরীফ।
হজের ফরজ কাজ ৩টি। ১. ইহরাম বাঁধা বা নিয়ত করা। হজের নিয়ত করাকে ইহরাম বলে। ইহরাম অর্থ হারাম করে নেয়া। ইহরাম অবস্থায় নিম্নবর্ণিত কাজগুলো নিষিদ্ধ। যেমন—ক) অশ্লীল কথা, কর্ম, ঝগড়া বিবাদ ইত্যাদি করা। খ) কোনো পশু-পাখি শিকার করা বা শিকার দেখিয়ে দেয়া। তবে মাছ শিকার করা নিষেধ নয়। গ) উঁকুন বা পোকা মাকড় মারা ঘ) সুগন্ধি দ্রব্য ব্যবহার করা ঙ) নখ-চুল ইত্যাদি কাটা চ) সেলাই করা জামা-কাপড় পরিধান করা ছ) মাথা মুখ আবৃত করা।
২. আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা। হজের দ্বিতীয় ফরজ হলো ৯ জিলহজ তারিখে আরাফাত ময়দানে অবস্থান করা। এখানে ৯ তারিখ সূর্য উদয়ের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করতে হয়। এখানে জোহর ও আসরের নামাজ একত্রে পড়তে হয়।
৩. তাওয়াফে জিয়ারত করা। জিলহজ মাসের ১০ থেকে ১২ তারিখের মধ্যে কাবা ঘরের তাওয়াফ বা প্রদক্ষিণ করাকে তাওয়াফে জিয়ারত বলে।
হজের ওয়াজিব কাজ ৭টি। ১. মুযদালিফায় রাত যাপন করা। ৯ জিলহজ সূর্য অস্তের পর আরাফার মাঠ থেকে প্রত্যাবর্তন করে মুযদালিয়ায় রাত যাপন করতে হয়। এখানে মাগরিব ও এশার নামাজ একত্রে পড়তে হয়। জাবালে কুবাহ পাহাড়ের পাদদেশে ইবাদতের মাধ্যমে রাত অতিবাহিত করে ফজরের নামাজ পড়ে সূর্য উদয় হওয়ার আগে মিনার দিকে রওনা দিতে হয়। ২. সাঈ করা, সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে আরোহণ বা দৌড়ানোকে সাঈ বলে। ৩. কঙ্কর নিক্ষেপ করা। ১০ থেকে ১২ তারিখ মিনায় তিনটি জামরাতে ৪৯টি পাথর নিক্ষেপ করতে হয়। পাথর নিক্ষেপের সময় বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবর বলবে। ৪. কোরবানি করা। ১০ থেকে ১২ তারিখের মধ্যে কোরবানি করা। ৫. মাথার চুল কাটা বা কামানো। মহিলা হাজীদের চুলের অগ্রভাগের কিছু অংশ কাটতে হয়। কোরবানির পর ইহরাম থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য মাথা কামাতে হয়। ৬. মক্কার বাইরের হাজীদের জন্য বিদায়ী তাওয়াফ করা। ৭. দম দেয়া। ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় হজের কোনো ওয়াজিব বাদ পড়লে তার কাফফারাস্বরূপ অতিরিক্ত একটি কোরবানি দিতে হয়। এ ধরনের কোরবানিকেই দম বলে।
হজের সুন্নাত কাজ ৯টি ১. তাওয়াফে কুদুম। মক্কা শরীফ পৌঁছার পর সর্বপ্রথম যে তাওয়াফ করা হয় তাকেই তাওয়াফে কুদুম বলে। ২. রমল : তাওয়াফের মধ্যে উভয় বাহু সঞ্চালন করে বীর সৈনিকের মতো হাঁটাকে রমল বলে। ৩. খুতবা ৭ জিলহজ মক্কা শরীফে, ৯ জিলহজ আরাফাতের ময়দানে, ১১ জিলহজ মিনা ময়দানে বাদশাহর খুতবা শোনা ৪. ৮ জিলহজ মিনার ময়দানে জোহর থেকে পরদিন ফজর পর্যন্ত অবস্থান করা ৫. ৯ জিলহজ সূর্যোদয়ের পর মিনা থেকে আরাফাতের দিকে রওনা হওয়া ৬. আরাফাতে অবস্থানের জন্য গোসল করা, ৭. ৯ জিলহজ সূর্যাস্তের পর ইমামের অনুবর্তী হয়ে মুযদালিফার দিকে রওনা হওয়া ৮. ১২ জিলহজ পর্যন্ত মিনার ময়দানে রাত যাপন করা ৯. মিনা থেকে মক্কা শরীফ প্রত্যাবর্তনকালে মুহাসসার নামক স্থানে কিছু সময় অবস্থান করা।
হজের নিয়ত করা বা ইহরাম বাঁধার পর অধিক পরিমাণ তালবিয়া পাঠ করতে হয়। ইহরাম বাঁধার পূর্বশর্ত তালবিয়া পাঠ। সেই তালবিয়া হলো লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক। লাব্বাইকা লা-শারিকালাকা লাব্বাইক। ইন্নাল হামদা ওয়াননিয়মাতা লাকা ওয়াল মূলক; লা শারিকা লাক। অর্থঃ হে আল্লাহ আমি হাজির তোমার দরবারে। হে খোদা তোমার দুয়ারে আমি হাজির। তোমার কোনো শরিক নেই। তোমার দরবারে উপস্থিত হয়েছি। সর্বপ্রকার প্রশংসা ও নেয়ামত সামগ্রী সব কিছুই তোমার। সর্ব যুগে ও সর্বত্র তোমারই রাজত্ব তোমার কোনো শরিক নেই।
হজের নিয়ত : আল্লাহুম্মা উরিদাল হাজ্জা ওয়াল ওমরাতা ওয়াজিয়ারাতা অথবা আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা হাজ্জান।
রাসুল (সা.) বলেন, মাকবুল হাজের বিনিময় একমাত্র জান্নাত। বোখারি মুসলিম শরীফ। মহান আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে মকবুল হজ নসিব করুন।
লেখক : শিক্ষক, ভাষাপ্রদীপ উচ্চ বিদ্যালয় পোস্তগোলা, ঢাকা

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Relaeted Other Islamic Blog

Other Blog-site: