স্টাফ রিপোর্টার
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের (ইফা) ইমাম প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে মার্কিন তরুণ-তরুণীদের অশ্লীল নৃত্য পরিবেশন নিয়ে ধর্মপ্রাণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের দেশের সর্ববৃহত্ সরকারি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অনুষ্ঠানে অশ্লীল নৃত্য আয়োজনের মাধ্যমে কর্তৃপক্ষ এ দেশের মানুষের ইমান-আকিদার বিরুদ্ধে চরম ধৃষ্টতা প্রদর্শন করেছে বলে মন্তব্য করেছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেমসহ বিভিন্ন মহল। এ অপরাধের জন্য তারা আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি সামীম মোহাম্মদ আফজালকে বহিষ্কার এবং শাস্তির দাবি জানান। অন্যথায় দেশের আলেম-ওলামা সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তুলবে বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন তারা।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত ফাউন্ডেশনের ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমিতে শনিবার সকালে এ নৃত্যানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে ইসলামী ভাবধারা ও মূল্যবোধবিরোধী অশ্লীল নাচ প্রদর্শনের অভিযোগে ফাউন্ডেশন পরিচালনা বোর্ডের চারজন গভর্নর তাত্ক্ষণিকভাবে অনুষ্ঠান বর্জন করেন। ক্ষোভে ফেটে পড়েন উপস্থিত দর্শক ও ইমামরা। প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরলে এ বিষয়ে নালিশ দেয়ার ঘোষণা দেন ক্ষুব্ধ গভর্নররা। তারা বলেন, এর আগেও কাঙ্গালিনী সুফিয়ার গানের আয়োজন করে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইমেজ ক্ষুণ্ন করা হয়েছে। তবে ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজাল এ অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বিদেশি ছেলেমেয়েরা তাদের দেশের কালচার অনুযায়ী নাচগান করেছে, অঙ্গভঙ্গি করেছে। তাতে দোষের কিছু হয়েছে বলে আমি মনে করি না।
ফাউন্ডেশনের এক কর্মকর্তা জানান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩০ শিক্ষার্থী ইসলাম সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করার জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশন পরিদর্শনে আসেন। তাদের সম্মানে ইসলামী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা হামদ-নাত পরিবেশন শেষে তা ইংরেজিতে ব্যাখ্যা করে তাদের শোনানো হয়। একপর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষার্থীদের কাছে তাদের প্রার্থনা সঙ্গীত শোনার আবদার করেন দর্শকরা। কিন্তু ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজাল প্রার্থনা সঙ্গীতের পরিবর্তে তাদের ডিস্কো ড্যান্স করার কথা বলেন। যুক্তরাষ্ট্রের ছেলেমেয়েরা তত্ক্ষণাত্ শর্ট পোশাকে তাদের দেশীয় স্টাইলে নাচ ও গান শুরু করে। ঘটনার আকস্মিকতায় ফাউন্ডেশন পরিচালনা বোর্ডের গভর্নর ও বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মেসবাহুর রহমান চৌধুরী, সাবেক সচিব আজিজুর রহমান, সিরাজুল ইসলাম, গোলাম মাওলা নকশবন্দিসহ উপস্থিত ইমামরা বিব্রতবোধ করেন। আলেমদের দু’একজন প্রতিবাদও করেন। কিন্তু তাতে কাজ না হওয়ায় তারা দ্রুত অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন।
ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান গতকাল আমার দেশকে বলেন, ঘটনার সময় আমি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলাম। জোহরের নামাজের আজান পড়ে গেছে এমন মুহূর্তে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজাল নিজেই উত্সাহ দিয়ে বিদেশিদের দিয়ে অশ্লীল ব্যালে ড্যান্সের আয়োজন করেন। কেউ কেউ এর প্রতিবাদও করেন। আমিসহ কয়েকজন এর প্রতিবাদ করে সেখান থেকে চলে আসি। তিনি বলেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন শুরু থেকেই ইসলাম প্রচার ও প্রসারে কাজ করে আসছে। সেই প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক বিদেশি নারী-পুরুষদের দিয়ে মসজিদের ইমামদের সামনে এমন অনৈসলামিক কাজ করালেন এতে আমরা মর্মাহত হয়েছি। সরকার ও ইসলামের ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ন করতে এটা করা হয়েছে অভিযোগ করে মেসবাহুর রহমান ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজির অপসারণ দাবি করেন। তবে ফাউন্ডেশনের ইমাম প্রশিক্ষণ পরিচালক তাহের হোসেন গতকাল এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। এ ব্যাপারে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব অধ্যাপক মাওলানা সালাহউদ্দিন ইমাম প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে বিদেশি তরুণ-তরুণীদের অশ্লীল নৃত্য প্রসঙ্গে বলেন, যেহেতু আমি ওই অনুষ্ঠানে ছিলাম না, তাই কোনো মন্তব্য করতে পারছি না। অনুষ্ঠানে থাকলে এ বিষয়ে বলতে পারতাম।
ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মুফতি ফজলুল হক আমিনী অশ্লীল নৃত্য আয়োজনের জন্য আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজিকে বরখাস্ত করার দাবি জানিয়ে বলেন, কবর পূজারি ও ইসলামের দুশমনকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি পদে বসিয়ে এ সরকার প্রমাণ করেছে তারা ইসলামবিদ্বেষী। তিনি বলেন, আমেরিকার নৃত্যদলের তরুণ-তরুণীদের তো ইমান নেই। তাদের দিয়ে ফাউন্ডেশনের অনুষ্ঠান করার মাধ্যমে এ দেশের মুসলমানদের প্রতি চরম ধৃষ্টতা প্রদর্শন করা হয়েছে। এ অপরাধের জন্য অবিলম্বে ফাউন্ডেশনের ডিজিকে বহিষ্কার না করা হলে দেশের আলেম-ওলামা এমন আন্দোলন গড়ে তুলবে, যা সরকার ঠেকাতে পারবে না।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রশিক্ষণরত ইমামদের সামনে অর্ধউলঙ্গ যুবক-যুবতীকে অশ্লীল নৃত্য পরিবেশনের আদেশ করায় ফাউন্ডেশনের ডিজি সামীম মোহাম্মদ আফজালের অপসারণ দাবি করেছে সম্মিলিত ওলামা-মাশায়েখ পরিষদ। এক যুক্ত বিবৃতিতে পরিষদের সভাপতি ও মাসিক মদীনা সম্পাদক মাওলানা মুহিউদ্দীন খান, খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা আহমদুল্লাহ আশরাফ, খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক, আন্তর্জাতিক তাহাফফুজে খতমে নবুওয়ত বাংলাদেশের সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা নুরুল ইসলাম, নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী, ফরায়েজী আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা আবদুল্লাহ মো. হাসান, মাদ্রাসা শিক্ষক পরিষদের সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা যাইনুল আবেদীন, শর্ষিনার ছোট পীর মাওলানা শাহ আরিফ বিল্লাহ সিদ্দিকী, আইম্মাহ পরিষদের সভাপতি মাওলানা মহিউদ্দীন রব্বানী, সম্মিলিত ওলামা মাশায়েখ পরিষদের জয়েন্ট সেক্রেটারি ড. মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান মাদানী, শায়খুল হাদিস মাওলানা মুহাম্মদ ছালেহ আহমাদ, ফুরফুরা দরবার শরীফের অন্যতম খলিফা মুফতি সাঈদ আহমদ মুজাদ্দেদী, ইসলামিক পার্টির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবদুল মোবিন, ন্যাপ ভাসানীর চেয়ারম্যান মমতাজ চৌধুরী, ভাসানী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান শেখ আনোয়ারুল হক, এনডিপি চেয়ারম্যান খন্দকার গোলাম মোর্তজা, আগ্রাসন প্রতিরোধ জাতীয় কমিটির মহাসচিব আলমগীর মজুমদার, মাওলানা মুফাজ্জাল হোসাইন খান, অধ্যাপক মাওলানা আ ন ম রফীকুর রহমান, খতিব মাওলানা মাহবুবুর রহমান, মাওলানা এনামূল হক মুসা, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, ড. ইয়াহয়ার রহমান, হাফেজ মুফতি মাওলানা আবদুর রহমান, মুফতি মাওলানা নূর হুসাইন আল কাশেমী, মাওলানা আবদুর রহমান চৌধুরী, মাওলানা আইনুল ইসলাম, প্রফেসর ড. মাওলানা আবদুস সালাম মাদানী, মাওলানা নাজমুস সালেহীন, ড. মাওলানা এটিএম তাহের, অধ্যক্ষ মাওলানা জালাল উদ্দীন আনোয়ারী, হাফেজ মাওলানা মোবারক করিম প্রমুখ স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। এ দেশের মুসলমানরা ইসলামকে প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসেন। ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে এ দেশে কেউ ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেনি। এখনও যদি ইসলামকে নিয়ে এ দেশে কেউ তামাশা করে তাহলে তাকে তসলিমা নাসরিন ও দাউদ হায়দারের মতো পরিণতি ভোগ করতে হবে। তারা বলেন, বর্তমান সরকারকে বেকায়দায় ফেলানোর জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি ইসলামকে নিয়ে সেই ধরনের একটি তামাশায় লিপ্ত হয়েছে বলে এ দেশের বুদ্ধিজীবীরা মনে করেন। শুক্রবার ইমাম প্রশিক্ষণের নামে ইমামদের সামনে মার্কিন তরুণ-তরুণীদের উলঙ্গ নাচিয়ে এ দেশের আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ ও মুসলমানদের ইমান-আকিদার ওপর চরমভাবে আঘাত হেনেছে। সম্মিলিত ওলামা-মাশায়েখ পরিষদের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং অনতিবিলম্বে ফাউন্ডেশনের ডিজিকে অপসারণ করার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছে। নতুবা দেশের সব আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ যে কোনো পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবেন—যার জন্য সরকারকেই দায়দায়িত্ব বহন করতে হবে। একই ধরনের দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন জাতীয় ফতোয়া বোর্ডের আলেমরা।
ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশের চেয়ারম্যান মুফতি ইজহারুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, ঘটনাটি শুনে আমি হতবাক ও বিস্মিত হয়েছি। বাংলাদেশের মতো একটি মুসলিম দেশে এ ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি ঘটাতে পারেন তা ভাবতেও অবাক লাগে। সামীম আফজালের অপসারণ ও শাস্তি দাবি করে মুফতি ইজহার বলেন, সরকার যদি তাকে গ্রেফতার করে শাস্তি দিতে ব্যর্থ হয় তাহলে দেশের মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার দায়দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে।
জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান বলেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনে অশ্লীল ব্যালে নৃত্য পরিবেশনের ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন। পত্রিকায় প্রকাশ, ফাউন্ডেশনের ডিজির নির্দেশে এই অশ্লীল নৃত্য পরিবেশন করা হয়েছে। এটা এখন স্পষ্ট যে, এ দেশকে করদরাজ্যে পরিণত করতে আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও ধর্মীয় মূল্যবোধকে মিটিয়ে দেয়ার প্রকাশ্য তত্পরতা শুরু হয়েছে। তিনি অধিকার ও স্বাতন্ত্র্য রক্ষায় দেশের মুসলমান ও জাতীয়তাবাদী ধর্মীয় নেতাদের ঘুরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ আইম্মাহ পরিষদের মহাসচিব আল্লামা আবু ইউসুফ খান আল মাদানী বলেছেন, ইমাম প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে দেশের আলেমে দ্বীন ও শ্রদ্ধাভাজন ইমাম ও খতিবদের সামনে মহাপরিচালক সামীম আফজাল মার্কিন তরুণ-তরুণীদের দিয়ে যে অশ্লীল নৃত্য পরিবেশন করেছেন তাতে দেশের সর্বস্তরের মানুষ ব্যথিত। এ ঘটনা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক ও নিন্দনীয়। তিনি বলেন, আমরা আশা করি সরকার অবিলম্বে দেশের মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অপরাধে ইহুদি-খ্রিস্টানদের দালাল সামীম আফজালের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি অবশ্যই নিশ্চিত করবে। সরকার অবিলম্বে ফাউন্ডেশনের ডিজিকে গ্রেফতার করে শাস্তি প্রদানে ব্যর্থ হলে দেশের ১৪ কোটি মুসলমান ইমানের তাগিদে সরকারের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে।
ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুছ আহমদ বলেন, ইমাম প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে মার্কিন নৃত্য পরিবেশন করে ইসলামের সঙ্গে চরম তামাশায় লিপ্ত হয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। এর মাধ্যমে ফাউন্ডেশনের ডিজি ও ধর্ম প্রতিমন্ত্রী যে অমার্জনীয় অপরাধ করেছেন তার জন্য তাদের অবিলম্বে অপসারণ করতে হবে। মার্কিন অর্ধনগ্ন শিল্পীদের দিয়ে নৃত্য পরিবেশনের মাধ্যমে ফাউন্ডেশনের ডিজি ইসলাম বিদ্বেষীদের ক্রীড়নকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা জাফরুল্লাহ খান বলেন, ইমাম প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে মার্কিন তরুণীদের নৃত্য প্রদর্শনীর মাধ্যমে আবারও প্রমাণ হয়েছে, সামীম মোহাম্মদ আফজাল ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি হওয়ার কোনো যোগ্যতাই রাখেন না। একটি মুসলমান দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যে কাজ তিনি করেছেন তার নিন্দা জানানোর ভাষা নেই। অবিলম্বে এই ডিজি এবং ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত। মুসলমান দেশে থাকার যোগ্যতা তাদের নেই। সরকারের ভেবে দেখা উচিত, বিদেশি প্রভুদের খুশি করতে এ ধরনের ন্যক্কারজনক কাজের পরিণতি কত ভয়াবহ হবে। এ দেশে কোনো ভণ্ডামি চলবে না।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মতো জাতীয় প্রতিষ্ঠানের ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমির হলরুমে মার্কিন তরুণীদের অশ্লীল নৃত্য পরিবেশনের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ ওলামা-মাশায়েখ সংহতি পরিষদ। সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা মুফতি আবদুল কাইয়ুম খান, মুফতি কেফায়েতুল্লাহ, মাওলানা হোসাইন আহমদ, মাওলানা আবদুর রহিম এক বিবৃতিতে ফাউন্ডেশনের ডিজিকে উন্মাদ আখ্যায়িত করে অবিলম্বে তার অপসারণ দাবি করেন। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতকারীদের শাস্তি দিতে ব্যর্থ হলে পরবর্তী পরিস্থিতি সামাল দেয়া সরকারের পক্ষে সম্ভব হবে না বলে মন্তব্য করেন তারা।
অনতিবিলম্বে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বেহায়া ও অজ্ঞ ডিজিকে অপসারণের জোর দাবি জানিয়েছেন দেশের ১০০১ জন শীর্ষ আলেমে দ্বীন। গতকাল এক যুক্ত বিবৃতিতে তারা এই দাবি জানান। বিবৃতিদাতারা হলেন—মুফতি মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী, হাফেজ মুফতি মাওলানা আবদুর রহমান, মাওলানা শাহ জালাল শরীফ, মাওলানা মুফতি ফয়জুল্লাহ, মুফতি মাওলানা মুহাম্মদ শফিকুল্লাহ, শায়খুল হাদিস মাওলানা আবু নোমান মুহাম্মদ রফীকুর রহমান, শায়খুল হাদিস মাওলানা মুহাম্মদ ছালেহ আহমাদ, শায়খুল হাদিস মাওলানা আবু নোমান মুহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, মাওলানা মুহাম্মদ শফীকুর রহমান, মুফতি মাওলানা মুহাম্মদ মিজানুর রহমান, মোফাসসের মাওলানা মুহাম্মদ জাকির হোসাইন শেখ, মাওলানা মুহাম্মদ আবুল কাসেম গাজী, শায়খুল হাদিস মাওলানা আবুল বারাকাত মুহাম্মদ ইউসুফ, মাওলানা মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান, মাওলানা মুহাম্মদ আবদুস সামাদ, মাওলানা মুহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিক, মাওলানা মুহাম্মদ রেজানুল ইসলাম, মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল জাব্বার, মাওলানা মুহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান, মাওলানা মুহাম্মদ যাকির হোসাইন, মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল মান্নান মিঞা, মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল ওয়াজেদ পাটোয়ারী, মাওলানা মুহাম্মদ আলাউদ্দীন, মাওলানা মুহাম্মদ ফসিহুর রহমান, মাওলানা মুহাম্মদ বশীর আহমাদ, মাওলানা মুহাম্মদ যাকারিয়া প্রমুখ।
ইসলামী ছাত্র মোর্চার কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আবদুল আজিজ বলেন, ইসলাম ও মুসলমানদের দুশমন ইসলামী ফাউন্ডেশনের ডিজি সামীম মোহাম্মদ আফজালকে বহিষ্কার করে গ্রেফতার করতে হবে। মুসলমানদের এ দেশে মুসলমানদের অভিভাবক ইমামদের নিয়ে ন্যক্কারজনক এ ঘটনার মূল হোতা ডিজিকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সরকারের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান তিনি। গতকাল ইসলামী ছাত্র মোর্চা ঢাকা মহানগর দক্ষিণের উদ্যোগে এক আলোচনা সভায় তিনি আহ্বান জানান।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত ফাউন্ডেশনের ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমিতে শনিবার সকালে এ নৃত্যানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে ইসলামী ভাবধারা ও মূল্যবোধবিরোধী অশ্লীল নাচ প্রদর্শনের অভিযোগে ফাউন্ডেশন পরিচালনা বোর্ডের চারজন গভর্নর তাত্ক্ষণিকভাবে অনুষ্ঠান বর্জন করেন। ক্ষোভে ফেটে পড়েন উপস্থিত দর্শক ও ইমামরা। প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরলে এ বিষয়ে নালিশ দেয়ার ঘোষণা দেন ক্ষুব্ধ গভর্নররা। তারা বলেন, এর আগেও কাঙ্গালিনী সুফিয়ার গানের আয়োজন করে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইমেজ ক্ষুণ্ন করা হয়েছে। তবে ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজাল এ অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বিদেশি ছেলেমেয়েরা তাদের দেশের কালচার অনুযায়ী নাচগান করেছে, অঙ্গভঙ্গি করেছে। তাতে দোষের কিছু হয়েছে বলে আমি মনে করি না।
ফাউন্ডেশনের এক কর্মকর্তা জানান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩০ শিক্ষার্থী ইসলাম সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করার জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশন পরিদর্শনে আসেন। তাদের সম্মানে ইসলামী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা হামদ-নাত পরিবেশন শেষে তা ইংরেজিতে ব্যাখ্যা করে তাদের শোনানো হয়। একপর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষার্থীদের কাছে তাদের প্রার্থনা সঙ্গীত শোনার আবদার করেন দর্শকরা। কিন্তু ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজাল প্রার্থনা সঙ্গীতের পরিবর্তে তাদের ডিস্কো ড্যান্স করার কথা বলেন। যুক্তরাষ্ট্রের ছেলেমেয়েরা তত্ক্ষণাত্ শর্ট পোশাকে তাদের দেশীয় স্টাইলে নাচ ও গান শুরু করে। ঘটনার আকস্মিকতায় ফাউন্ডেশন পরিচালনা বোর্ডের গভর্নর ও বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মেসবাহুর রহমান চৌধুরী, সাবেক সচিব আজিজুর রহমান, সিরাজুল ইসলাম, গোলাম মাওলা নকশবন্দিসহ উপস্থিত ইমামরা বিব্রতবোধ করেন। আলেমদের দু’একজন প্রতিবাদও করেন। কিন্তু তাতে কাজ না হওয়ায় তারা দ্রুত অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন।
ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান গতকাল আমার দেশকে বলেন, ঘটনার সময় আমি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলাম। জোহরের নামাজের আজান পড়ে গেছে এমন মুহূর্তে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজাল নিজেই উত্সাহ দিয়ে বিদেশিদের দিয়ে অশ্লীল ব্যালে ড্যান্সের আয়োজন করেন। কেউ কেউ এর প্রতিবাদও করেন। আমিসহ কয়েকজন এর প্রতিবাদ করে সেখান থেকে চলে আসি। তিনি বলেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন শুরু থেকেই ইসলাম প্রচার ও প্রসারে কাজ করে আসছে। সেই প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক বিদেশি নারী-পুরুষদের দিয়ে মসজিদের ইমামদের সামনে এমন অনৈসলামিক কাজ করালেন এতে আমরা মর্মাহত হয়েছি। সরকার ও ইসলামের ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ন করতে এটা করা হয়েছে অভিযোগ করে মেসবাহুর রহমান ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজির অপসারণ দাবি করেন। তবে ফাউন্ডেশনের ইমাম প্রশিক্ষণ পরিচালক তাহের হোসেন গতকাল এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। এ ব্যাপারে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব অধ্যাপক মাওলানা সালাহউদ্দিন ইমাম প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে বিদেশি তরুণ-তরুণীদের অশ্লীল নৃত্য প্রসঙ্গে বলেন, যেহেতু আমি ওই অনুষ্ঠানে ছিলাম না, তাই কোনো মন্তব্য করতে পারছি না। অনুষ্ঠানে থাকলে এ বিষয়ে বলতে পারতাম।
ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মুফতি ফজলুল হক আমিনী অশ্লীল নৃত্য আয়োজনের জন্য আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজিকে বরখাস্ত করার দাবি জানিয়ে বলেন, কবর পূজারি ও ইসলামের দুশমনকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি পদে বসিয়ে এ সরকার প্রমাণ করেছে তারা ইসলামবিদ্বেষী। তিনি বলেন, আমেরিকার নৃত্যদলের তরুণ-তরুণীদের তো ইমান নেই। তাদের দিয়ে ফাউন্ডেশনের অনুষ্ঠান করার মাধ্যমে এ দেশের মুসলমানদের প্রতি চরম ধৃষ্টতা প্রদর্শন করা হয়েছে। এ অপরাধের জন্য অবিলম্বে ফাউন্ডেশনের ডিজিকে বহিষ্কার না করা হলে দেশের আলেম-ওলামা এমন আন্দোলন গড়ে তুলবে, যা সরকার ঠেকাতে পারবে না।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রশিক্ষণরত ইমামদের সামনে অর্ধউলঙ্গ যুবক-যুবতীকে অশ্লীল নৃত্য পরিবেশনের আদেশ করায় ফাউন্ডেশনের ডিজি সামীম মোহাম্মদ আফজালের অপসারণ দাবি করেছে সম্মিলিত ওলামা-মাশায়েখ পরিষদ। এক যুক্ত বিবৃতিতে পরিষদের সভাপতি ও মাসিক মদীনা সম্পাদক মাওলানা মুহিউদ্দীন খান, খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা আহমদুল্লাহ আশরাফ, খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক, আন্তর্জাতিক তাহাফফুজে খতমে নবুওয়ত বাংলাদেশের সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা নুরুল ইসলাম, নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী, ফরায়েজী আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা আবদুল্লাহ মো. হাসান, মাদ্রাসা শিক্ষক পরিষদের সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা যাইনুল আবেদীন, শর্ষিনার ছোট পীর মাওলানা শাহ আরিফ বিল্লাহ সিদ্দিকী, আইম্মাহ পরিষদের সভাপতি মাওলানা মহিউদ্দীন রব্বানী, সম্মিলিত ওলামা মাশায়েখ পরিষদের জয়েন্ট সেক্রেটারি ড. মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান মাদানী, শায়খুল হাদিস মাওলানা মুহাম্মদ ছালেহ আহমাদ, ফুরফুরা দরবার শরীফের অন্যতম খলিফা মুফতি সাঈদ আহমদ মুজাদ্দেদী, ইসলামিক পার্টির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবদুল মোবিন, ন্যাপ ভাসানীর চেয়ারম্যান মমতাজ চৌধুরী, ভাসানী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান শেখ আনোয়ারুল হক, এনডিপি চেয়ারম্যান খন্দকার গোলাম মোর্তজা, আগ্রাসন প্রতিরোধ জাতীয় কমিটির মহাসচিব আলমগীর মজুমদার, মাওলানা মুফাজ্জাল হোসাইন খান, অধ্যাপক মাওলানা আ ন ম রফীকুর রহমান, খতিব মাওলানা মাহবুবুর রহমান, মাওলানা এনামূল হক মুসা, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, ড. ইয়াহয়ার রহমান, হাফেজ মুফতি মাওলানা আবদুর রহমান, মুফতি মাওলানা নূর হুসাইন আল কাশেমী, মাওলানা আবদুর রহমান চৌধুরী, মাওলানা আইনুল ইসলাম, প্রফেসর ড. মাওলানা আবদুস সালাম মাদানী, মাওলানা নাজমুস সালেহীন, ড. মাওলানা এটিএম তাহের, অধ্যক্ষ মাওলানা জালাল উদ্দীন আনোয়ারী, হাফেজ মাওলানা মোবারক করিম প্রমুখ স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। এ দেশের মুসলমানরা ইসলামকে প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসেন। ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে এ দেশে কেউ ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেনি। এখনও যদি ইসলামকে নিয়ে এ দেশে কেউ তামাশা করে তাহলে তাকে তসলিমা নাসরিন ও দাউদ হায়দারের মতো পরিণতি ভোগ করতে হবে। তারা বলেন, বর্তমান সরকারকে বেকায়দায় ফেলানোর জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি ইসলামকে নিয়ে সেই ধরনের একটি তামাশায় লিপ্ত হয়েছে বলে এ দেশের বুদ্ধিজীবীরা মনে করেন। শুক্রবার ইমাম প্রশিক্ষণের নামে ইমামদের সামনে মার্কিন তরুণ-তরুণীদের উলঙ্গ নাচিয়ে এ দেশের আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ ও মুসলমানদের ইমান-আকিদার ওপর চরমভাবে আঘাত হেনেছে। সম্মিলিত ওলামা-মাশায়েখ পরিষদের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং অনতিবিলম্বে ফাউন্ডেশনের ডিজিকে অপসারণ করার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছে। নতুবা দেশের সব আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ যে কোনো পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবেন—যার জন্য সরকারকেই দায়দায়িত্ব বহন করতে হবে। একই ধরনের দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন জাতীয় ফতোয়া বোর্ডের আলেমরা।
ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশের চেয়ারম্যান মুফতি ইজহারুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, ঘটনাটি শুনে আমি হতবাক ও বিস্মিত হয়েছি। বাংলাদেশের মতো একটি মুসলিম দেশে এ ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি ঘটাতে পারেন তা ভাবতেও অবাক লাগে। সামীম আফজালের অপসারণ ও শাস্তি দাবি করে মুফতি ইজহার বলেন, সরকার যদি তাকে গ্রেফতার করে শাস্তি দিতে ব্যর্থ হয় তাহলে দেশের মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার দায়দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে।
জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান বলেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনে অশ্লীল ব্যালে নৃত্য পরিবেশনের ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন। পত্রিকায় প্রকাশ, ফাউন্ডেশনের ডিজির নির্দেশে এই অশ্লীল নৃত্য পরিবেশন করা হয়েছে। এটা এখন স্পষ্ট যে, এ দেশকে করদরাজ্যে পরিণত করতে আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও ধর্মীয় মূল্যবোধকে মিটিয়ে দেয়ার প্রকাশ্য তত্পরতা শুরু হয়েছে। তিনি অধিকার ও স্বাতন্ত্র্য রক্ষায় দেশের মুসলমান ও জাতীয়তাবাদী ধর্মীয় নেতাদের ঘুরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ আইম্মাহ পরিষদের মহাসচিব আল্লামা আবু ইউসুফ খান আল মাদানী বলেছেন, ইমাম প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে দেশের আলেমে দ্বীন ও শ্রদ্ধাভাজন ইমাম ও খতিবদের সামনে মহাপরিচালক সামীম আফজাল মার্কিন তরুণ-তরুণীদের দিয়ে যে অশ্লীল নৃত্য পরিবেশন করেছেন তাতে দেশের সর্বস্তরের মানুষ ব্যথিত। এ ঘটনা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক ও নিন্দনীয়। তিনি বলেন, আমরা আশা করি সরকার অবিলম্বে দেশের মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অপরাধে ইহুদি-খ্রিস্টানদের দালাল সামীম আফজালের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি অবশ্যই নিশ্চিত করবে। সরকার অবিলম্বে ফাউন্ডেশনের ডিজিকে গ্রেফতার করে শাস্তি প্রদানে ব্যর্থ হলে দেশের ১৪ কোটি মুসলমান ইমানের তাগিদে সরকারের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে।
ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুছ আহমদ বলেন, ইমাম প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে মার্কিন নৃত্য পরিবেশন করে ইসলামের সঙ্গে চরম তামাশায় লিপ্ত হয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। এর মাধ্যমে ফাউন্ডেশনের ডিজি ও ধর্ম প্রতিমন্ত্রী যে অমার্জনীয় অপরাধ করেছেন তার জন্য তাদের অবিলম্বে অপসারণ করতে হবে। মার্কিন অর্ধনগ্ন শিল্পীদের দিয়ে নৃত্য পরিবেশনের মাধ্যমে ফাউন্ডেশনের ডিজি ইসলাম বিদ্বেষীদের ক্রীড়নকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা জাফরুল্লাহ খান বলেন, ইমাম প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে মার্কিন তরুণীদের নৃত্য প্রদর্শনীর মাধ্যমে আবারও প্রমাণ হয়েছে, সামীম মোহাম্মদ আফজাল ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি হওয়ার কোনো যোগ্যতাই রাখেন না। একটি মুসলমান দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যে কাজ তিনি করেছেন তার নিন্দা জানানোর ভাষা নেই। অবিলম্বে এই ডিজি এবং ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত। মুসলমান দেশে থাকার যোগ্যতা তাদের নেই। সরকারের ভেবে দেখা উচিত, বিদেশি প্রভুদের খুশি করতে এ ধরনের ন্যক্কারজনক কাজের পরিণতি কত ভয়াবহ হবে। এ দেশে কোনো ভণ্ডামি চলবে না।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মতো জাতীয় প্রতিষ্ঠানের ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমির হলরুমে মার্কিন তরুণীদের অশ্লীল নৃত্য পরিবেশনের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ ওলামা-মাশায়েখ সংহতি পরিষদ। সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা মুফতি আবদুল কাইয়ুম খান, মুফতি কেফায়েতুল্লাহ, মাওলানা হোসাইন আহমদ, মাওলানা আবদুর রহিম এক বিবৃতিতে ফাউন্ডেশনের ডিজিকে উন্মাদ আখ্যায়িত করে অবিলম্বে তার অপসারণ দাবি করেন। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতকারীদের শাস্তি দিতে ব্যর্থ হলে পরবর্তী পরিস্থিতি সামাল দেয়া সরকারের পক্ষে সম্ভব হবে না বলে মন্তব্য করেন তারা।
অনতিবিলম্বে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বেহায়া ও অজ্ঞ ডিজিকে অপসারণের জোর দাবি জানিয়েছেন দেশের ১০০১ জন শীর্ষ আলেমে দ্বীন। গতকাল এক যুক্ত বিবৃতিতে তারা এই দাবি জানান। বিবৃতিদাতারা হলেন—মুফতি মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী, হাফেজ মুফতি মাওলানা আবদুর রহমান, মাওলানা শাহ জালাল শরীফ, মাওলানা মুফতি ফয়জুল্লাহ, মুফতি মাওলানা মুহাম্মদ শফিকুল্লাহ, শায়খুল হাদিস মাওলানা আবু নোমান মুহাম্মদ রফীকুর রহমান, শায়খুল হাদিস মাওলানা মুহাম্মদ ছালেহ আহমাদ, শায়খুল হাদিস মাওলানা আবু নোমান মুহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, মাওলানা মুহাম্মদ শফীকুর রহমান, মুফতি মাওলানা মুহাম্মদ মিজানুর রহমান, মোফাসসের মাওলানা মুহাম্মদ জাকির হোসাইন শেখ, মাওলানা মুহাম্মদ আবুল কাসেম গাজী, শায়খুল হাদিস মাওলানা আবুল বারাকাত মুহাম্মদ ইউসুফ, মাওলানা মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান, মাওলানা মুহাম্মদ আবদুস সামাদ, মাওলানা মুহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিক, মাওলানা মুহাম্মদ রেজানুল ইসলাম, মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল জাব্বার, মাওলানা মুহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান, মাওলানা মুহাম্মদ যাকির হোসাইন, মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল মান্নান মিঞা, মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল ওয়াজেদ পাটোয়ারী, মাওলানা মুহাম্মদ আলাউদ্দীন, মাওলানা মুহাম্মদ ফসিহুর রহমান, মাওলানা মুহাম্মদ বশীর আহমাদ, মাওলানা মুহাম্মদ যাকারিয়া প্রমুখ।
ইসলামী ছাত্র মোর্চার কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আবদুল আজিজ বলেন, ইসলাম ও মুসলমানদের দুশমন ইসলামী ফাউন্ডেশনের ডিজি সামীম মোহাম্মদ আফজালকে বহিষ্কার করে গ্রেফতার করতে হবে। মুসলমানদের এ দেশে মুসলমানদের অভিভাবক ইমামদের নিয়ে ন্যক্কারজনক এ ঘটনার মূল হোতা ডিজিকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সরকারের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান তিনি। গতকাল ইসলামী ছাত্র মোর্চা ঢাকা মহানগর দক্ষিণের উদ্যোগে এক আলোচনা সভায় তিনি আহ্বান জানান।
Source: Daily Amardesh, 29th Nov,2010
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন