Main Slogan:

হে ইমানদারগণ! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ কর (সূরা বাকারা : ২০৮)

বুধবার, ৫ জানুয়ারী, ২০১১

বায়তুশ শরফ আনজুমনে ইত্তেহাদ বাংলাদেশ

বায়তুশ শরফ আনজুমনে ইত্তেহাদ বাংলাদেশ একটি মসজিদ ভিত্তিক, আধ্যাত্মিক, অরাজনৈতিক, মানবকল্যাণমূলক সোসাইটিজ এ্যাক্ট-এ ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে জাতীয় পর্যায়ে নিবন্ধনকৃত সংগঠন। মসজিদ আপাত অর্থে যদিও ইবাদতগাহ, কিন্তু এ কথা মনে রাখতে হবে যে, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর পার্থিব ও নবুয়তের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছেন মদীনার মসজিদে নববী থেকে। এ মসজিদকে কেন্দ্র করেই বিশ্বময় ইসলাম ধর্ম বিকশিত ও প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। মহানবী (সা.)-এর পরে খোলাফায়ে রাশেদীন, সাহাবায়ে রাসূল (সা.), তাবেঈন, তাবে-তাবেঈন, আইম্মায়ে মুজতাহেদীন এবং পরবর্তীতে যুগে যুগে দেশে দেশে হক্কানী-রাব্বানী পীর-আউলিয়া কেরামগণ মানবতার কল্যাণে ইসলামের শান্তিপূর্ণ মিশন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। এই উপমহাদেশেও ইসলামের প্রচার প্রতিষ্ঠায় পীর আউলিয়া ও বুজুর্গানে দ্বীনের অবদান সর্বজন স্বীকৃত ।

কুতুবুল আলম শাহ্‌সূফী হযরত মাওলানা মীর মুহাম্মদ আখতর (রাহ.) আল্লাহ্র বান্দাদের ঈমানী-রূহানী উৎকর্ষ সাধন এবং জাগতিক প্রয়োজনে সাহায্য-সহায়তামূলক কাজ পরিচালনায় একটি নিয়মতান্ত্রিক সংগঠন কায়েমের প্রয়োজন বিশেষভাবে অনুভব করেন। এ উদ্দেশ্যে ১৯৫২ সনের ২রা অক্টোবর আন্‌জুমনে ইত্তেহাদ নামক সুপ্রসিদ্ধ সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। আজকের দেশে-বিদেশে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত শত শত মসজিদ, মাদরাসা, অনেক এতিমখানা, চক্ষু, পঙ্গু ও শিশু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠাসহ নানামুখি ঈমানী রূহানী মাহফিলের আয়োজন ও সেবামূলক কর্মকাণ্ডসমূহের বাস্তবায়ন সেই মহান আধ্যাত্মিক সাধকের গভীর উপলব্ধির বাস্তব ফসল।

উল্লেখ্য যে, এই অলিকুল শিরোমণি কুতুবুল আলম শাহ্‌সূফী আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মীর মুহাম্মদ আখতর {হযরত কেবলা} (রাহ.) ১৯৭১ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারী জীবনের ২৯তম হজ্বব্রত পালনকালে উকূফে আরাফা শেষে পবিত্র মিনার হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। পরদিন মহান রাব্বুল আলমিনের ব্যতিক্রমী অলৌকিক ইচ্ছায় পবিত্র হেরেমে কাবায় ইশার নামাযের পর লক্ষ লক্ষ হজ্ব পালনকারীর উপস্থিতিতে তাঁর একক নামাযে জানাযা শেষে তাঁকে পবিত্র জান্নাতুল মোয়াল্লায় চির শায়িত করা হয়। এখানে প্রণিধানযোগ্য যে, হাদীসে রাসূল (সা.)-এর আলোকে পবিত্র জান্নাতুল মোয়াল্লায় মদফূন বা অন্তিম শয্যা লাভকারী বিনা হিসাবে জান্নাতবাসী হবেন এবং তাঁদের সুপারিশে আরো ৭০ হাজার আল্লাহ্র বান্দা এই দুর্লভ সৌভাগ্যের অধিকারী হবেন। মহান দয়াময় আল্লাহ আমাদেরকেও যেন এই নিয়ামত দানে ধন্য করেন। আমীন।
তিনি ইন্তেকালের পূর্বেই পবিত্র কাবা শরীফের সম্মুখে খিলাফতের দায়িত্বভার তাঁর সুযোগ্য খলিফা হাদিয়ে যামান শাহসূফী হযরত মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল জব্বার (রাহ.)-এর উপর অর্পণ করেন। হযরত কেবলা (রাহ.)-এর ইন্তেকালের সাথে সাথেই আনজুমনে ইত্তেহাদ-এর সামগ্রিক দায়িত্ব তাঁর উপর বর্তায়। উল্লেখ্য, হযরত কেবলা (রাহ.)-এর জীবদ্দশায় ১৯৬০ সাল হতেই তিনি আনজুমনে ইত্তেহাদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। স্বীয় পীর-মুর্শিদের পদাঙ্ক অনুসারী এই মহান অলি শরীয়ত ও তরীক্বতের প্রচার ও প্রসারে নিরলসভাবে আত্মনিয়োগ করেন। মুর্শিদে বরহকের অর্পিত দায়িত্ব পালনে বিভিন্ন সেবাধর্মী পরিকল্পনা প্রণয়ন, গ্রহণ ও বাস্তবায়ন তথা খিদমতে খালকের উদ্দেশ্যে নিজের সামগ্রিক শক্তি-সামর্থ, তথা আপন জীবন উৎসর্গ করে গিয়েছেন।
তিনি তরীকায়ে আলীয়ায়ে কাদেরীয়ার মাধ্যমে তাযকীয়ায়ে নফ্স তথা আত্মার পরিশুদ্ধিতা ও ছফায়ে ক্বালবির (নিষ্কলুষ অন্তর) জন্য বিভিন্ন মাহফিল ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠান সমগ্র বাংলাদেশে ছড়িয়ে দেন। দেশ-বিদেশে প্রতিষ্ঠা করেন আন্‌জুমনে ইত্তেহাদ বাংলাদেশের শখা-প্রশাখা। ৬০টি মসজিদ, ১৫টি এতিমখানা, ১০টি মাদরাসা ও হেফজখানা, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, দাতব্য চিকিৎসালয়, হসপিটাল প্রভৃতি প্রতিষ্ঠা করেন দেশের বিভিন্ন স্থানে। সমাজের ব্যবসায়ী, চাকুরীজীবী, সাধারণ শিক্ষিত ও উচ্চশিক্ষিতদের সমন্বয়ে মসজিদ ভিত্তিক মানবসেবামূলক ব্যাপক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে আনজুমনে ইত্তেহাদকে লক্ষ কোটি মানুষের অন্তরে শ্রদ্ধা ও ভালবাসার সংগঠন হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করেন। মহান আল্লাহ্র ইচ্ছায় জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকল মানুষের একান্ত আপনজন অকুতোভয় এই মর্দে মুজাহিদ জীবনের ৩৩তম হজ্বব্রত পালনের পরবর্তী বছর ১৯৯৮ সালের ২৫শে মার্চ ইন্তেকাল করেন। ঐতিহাসিক রেলওয়ে পোলোগ্রাউন্ড ময়দানে লক্ষ লক্ষ মুমিন-মুসলমানের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত স্মরণাতীতকালের বৃহত্তম জানাযা শেষে তাঁকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় বায়তুশ শরফ মসজিদের দক্ষিণ পার্শ্বে ও তাঁরই হাতে প্রতিষ্ঠিত বায়তুশ শরফ আদর্শ কামিল (এম.এ.) মাদরাসার সম্মুখস্থ ফুল বাগানে সমাহিত করা হয়।
মহান আল্লাহর দরবারে সহস্র কোটি বার শুকরিয়া এ জন্য যে, হযরত মাওলানা মীর মুহাম্মদ আখতর (রাহ.) ও হযরত মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল জব্বার (রাহ.)-এর সোহবতে, সাহচর্যে ধন্য তাঁদের সুযোগ্য উত্তারিধারী, প্রখ্যাত আলিমে দ্বীন, যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস, বাহ্‌রুল উলূম হযরত শাহ মাওলানা মুহাম্মদ কুতুব উদ্দিন সাহেব (ম.জি.আ.) এপ্রিল ১৯৯৮ হতে বায়তুশ শরফ আনজুমনে ইত্তেহাদ বাংলাদেশের সভাপতির পদে নিয়োজিত আছেন। তাঁর গতিশীল নেতৃত্বে বায়তুশ শরফ আনজুমনে ইত্তেহাদ এখন একটি ধর্মীয়, সামাজিক ও তামাদ্দুনিক আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। তিনি মানুষকে সিরাতুল মুস্তাকীম প্রদর্শনের মাধ্যমে সত্যিকারের মুমিন বান্দায় পরিণত করার লক্ষে শরীয়ত ও তরীকতের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি অব্যাহতভাবে পরিচালনা করে যাচ্ছেন।
বায়তুশ শরফ আনজুমনে ইত্তেহাদের সার্বিক কর্মকাণ্ডের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হল
(ক) ইসলামের আলোকে র্ধম-কর্মের সমন্বয়ে মানুষকে সত্যিকার মুমিনে রূপান্তরিত করা।
(খ) মসজিদ ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সমাজ সেবা।
(গ) উপযুক্ত শিক্ষা ও কারিগরী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টি ও মানুষের ধর্মীয়, তাহযীব-তামাদ্দুনের উন্নয়নের সাথে সাথে তায্‌কিয়ায়ে নফ্স বা আত্মার পরিশুদ্ধি সাধন।
বায়তুশ শরফ আনজুমনে ইত্তেহাদের বর্তমান কর্মকাণ্ড
বর্তমানে সমগ্র বাংলাদেশে আনজুমনে ইত্তেহাদ-এর কেন্দ্রসমূহ সক্রিয় রয়েছে। এছাড়া ইউরোপ, আমেরিকাসহ মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশেও এর কর্মকাণ্ড প্রসার লাভ করেছে।
আনজুমনে ইত্তেহাদ এর পরিচালনাধীন মসজিদসমূহ মসজিদ বায়তুশ শরফ নামে পরিচিত। আমাদের মহান হযরত কেবলা (রাহ.) ও তাঁর সম্মানিত খলিফাবৃন্দের আন্তরিক প্রচেষ্টায়, দরবারের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ ভক্ত-অনুরক্তদের উদার হস্তে দান ও সক্রিয় সহযোগিতায় আল্লাহ পাক সোবহানাহু তাআলার অশেষ রহমতে এ পর্যন্ত বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ১২৮টি মসজিদ বায়তুশ শরফ নির্মিত হয়েছে। আরও বেশ কয়েকটি মসজিদ প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা হাতে আছে।
বাংলাদেশে ইসলামের প্রবেশ দ্বার ও বাণিজ্যিক রাজধানী বন্দর নগরী চট্টগ্রামের ধনিয়ালাপাড়ায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বায়তুশ শরফ আনজুমনে ইত্তেহাদ বাংলাদেশ-এর প্রধান কার্যালয়। এখান থেকে দেশে বিদেশে শ্রদ্ধেয় হুজুর কেবলা (ম.জি.আ.) নির্দেশনায় আনজুমনে ইত্তেহাদের সকল কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়।
চট্টগ্রাম বায়তুশ শরফ কমপ্লেক্স একটি পূর্ণাঙ্গ কর্মকেন্দ্র। একটি সুবিশাল মসজিদ, একটি আদর্শ কামিল মাদরাসা, একটি এতিমখানা, একটি হেফজখানা, একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান, একটি পাঠাগার, একটি ছাপাখানা, একটি দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্র, একটি লাইব্রেরী, একটি ফোরকানিয়া মাদরাসা, আনজুমনে ইত্তেহাদ, আনজুমনে নওজোয়ান ও মজলিসুল ওলামা বাংলাদেশ-এর কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং বেকার, অসহায় ও এতিমদের পেশাগত প্রশিক্ষণ প্রদানের উদ্দেশ্যে বেশ কিছু কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সমন্বয়ে এটি গঠিত।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় বায়তুশ শরফের অনুরূপ চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ৭৫ কিলোমিটার দূরে লোহাগাড়া উপজেলার আখতরাবাদ (কুমিরাঘোনায়) বায়তুশ শরফের পবিত্র আধ্যাত্মিক অনুশীলন কেন্দ্রে একটি মসজিদ, একটি মাদরাসা, একটি এতিমখানা, একটি হেফজখানা, একটি হাসপাতাল, মৎস্য চাষ প্রকল্প, বাগান ও সেচ প্রকল্প প্রভৃতি নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা ও সমাজকল্যামূলক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
এছাড়া বায়তুশ শরফ কমপ্লেক্স কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, চিরিঙ্গা-চকরিয়া, মহিপাল-ফেনী, ঢাকা ও খুলনা পূর্ণাঙ্গ কর্মকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। সুদূর মাঈনীমুখ-লংগদু থানা, রাঙ্গামাটি (পার্বত্য জেলা), পিরোজপুর, হাস্‌লা-নড়াইল, কাহালু-বগুড়া, ঐতিহাসিক ষাট গম্বুজ মসজিদ কমপ্লেক্স বাগেরহাটসহ বিভিন্ন স্থানে মসজিদ বায়তুশ শরফ-এর কর্মকাণ্ড এগিয়ে চলেছে।
শিক্ষাক্ষেত্রে আন্‌জুমনে ইত্তেহাদ প্রাথমিক পর্যায় থেকে উচ্চতর পর্যায়ের শিক্ষা প্রদান এবং গবেষণার কাজ পরিচালনা এবং ইসলামী ব্যাংকিং, বাংলাদেশে ইসলাম ও ইসলামী শরীয়ত, ইতিহাস-ঐতিহ্যের উপর জাতীয় পর্যায়ে বহু সেমিনারের আয়োজন করছে। এর কর্মপদ্ধতি শুধুমাত্র শিশু-কিশোরদের শিক্ষা প্রদানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। নিরক্ষর বয়স্কদের আক্ষরিক জ্ঞান ও ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান থেকে শুরু করে পর্যায়ক্রমে উচ্চ শিক্ষিত চিন্তাশীল ব্যক্তিদের জন্য শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও গবেষণা পরিচালনার সুযোগ এই সংগঠন সৃষ্টি করেছে।
আনজুমনে ইত্তেহাদের এতিমখানাসমূহ প্রকৃত অর্থে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন কেন্দ্র। এ সংগঠন ২০টি এতিমখানা দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিচলনা করে থাকে, যাতে প্রায় ২০০০ অসহায় এতিমের লালন-পালনের সুব্যবস্থা রয়েছে।
এতিমদেরকে প্রতিষ্ঠানের খরচায় খানা-পিনা, পোশাক-পরিচ্ছদ, থাকার ব্যবস্থা, শিক্ষা-প্রশিক্ষণ এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান করা হয়। তাদের পার্থিব ও ধর্মীয় শিক্ষাদান ছাড়াও সেলাই, কাঠের কাজ, প্যাকেজিং, বাজার থলে তৈরী, ছাপাখানার কাজ, বুক বাইন্ডিং, চুল কাটা, প্রভৃতিতে যত্ন সহকারে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়ে থাকে। এতিমদের মধ্যে যারা মেধাবী- তাদের উচ্চতর শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থাও করে থাকে। তাছাড়া গরীব ও মেধাবী ছাত্রদের আনজুমনের তরফ থেকে বিভিন্ন বৃত্তি ও আর্থিক সাহায্য প্রদান করা হয়, যাতে তারা ভবিষ্যতে আত্মনির্ভরশীল এবং দেশের আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। আলহামদুলিল্লাহ, বায়তুশ শরফ আদর্শ কামিল মাদরাসা ও এতিমখানা থেকে শিক্ষিত ও প্রশিক্ষিত এতিমগণ আজ সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন দায়িত্বপূর্ণ পদ অলঙ্কৃত করে দেশ ও জাতির খেদমত করে যাচ্ছেন।
আনজুমনে ইত্তেহাদ বেশ কয়েকটি দাতব্য চিকিৎসাকেন্দ্র এবং স্বাস্হ্য প্রকল্প পরিচালনা করে থাকে। গরীব রোগীরা এখানে বিনা পয়সায় ডাক্তারের উপদেশ, ব্যবস্থা এবং ঔষধপত্র পেয়ে থাকে। এতে এলোপ্যাথিক এবং হোমিওপ্যাথিক উভয় চিকিৎসা দেয়া হয়। ঢাকা বায়তুশ শরফ কমপ্লেক্সে দারুশ-শেফা হাসপাতাল পরিচালিত হয়ে আসছে এবং কক্সবাজার বায়তুশ শরফ কমপ্লেক্সে শিশু ও পঙ্গুসহ পূর্ণাঙ্গ একটি চক্ষু হাসপাতাল পরিচালিত হচ্ছে। আখরতাবাদে (কুমিরাঘোনা) প্রতিষ্ঠিত বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া হাসপাতাল রোগীদের নিয়মিত চিকিৎসা প্রদানসহ প্রতিবছর বিনামূল্যে খত্‌না ও চক্ষু শিবিরের আয়োজন করে। খুলনার রূপসাঘাটস্থ মসজিদ বায়তুশ শরফেও একটি দাতব্য চিকিৎসাকেন্দ্র পরিচালিত হয়ে আসছে।
আনজুমনে ইত্তেহাদ বছরের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় সমাবেশের (মাহফিল) আয়োজন করে থাকে। এর মধ্যে লোহাগাড়া থানার আখতরাবাদে বাৎসরিক ঈছালে ছওয়াব মাহফিল, কক্সবাজার বায়তুশ শরফে ফাতেহায়ে ইয়াজদাহুম উপলক্ষে ঈছালে ছওয়াব মাহফিল এবং অনৈসলামিক কার্যকলাপ উচ্ছেদের লক্ষ্যে প্রতি বছর বাগেরহাট হযরত খান জাহান আলী (রাহ.)-এর মাযার ও ঐতিহাসিক ষাট গম্বুজ মসজিদ প্রাঙ্গণে তিনদিনব্যাপী ঈছালে ছাওয়াব মাহফিল এবং চট্টগ্রামের লোহাগাড়া থানার বড়হাতিয়ায় জবলে সীরাতে অনুষ্ঠিত মাহফিল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এসব মাহফিলে অসংখ্য আল্লাহ্র বান্দা ভক্তি শ্রদ্ধা নিয়ে শরীক হন এবং ধর্মীয় শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ লাভ করে নিজেদের জীবনকে সুন্দরভাবে পরিচালনা করেন।
আনজুমনে ইত্তেহাদের একটি বিশেষ কর্মসূচী হলো ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম। বিভিন্ন সময়ে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, ও জলোচ্ছ্বাসে দুর্গত মানুষের সাহায্যে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আনজুমনে ইত্তেহাদের একটি অনন্য ভূমিকা রয়েছে।
এছাড়া আনজুমনের তরফ থেকে সারা বছর জাতি-ধর্ম-নির্বিশেষে গরীব, অসহায়, দুঃস্থ, এতিম ও নওমুসলিমদের পুনর্বাসন, গৃহ নির্মাণ, দুঃস্থ মেয়েদের বিয়ে, পড়াশুনার খরচ ইত্যাদির জন্যও সাহায্য সহযোগিতা প্রদান করা হয়ে থাকে।
ভাবে আনজুমনে ইত্তেহাদের বাস্তবধর্মী কর্মকাণ্ড ও প্রকল্পসমূহ মানুষকে সত্যিকারের মুমিন হওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে। তাই আনজুমনে ইত্তেহাদ এবং এর কর্মকেন্দ্র মসজিদ বায়তুশ শরফসমূহ বাংলাদেশে ও বিহির্বিশ্বে সর্বস্তরের মানুষের ভক্তি শ্রদ্ধা ও ভালবাসার দৃষ্টি আর্কষণ করতে সক্ষম হয়েছে।
আনজুমনে ইত্তেহাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এবং প্রতিষ্ঠান ও প্রকল্পসমূহ পরিচালনায় বহু অর্থের প্রয়োজন। এতিম শিশুদের জন্য বাংলাদেশ সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, ওওজঙ, বিশ্ব খাদ্য সংস্থা হতে প্রাপ্ত সাহায্য সহযোগিতা আমরা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করি এবং এজন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানাই। দেশের দানশীল ব্যক্তিদের এককালীন দান, যাকাত, ফিতরা, কোরবাণীর পশুর চামড়া বিক্রয় লব্ধ অর্থ এবং আনজুমনে ইত্তেহাদের সদস্য ও ভক্ত-অনুরক্তদের মাসিক/এককালীন চাঁদাই এই সংগঠনের নিয়মিত আয়ের প্রধান উৎস।
উল্লেখ্য যে, এই মসজিদ ভিত্তিক মানবকল্যাণ সংগঠনের পক্ষ হতে টাকা পয়সার জন্য কারো কাছে গিয়ে হাত পাতা হয় না, স্বেচ্ছায় কেউ দান পৌঁছিয়ে দিলে সাদরে গ্রহণ করা হয়।
মহান আল্লাহ সবার জীবনে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি দান করুন। আমীন।
Source: www.baitushsharafcomplex.com

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Relaeted Other Islamic Blog

Other Blog-site: