- ইবনে সাঈদ উদ্দীন
প্রত্যেক রাষ্ট্রের বিভিন্ন বিভাগে পৃথক পোশাক ব্যবস্থা থাকে। তাই কোনো দেশের পতাকাকে অসম্মান করা যায় না। মোটকথা বিভিন্ন সংস্থা ও সরকারের এই যে পৃথক পোশাক থাকে তা ব্যতীত পরস্পরের মধ্যে পার্থক্য করা সম্ভব নয়। কে বুঝবে লোকটি পুলিশ, না ডাক বিভাগের, না সেনাবাহিনীর সদস্য। তাই যুগ যুগ ধরে প্রত্যেক দেশে পৃথক পৃথক পোশাকের ব্যবস্থা চলে আসছে।
তেমনি আছে প্রত্যেক জাতির আলাদা পোশাক যে জাতি নিজস্ব পতাকা ও বৈশিষ্ট্যের হেফাজত করে না, সে জাতি দ্রুত অন্যজাতির মধ্যে বিলীন হয়ে যায়। এমনকি তাদের নাম-নিশানাও বাকি থাকে না। শিখ জাতি নিজেদের বৈশিষ্ট্যমন্ডিত পাগড়ি, চুল ও দাড়ি হেফাজত করে, সে কারণে শিখ জাতি এক পৃথক বৈশিষ্ট্যের দাবিদার এবং জিন্দা জাতি হিসেবে গণ্য।
ইংরেজি জাতি ষোল শতাব্দীর শেষ দিকে এদেশে আসে। তারা ছিল শীত প্রধান দেশের অধিবাসী। কিন্তু গরম দেশে এসে নিজস্ব পোশাক কোট, প্যান্ট, হ্যাট ও নেকটাই ত্যাগ করেনি। সে কারণে তৎকালীন ৫ কোটি মানুষের ভারতে তারা বিলীন হয়ে যায়নি।
মুসলমান এদেশে এসেছে এক হাজার বছর পূর্বে। যদি তারা নিজস্ব পোশাক হেফাজত না করতো তাহলে অন্য জাতির মতো তারাও সেই কবেই হিন্দুদের মধ্যে বিলীন হয়ে যেতো। মুসলমানরা শুধু নিজস্ব পোশাক রক্ষা করেনি বরং নিজেদের ধর্ম, তাহজীব-তমদ্দুন, ভাষা ও আচার-ব্যবহার প্রভৃতির হেফাজতও করেছে। সে কারণে আজও ভারতের বুকে নিজেদের সত্তাকে টিকিয়ে রেখেছে। যতোদিন তারা এ ধারা অব্যাহত রাখবে ততোদিন জাতি হিসেবে বেঁচে থাকতে পারবে। নতুবা কালের স্রোতে তলিয়ে যাবে। কোনো জাতি বা ধর্মের স্বতন্ত্র অস্তিত্ব ততোদিন দুনিয়ার বুকে বিরাজমান থাকে যতোদিন সে আচার-আচরণ, কৃষ্টি ও সভ্যতা এবং ভাষা ও কর্মনীতিতে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য বজায় রাখতে পারে।
ইসলাম নিজের আকীদা-বিশ্বাস, ধ্যান-ধারণা এবং আদর্শ ও চরিত্রের দিক দিয়ে অপরাপর ধর্ম হতে অনন্য বৈশিষ্ট্যের দাবিদার এবং বাস্তবেও ইসলাম আপন অনুসারীদের জন্য পৃথক পোশাক নির্দিষ্ট করে এবং যে কোনো মূল্যে তার হেফাজতকে ধর্ম ও জাতির কর্তব্যরূপে গণ্য করে। কারণ এই পোশাক দ্বারাই খোদা ভক্তদের পার্থক্য করা যাবে। হাদীস শরীফে আছে, ‘যে লোক যে জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে।' এর মর্মকথাও তাই। এ কারণে হুজুর (সা.) নিজে উম্মতের জন্য বিশেষ পোশাক নির্দিষ্ট করেছেন। কোথাও বলেছেন, আমাদের এবং মুশরিকদের মধ্যকার পার্থক্য হলো টুপির ওপর পাগড়ি পরা। আবার কোথাও বলেছেন, আমাদের এবং মুশরিকদের মধ্যে পার্থক্য এই যে, আমরা দাড়ি বড় করে রাখি আর তারা মুন্ডায় বা ছোট রাখে। আবার কোথাও বলেছেন, ইহুদি-খৃস্টানদের মতো চুলের সিঁথি কেটো না। এভাবে তিনি টাখনুর নিচে কাপড় পরতেও নিষেধ করেছেন যেন অহংকারীদের সাদৃশ্য না আসে। মোটকথা এসব বৈশিষ্ট্য ও পোশাক হলো ইসলামের একনিষ্ঠ অনুসারী আল্লাহর মকবুল বান্দাদের। বিপরীত দিকে আছে খোদাদ্রোহী ও ভিন্ন জাতিসমূহের পোশাক। কাজেই রাসূল (সা.)-এর আশেকগণের উচিত তারই চালচলন, আচার-আচরণ সুরত সিরাতের অনুসরণ করা এবং দ্বীন ও নবী (সা.)-এর শত্রুদের আচার-আচরণকে ঘৃণার সাথে পরিত্যাগ করা।
প্রত্যেক দেশ ও জাতি বন্ধুর রীতিনীতিকেই ভালবাসে এবং শত্রুর রীতিনীতিকে ঘৃণা করে। এটাই স্বাভাবিক। সুতরাং মুসলিম জাতির জন্য বৃটিশ, আমেরিকা ও ফ্রান্সের পরিবর্তে নবী (সা.)-এর অনুসরণ করাই আবশ্যক। বলাবাহুল্য, পরীক্ষা, প্রতিযোগিতা, চাকরি-বাকরি এবং অফিসারের বিদ্রুপের বাহানা হলো তুচ্ছ ব্যাপার। শিখ জাতি পরীক্ষা ও প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয় এবং বড় বড় পদেও নিযুক্ত হয়। কিন্তু নিজের পাগড়ি ও দাড়ি ঠিক রাখে। কেউ বাঁকা চোখে দেখতে সাহস পায় না। তাহলে মুসলমান কি শিখ জাতির চেয়ে কোনো দিক দিয়ে দুর্বল/ কারণ মুসলমান সর্বদা নাফস ও শয়তানের বিরুদ্ধে মুজাহাদা (সংগ্রাম) করে দ্বীনের ওপর কায়েম (প্রতিষ্ঠিত) থাকে। সুতরাং সকল প্রতিকূলতার মধ্যে মুসলমান মাথা উঁচু করে ইসলামী বৈশিষ্ট্যের ওপর কায়েম থাকবে।
মাওলানা আশেক ইলাহী মিরাঠী (রহ.) চিকিৎসা শাস্ত্রের আলোকে দাড়ির গুণাগুণ সম্পর্কে বলেছেন, ইউনানী শাস্ত্রমতে দাড়ি হলো পুরুষের সৌন্দর্যের প্রতীক এবং বক্ষদেশের হেফাজতকারী। আধুনিক চিকিৎমা বিজ্ঞানেও দাড়ির সমর্থন পাওয়া যায়। জনৈক অভিজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, দাড়ির ওপর বারবার ক্ষুর চালালে স্নায়ুসমূহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে চোখের জ্যোতি হ্রাস পেতে থাকে। অপর ডাক্তার লেখেন যে, লম্বা দাড়ি রোগ জীবাণুকে গলা ও বক্ষ পর্যন্ত পৌঁছতে বাধা দেয়। দাড়ি সম্পর্কে মার্কিন খ্যাতনামা চিকিৎসক চার্ল হোমরের একটি লেখা খুবই স্পষ্ট। নিচে তার অনুবাদ দেয়া হলো :
জনৈক লেখক বলেন, ‘দাড়ি মুন্ডানোর বৈদ্যুতিক যন্ত্র প্রস্তুত করার জন্য জোর দেয়া হচ্ছে, যাতে কাজটি তড়িত গতিতে সম্পন্ন হয় এবং সময় বাঁচে।' আমি বুঝি না দাড়ির প্রশ্নে মানুষের এত আপত্তি কেন? মাথায় যদি চুল রাখা যায় তবে মুখে দাড়ি রাখতে অসুবিধা কোথায়? মাথার কোনো স্থানে চুল না উঠরে টাক খাওয়ার লজ্জা হয়, কিন্তু চেহারাকে টাক খাওয়ার মতো করতে লজ্জা হয় না কেন? অথচ ঐ দাড়ি পৌরুষের আলামত। দাড়ি মানুষের চেহারাকে পৌরুষদীপ্ত, প্রত্যয়ী ও দৃঢ় মনোবলসম্পন্ন করে। দাড়ির কারণে ক্ষতিকর ধুলাবালি ও রোগ জীবাণু হতে বেঁচে থাকা যায়। এছাড়া ঘন দাড়ি গলাকে সদা কাশি হতে বাঁচায়।
ডা. হোমর দাড়ি মুন্ডানোকে চেহারার টাক, ফ্যাশনের গোলামী ও নারীসুলভ আচরণ বলে অভিহিত করেছেন। তার মতে, দাড়ি হলো সাহস, দৃঢ়তা, প্রত্যয় ও পৌরুষের প্রতীক। তিনি দাড়ি মুন্ডানোকে সর্দি-কাশির অন্যতম কারণ বলেও মন্তব্য করেন। ডা. হোমর আরো বলেন, দুনিয়াতে দাড়ির মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। ফলে প্রকৃতির অন্যতম অবদান হিসেবে নারীর ওপর পুরুষের যে প্রাধান্য তা ফিরে আসবে। কোনো দাড়িওয়ালা ব্যক্তি আপন স্ত্রীকে ত্যাগ করেনি। সে সদা নিজ দাড়ির মর্যাদা রক্ষা করে চলে। আমার বুঝে আসে না যে, প্রাপ্তবয়স্ক যুবকরা কিশোর হতে কেন চায়? আল্লাহ পুরুষের মুখে দাড়ি সৃষ্টি করেছেন, যাতে তার চেহারার সৌন্দর্য বাড়ে। যারা দাড়ি নিয়ে বিদ্রুপ করে তারা হযরত ঈসা (আ.)কেই বিদ্রুপ করে। কারণ তিনি দাড়ি রেখেছিলেন।
চিন্তা করার বিষয় যে, একজন খৃস্টান নিজের ধর্ম ও চিকিৎসা শাস্ত্রের দৃষ্টিকোণ থেকে সংক্ষেপে কত মূল্যবান উক্তি করেছেন। তার মতে, যুবকের কিশোর অবস্থায় প্রত্যাবর্তনের আশা করা পশ্চাদমুখী হওয়ারই নামান্তর এটা যেন মানুষের বানরে পরিণত হওয়ার কুপবৃত্তি। একজন খৃস্টান দাড়ির বিদ্রুফকারীকে হযরত ঈসা (আ.)-এর সাথে বিদ্রুপকারী হিসেবে অভিহিত করেন। আর আমরা মুসলমানরা হুজুরে পাক (সা.)-এর উম্মত হয়ে তার পবিত্র আদর্শের কি মূল্য দিচ্ছি? স্বয়ং ঈসা (আ.) যার উম্মতরূপে কেয়ামতের আগে দুনিয়ায় পুনঃআগমন করবেন।
Source: www.dailysangram.com
ইসলামে পোশাকের বর্ণনা
মামুন মল্লিক
পোশাক ব্যবহারের উদ্দেশ্য বিশ্লেষণ করলে নিচের কারণগুলো আমাদের সামনে স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
১. প্রতিকূল আবহাওয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করা:আবহাওয়ার প্রতিকূলতায় প্রকৃতি বিশ্বব্যাপী এক নয়। গরম দেশের পোশাক আর শীতপ্রধান দেশের পোশাক যে এক হবে না তা ব্যাখ্যার অপেক্ষা রাখে না। তাই প্রাথমিকভাবে মানুষ তার পরিবেশ অনুসারে পোশাক বেছে নেয়।
২. লজ্জাস্থানকে ঢাকা:লজ্জাস্থানের পরিমাণ বোধ ভিন্ন হতে পারে; কিন্তু লজ্জাস্থানকে আবৃত করা মানুষের একটি সহজাত প্রবৃত্তি।
৩. নিজেকে বা শ্রেণীকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করা:সভ্যতার একটি অবদান হলো ইউনিফর্ম। ইউনিফর্ম হিসেবে পোশাক ব্যবহার করে বিভিন্ন শ্রেণীর অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা এবং সমতা বিধান করাসহ উক্ত গোষ্ঠী বা শ্রেণীকে অন্য গোষ্ঠী বা শ্রেণী থেকে পৃথকভাবে চিহ্নিত করা হয়।
৪. সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা: বেশভূষা মানুষের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। সমাজজীবনকে করে সুশৃঙ্খল।
পোশাক ব্যবহারের উদ্দেশ্য সম্পর্কে পবিত্র কোরআনের বর্ণনা।
এবং তিনি তোমাদের জন্য ব্যবস্থা করেছেন পরিধেয় বস্ত্রের, যা তোমাদের তাপ থেকে রক্ষা করে। (নাহল:৮১) হে আদাম সন্তানগণ, আমি তোমাদের পোশাক-পরিচ্ছদ দিয়েছি লজ্জাস্থান ঢাকার ও বেশভূষার জন্য। (আ’রাফ:২৬)
আমাদের পর্যবেক্ষণ এবং আল-কোরআনে বর্ণিত উদ্দেশের মধ্যে মৌলিক কোনো পার্থক্য নেই। প্রতিকূল আবহাওয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করার কথা বলে স্বয়ং আল্লাহপাক ভৌগোলিক কারণে বিশ্বব্যাপী পোশাকের বিভিন্নতার স্বীকৃতি দিয়েছেন। ভৌগোলিক কারণেই বিশ্বব্যাপী পোশাকের একই ডিজাইন নির্ধারণ করা বিজ্ঞানসম্মত নয়। বিজ্ঞানের আধার মহান আল্লাহপাক কোরআনে তা নির্দেশও করেননি।
দীনের ক্ষেত্রে ইসলাম প্রতিটি বিন্দুতে অনঢ় হলেও শরিয়তি বিধানের ক্ষেত্রে ইসলাম সেভাবে অনঢ় না হয়ে সীমানা নির্ধারণ করেছে। তবে সীমানার ক্ষেত্রে অনঢ়। যেহেতু হজরত মুহাম্মদ (স.) শেষ নবী, তাই ইসলাম অনাগত ভবিষ্যতের সবদিক খোলা রেখে শুধু জীবনের বিভিন্ন ব্যবহারিক দিকের চুতসীমা নির্ধারণ করেছে। সীমার ভেতর মুমিনের আছে স্বাধীনতা। ইজতিহাদ করার অধিকারও এই সীমার মধ্যে।
পোশাকের কোরআনিক মৌলিক বিধান
১. লজ্জাস্থান তথা সতর আবৃতকারী পোশাক হতে হবে। (মুমিনদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং লজ্জাস্থানসমূহ হেফাজত করে। -নূর :৩০)
২. পোশাক অপচয় ও অহমিকাপূর্ণ হবে না। (হে আদম সন্তান! প্রত্যেকটি ইবাদতের স্থানে তোমরা নিজেদের ভূষণে সজ্জিত হয়ে থাক। আর খাও, পান কর এবং অপচয় করো না।- আ’রাফ:৩১)
৩. মহিলাদের পোশাকে মাথা, বক্ষ এবং গ্রীবা আবৃতকারী কাপড় থাকতে হবে। (মুমিন নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং লজ্জাস্থানকে হেফাজত করে, তারা যেন যা স্বভাবতই প্রকাশিত তা ব্যতীত সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে। তাদের গ্রীবা ও বক্ষদেশ যেন তারা মাথার কাপড় দিয়ে আবৃত করে।-নূর:৩১)
কোরআনিক বিধানের পর আমরা পাই রাসুল (স.) সুন্নাহ থেকে পোশাকের ব্যবহারিক সীমা। অনেকে মনে করেন রাসুলের (স.) পোশাক ছিল ৬ষ্ঠ শতাব্দীর আরবের প্রচলিত পোশাক। প্রকৃত ঘটনা তা নয়। রাসুলের (স.) পোশাক এক ছিল না। রাসুলুল্লাহর (স.) পোশাক ছিল এক আল্লাহতে বিশ্বাসী তাকওয়ার পোশাক; কিন্তু একই আবহাওয়া ও দেশে বাস করার পরও কাফিরদের পোশাক ছিল মুশরিকি চিন্তায় সিক্ত।
রাসুলুল্লাহ (স.) এবং সাহাবিগণ যে একটিমাত্র ডিজাইনের পোশাক পরতেন এমন নয়। হাদিস শাস্ত্র অধ্যয়ন করলে আমরা অনেক ধরনের পোশাকের নাম দেখতে পাই। যেমন কামিস (জামা), কাবা বা কোর্তা (কোট জাতীয় জামা), ইজার (সেলাইবিহীন লুঙ্গি). রিদা (চাদর), তুব্বান (হাফ প্যান্ট বা হাফ পায়জামা, জাঙ্গিয়া), জুব্বা, সারাবিল (পায়জামা, ফুলপ্যান্ট, সালোয়ার), খিমার (ওড়না), জেলবাব ইত্যাদি। রাসুল (স.) নিজেও যুদ্ধে, সফরে, অনুষ্ঠানে, ঈদগাহ, মেহমানদের সাথে সাক্ষাতের সময় সুবিধাজনক পোশাক পরিধান করেছেন।
তবে দৈনন্দিন জীবনে রাসুল (স.) প্রায় সময় ইজার (সেলাইবিহীন লুঙ্গি) এবং রিদা (চাদর) পরিধান করতেন। আবু বুরদাহ (রা.) বর্ণনা করেছেন, আয়েশা (রা.) একখানা চাদর ও মোটা কাপড়ের একটি ইজার নিয়ে আমাদের নিকট এলেন এবং বললেন, যখন নবী (স.) ওফাত যান, তখন এ দু’টি পোশাক তার পরিধানে ছিল। (সহি বুখারি)।
বিভিন্ন বর্ণনা থেকে এটা খুবই স্পষ্ট যে, রাসুলল্লাহ (স.) তত্কালীন আরব দেশের পোশাককে বাতিল না করে প্রথমত ইসলামী আকিদার আলোকে সংশোধন বা সংস্কার করেছেন। দ্বিতীয়ত. বৈসাদৃশ্য সৃষ্টির মৌলিক নীতির ভিত্তিতে বিশ্বব্যাপী সব সম্প্রদায় থেকে মুসলমানদের পোশাককে পৃথক করেছেন।
যে ব্যক্তি রাসুলকে মেনে চলল, সে মূলত আল্লাহরই আনুগত্য করল -নিসা : ৮০। তাই রাসুলুল্লাহর (স.) নির্দেশ অবশ্য পালনীয়। পরিভাষায় ওয়াজিব বা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা যাই বলা হোক না কেন, যে বিষয়ে রাসুলের (স.) সুস্পষ্ট নির্দেশ আছে, সেটি অমান্য করার কোনো সুযোগ নেই।
রাসুল (স.) কর্তৃক নির্দেশিত পোশাকের আবশ্যিক বিধান
১। কোনো মুসলিম পুরুষ রেশমী পোশাক পরিধান করতে পারবে না।
২। অন্য ধর্মীয় পোশাক পরিধান করা যাবে না।
৩। কাপড়ে কোনো প্রাণীর ছবি রাখা যাবে না।
৪। পোশাক টাইট, ফিট অথবা পাতলা হতে পারবে না।
৫। মহিলাদের পোশাক পা পর্যন্ত ঢাকা হবে।
৬। সর্বোপরি পুরুষ এবং মহিলার পোশাক পৃথক বৈশিষ্ট্যের হতে হবে।
৭। পোশাক এমন হবে না যে ইবাদতের সময় মনোযোগ আকর্ষণ করে।
৮। পুরুষের পোশাক পায়ের গিরার নিচে ঝুলানো যাবে না।
পুরুষদের পোশাক পায়ের গিরার নিচে ঝুলিয়ে পরার ক্ষেত্রে অহংকারকে অনেকে শর্ত হিসেবে মনে করেন। বলা হয়ে থাকে, অহংকার না থাকলে ঝুলিয়ে পরা যাবে। কিন্তু বহু হাদিস আছে, যেখানে অহংকারকে শর্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়নি।
তাই দেখা যাচ্ছে, একটিমাত্র ডিজাইনের পোশাক সবার জন্য হবে, এমনটি নয়। বরং বলা যায়, বিশ্বের সব প্রান্তের পোশাকই ইসলামী পোশাক, যদি তা ইসলামী আকিদার সাথে সাংঘর্ষিক না হয় পোশাকটি যদি কোরআন এবং সুন্নাহ বর্ণিত সীমা অতিক্রম না করে এবং পোশাক পরিধান করলে অন্য কোনো সম্প্রদায়ের সদস্য হিসেবে মনে না হয়। আমরা আমাদের পোশাক দিয়ে ইসলামী সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব করতে না পারলে, আমাদের স্বকীয়তা রক্ষায় ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল হতে বাধ্য। অতএব আমাদের পোশাক অন্তত এতটুকু অবশ্যই হতে হবে, যেন আপনাকে-আমাকে দেখে অন্য সম্প্রদায়ের লোক মনে না হয়।
Source: mamunmck.wordpress.com
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন