আওয়ামীলীগ যেভাবে জামায়াত ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের উপকার করল…
- লিখেছেন লোকমান বিন ইউসুফ
বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ নির্যাতনের মাধ্যমে ভবিষৎ এ বাংলাদেশকে একটি ইসলামী
রাষ্ট্রে রুপান্তরিত করার ক্ষেত্রে জামায়াত ইসলামী ও ছাত্রশিবিরকে
গুরুত্বপূর্ন সহযোগিতা করল যেভাবে …
প্রথমত বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিরাপদ করে :
২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত যে সমস্ত জনশক্তি ছাত্রশিবির তৈরী করেছিল তাদের
মধ্যে থেকে যারা আওয়ামীলীগের আমল দেখেনি তাদের মান নিয়ে সংগঠনের অভ্যন্তরে
চরম প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছিল । তাদের নেতৃত্বের ব্যাপারে আস্থা কমছিল । ২০০১
থেকে ২০০৮ পর্যন্ত যে সমস্ত জনশক্তি ছাত্রশিবির বা জামায়াত তৈরী করেছিল
বিরূপ পরিবেশে সাংগঠনিক কাজ এর কৌশলে তারা তেমন পারঙ্গম ছিলেন না। আয়েশী
একটা মেজাজে তারা তৈরী হচ্ছিলেন। চিন্তার গভীরতা যেমন কমছিল তেমনি আমলের
মানও। ভোগবাদী জগতে ছাত্র শিবিরের প্রবেশ ঘটছিল। ২০০৮ এ জোট ক্ষমতায় আসলে
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের মৌলিক চরিত্রের পরিবর্তনের আশংকা দেখা
দিয়েছিল । নেতৃত্বের ব্যপারে প্রশ্ন উঠা ছিল গুরুত্বপূর্ন উপসর্গগুলোর
একটি।
আওয়ামীলীগের নিযার্তনের কারনে
১. জামায়াত ইসলামী ও ছাত্রশিবিরে নেতা র্কমীদের মান বৃদ্ধি পেয়েছে।
২.বিরূপ পরিবেশে ইসলামী আন্দোলনের কাজের কৌশল শিখেছে।
৩. জামায়াত ইসলামী ও ছাত্রশিবিরে নেতারা কর্মীদের সহানুভূতি ও দোয়া নিয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ।
৪. নেতা কর্মীদের পারস্পরিক আন্তরিকতা মায়া ভালবাসা প্রেম ঈর্ষনীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। দলীয় গাথুঁনি মজবুত হয়েছে।
৫. আয়েশী মেজাজ পরিহার করে চিন্তার গভীরতা তৈরী হয়েছে ও আমল বৃদ্ধি পেয়েছে।
৬.ভোগবাদী নেতা তৈরী হওয়া থেকে সংগঠন ও আন্দোলন রক্ষা পেয়েছে।
৭. সমালোচনা কমেছে ও পরামর্শ গ্রহন ও বাস্তবায়ন বেড়েছে।
৮. মৌলিক চরিত্রের পরিবর্তন হওয়া থেকে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির নিরাপদ
হয়েছে। এখানে আমি বুঝাতে চাচ্ছি যে ২০০১ পরবর্তী সময়ের নেতা তৈরী হওয়ার
পরিবেশ ২০০৮ পরবর্তী অক্ষুন্ন থাকলে আগের নেতাদের ছাত্রসংগঠন পরিচালনা ও
মেজাজ থেকে ভিন্ন হত বর্তমান পরিচালনা ও লোক গঠন । মৌলিক জায়গা থেকে সরে
আসার প্রবনতা বেশী করে দৃষ্টি গোচর হচ্ছিল । মহান রাব্বুল আলামীন
ছাত্রশিবিরকে রক্ষা করেছেন।
অফিস বিমুখী কর্মতৎপরতা ও প্রদর্শনেচ্ছা দুরীকরন হয়ে নেতৃত্ব তৈরীর সঠিক ধারায় শিবিরের ফিরে আসার ক্ষেত্রে সহযোগিতা :
অফিসমুখী কর্মতৎপরতার কারনে জনশক্তিরা নেতা বা দায়িত্বশীলদের সাহচর্য্য
বঞ্চিত হচ্ছিল এবং মানউন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রদর্শনেচ্ছা গুরুত্ব পাচ্ছিল।
কিছুটা নেতাদের ইচ্ছাকৃত কিছুটা জনশক্তির চতুরতায়।
এক্ষেত্রে সার্ভে ভিত্তিক দায়িত্বশীল তৈরীর শিবিরের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য নজর ও
উদাসীনতার কারনে ব্যাহত হচ্ছিল । যা ভবিষৎ এ শিবিরকে ধ্বংশের মুখোমুখি দাড়
করিয়ে দিত।
পুলিশী তৎপরতার কারনে অফিস বিমুখী কর্মতৎপরতা তৈরী হয়েছে ও নেতা তৈরী
হওয়ার ক্ষেত্রে প্রদর্শনেচ্ছা দুরীকরন হয়েছে । মোবাইলে ও মটর সাইকেলে
বাহারী যোগাযোগ কমে একান্তে সাক্ষাৎ , সাহচর্য্য , নেতা কর্তৃক কর্মীদের
পরামর্শ গ্রহন বেড়েছে , নেতা কর্মীর গভীর পরিচিতি স্থাপিত হয়েছে । সাংগঠনিক
মজবুতি ইস্পাত কঠিন হয়েছে ।
আগামী দিনের নেতৃত্ব তৈরী হল :
আওয়ামী সরকারের নির্যাতন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির কে আগামীদিনের জন্য
মান সম্পন্ন নেতৃত্ব তৈরীর ক্ষেত্রে সহযোহিতা করেছে । রাসুলের যুগে কঠিন
সময়ে তৈরী হওয়া নেতারা পরবর্তীতে দক্ষ নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হয়েছেন। বর্তমান
সময়ে তৈরী হওয়া নেতারা বেশী করে সংগঠন ও ইসলাম কে ভালবাসবে । ভবিষৎ এ
সংগঠনের ভিতরে কারো কাছ থেকে মৌলিক চেতনা পরিপন্থী কাজ দেখলে প্রতিবাদী হয়ে
উঠবে এবং সংগঠনের মৌলিক চরিত্র অক্ষুন্ন রাখতে প্রয়াসী হবেন। স্বাধীনতা
যুদ্ধকালীন কঠিন সময়ে গঠিত হওযা নেতারা (তোফায়েল রা )এখন ও নেতৃত্ব দিচ্ছেন
দাপুটে ভূমিকায় ।
জামায়াত ইসলামী ও ছাত্রশিবির জনশক্তি অধ্যয়নমুখী হয়েছে :
আওয়ামী ও বামপন্থীদের শক্তিশালী মিডিয়ার ভূমিকা মোকাবিলায় জামায়াত
ইসলামী ও ছাত্রশিবির নেতা কর্মীরা অধ্যয়নমুখী হয়েছেন আগের থেকে অনেক বেশী।
তারা আরো বেশী বুঝতে পারছেন যে একটি আদর্শিক সংগঠনের নেতৃত্ব দিতে হলে আর ও
বেশি পড়তে হবে । ইকরা বিসমি রাব্বিকাল্লাজি খালাক।
নেতা কর্মীদের সক্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে :
জোট সরকারের আমলে দেখা গেছে জনশক্তিকে মিছিলে ও সভায় উপস্থিত করাতে
নেতাদের কষ্ট হত অনেক । আসলেও সময়মত আসত না । আর এখন নেতাদের মুখ থেকে
সিদ্ধান্ত বের হওয়ার সাথে সাথে বোরাক বেগে সবাই একে অপরকে জানিয়ে দিচ্ছে ।
স্বতস্ফূর্ত ও সময়মত উপস্থিতি বৃদ্ধি পেয়েছে । সুশৃংখল পরিবেশ ও
সময়ানুবর্তিতা ফিরে এসেছে । যে কোন অর্জনের জন্য ময়দান তৈরী হচ্ছে ।
নিউটনের গতির ৩য সূত্র ও জাতি দেখবে হয়তো !!!!!
আওয়ামীদের যথোপযুক্তভাবে চিন্তে পারা :
বাংলাদেশে যদি আওয়ামীলীগ বিরোধী দীর্ঘমেয়াদী জেনারেশন তৈরী করতে হয় তবে
আওয়ামীলীগকে মাঝে মাঝে ক্ষমতায় আসা উচিত । তারা তাদের কর্মকান্ড দিয়ে
বিরোধী শিবিরের জন্য সমর্থক নেতা কর্মী তৈরী করে দেয় ।
জনগনের উৎসুক্য তৈরী হয়েছে :
ব্যাপক প্রচার ও ধরপাকড়ের কারনে জামায়াত ইসলামী ও ছাত্রশিবির এর প্রতি
জনগনের আগ্রহ ও সহানুভূতি তৈরী হয়েছে। তারা জামায়াত ইসলামী ও ছাত্রশিবির এর
কর্মকান্ড নিয়ে একটি আকর্ষন অনুভব করছে আওয়ামীলীগের চরিত্রহীনতার বিপরীতে।
জামায়াত ইসলামী ও ছাত্রশিবির এর নেতা র্কমীদের পরিচিত মহলে ব্যাপক
গ্রহনযোগ্যতা থাকার কারনে রাজনৈতিক সমর্থন বেড়েছে।
নেতারা কর্মীদের সহানুভূতি অর্জন করা ও ৩য় সারির নেতা
নেতারা চৌম্বকত্ব হাঁরাতে বসেছিলেন । ত্যাগ এর কারনে নেতারা কর্মীদের
সহানুভূতি অর্জন করতে পেরেছেন আগের মত। ফিরে পেয়েছেন আকর্ষন। কর্মীরা নেতার
জন্য রাতের আঁধারে প্রার্থনা করেন । নেতার প্রতি এমন আস্থা ও বিশ্বাস
বাংলাদেশের অন্য রাজনৈতিক দল গুলো শুধু কল্পনাই করতে পারেন । বাংলাদেশে
পরিচিত রাজনৈতিক দলের নেতার চরিত্র সম্পর্কে তাদের অধস্তনদের প্রশ্ন করলে
দেখবেন উত্তরে বলবে শালার বেটারা সব চোর! এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম জামায়াত
ইসলামী ও ছাত্রশিবির । এদের সবাই জানে তাদের নেতারা নিদোর্ষ । সময়ে বুঝবে
বিরোধীরা । ৩য় , ৪র্থ ৫ম সারির নেতারাও প্রথম সারির মত যোগ্য হয়ে যাচ্ছেন ।
আল্লাহ ভীতি বৃদ্ধি ও দান
মৌলিক ইবাদাতে আন্তরিকতা বেড়েছে। নফল ইবাদাত বেড়েছে। দান বেড়েছে । জনশক্তির
সময় দান , দৈহিক পরিশ্রম, চিন্তা ব্যয় , অর্থ ব্যয় সব আলহামদুলিল্লাহ
বেড়েছে।
আগে টাকার জন্য গেলে বায়তুলমালে এয়ানত(জনশক্তি ও শুভাকাংখীদের দান ) উঠত
কম আর এখন জনশক্তি ও শুভাকাংখীরা দেখলেই জিজ্ঞাসা করে টাকা লাগবে কিনা ।
পকেটে না থাকলে ধার করে দেয়। নিজেরটা দেয় পারলে আর ও কযেকজন থেকে কালেকশন
করে দেয় ।
সংবিধান কর্মপদ্ধতি নিয়ে নতুন করে চিন্তা ও গবেষনার গুরুত্ব উপলব্ধি :
জামায়াত ইসলামী ও ছাত্রশিবির এর সংবিধান কর্মপদ্ধতি নিয়ে নতুন করে চিন্তা ও গবেষনার গুরুত্ব উপলব্ধি হয়েছে ।
সংগঠনের স্ট্রাকচার নিয়ে নতুন চিন্তা
জামায়াত ইসলামী ও ছাত্রশিবির এর সাংগঠনিক স্ট্রাকচার ও পরিচালন পদ্ধতি নিয়ে নতুন চিন্তার ক্ষেত্র তৈরী হয়েছে।
নতুন পলিসি তৈরীতে সহায়ক হবে
জামায়াত ইসলামী ও ছাত্রশিবির আগে সব সেক্টরে লোক গঠনের দিকে মনযোগী
ছিলেন আর এখন মৌলিক মানবীয় চরিত্র সম্পন্ন জননেতা তৈরীতে চিন্তা করবে ।
নির্বাচনে জয়ী হয়ে আসার জেদ তৈরী হবে । আনন্দ দায়ক সংগঠন পরিচালনা গুরুত্ব
পাবে।
সামাজিক সংগঠন তৈরীতে উৎসাহী হবে
সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে যে শক্তিমান নেতা তৈরী হয় তা বুঝবে এবং নেতা
কর্মীদের শুধু দলীয় পরিমন্ডলে আবদ্ধ রাখবেনা । অভ্যন্তরে নান্দনিক বিতর্ককে
উৎসাহিত করবে । স্বাধীন মতপ্রকাশ ব্যাহত যাতে না হয় সেদিকে নজর দিবে ।
উদ্ভাবনী ও বিশ্লেষনী শক্তি গুরুত্ব পাবে । সৃজনশীলতা গুরত্ব পাবে ।
সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংগঠন গুলো নিয়ে নতুন খোরাক
রাজনৈতিক দর্শন সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে নিয়ন্ত্রন করবে নাকি স্বতন্ত্র নৈতিক মূল্যবোধে
এরা নিজেরা নিয়ন্ত্রিত হবে এবং রাজনৈতিক দল ও নেতার কার্যক্রম ও সিদ্ধান্ত প্রভাবিত করবে এটি ঠিক করতে প্রয়াসী হবে।
সর্বোপরি সেবা অরিয়েন্টেড শক্তিমান জনপ্রিয় নেতা তৈরী করতে প্রয়াসী হবে ।
একক গনভিত্তি সম্পন্ন এলাকা তৈরীতে উৎসাহিত করবে । যা সংসদে সম্মানজনক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করবে।
এভাবে আওয়ামীলীগ জামায়াত ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের উপকার করল নির্যাতনের মাধ্যমে।
Source: http://imbd.blog.com
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন