Main Slogan:

হে ইমানদারগণ! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ কর (সূরা বাকারা : ২০৮)

শনিবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১০

ঈদে বাড়ি ফেরা আনন্দময় হোক



ঈদে বাড়ি ফেরা আনন্দময় হোক
 ঈদের সব আনন্দই ভেস্তে যাবে যদি সুস্থ শরীরে গন্তব্যে পেঁৗছানো না যায়। ভ্রমণের সময় ও ঈদের ছুটিতে স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে কী কী করণীয়_জানাচ্ছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. খান আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. আ ফ ম সাইদুর রহমান ও ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রেস্পিরেটরি মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম। ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ। এই আনন্দ প্রিয়জনের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে পারলে আরো বহুগুণে বেড়ে যায়। এ জন্যই এ সময় বাস-ট্রেনের টিকিট পাওয়া এত ব্যাকুলতা। যত কষ্টই হোক পিছু হটি না। কিন্তু ক্লান্তিকর ও দীর্ঘ ভ্রমণ শেষে বাড়ি পেঁৗছানো এবং পরে আবার কাজে যোগদানের সময় অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। বিশেষ করে শিশুদের পক্ষে লম্বা যাত্রাপথের ধকল সহ্য করা খুব কঠিন হয়ে পড়ে। কিছু সাবধানতা অবলম্বন করলে ছোটখাটো বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা এড়ানো যায় সহজেই।


বাড়ি থেকে বেরোনোর আগে
অনেকেরই অভ্যাস আছে সত্যিকারের প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো ব্যাগে না পুরে পথে বেরিয়ে পড়ার। এ কারণে প্রাথমিকভাবে সমস্যায় না পড়লেও পরে আফসোস করতে হয়। এ জন্য এই স্বভাব ত্যাগ করে যাওয়ার দু-এক দিন আগে থেকেই পরিকল্পনা গ্রহণ করুন। কোথায় যাচ্ছেন, সেখানকার আবহাওয়া কেমন, কদিন থাকবেন ইত্যাদি বিষয় চিন্তা করে প্রস্তুতি নিন। এর মাধ্যমে যেমন কম জিনিস বহন করা সম্ভব তেমনি পরে কোনো দরকারি সামগ্রী যেমন ওষুধ, চশমা প্রভৃতি বাড়িতে ফেলে আসার ধকল পোহাতে হবে না।
এ বছর যেহেতু ঈদ গরমের সময় তাই কোথাও যাওয়ার আগে বিষয়টি অবশ্যই মাথায় রাখুন। দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা বজায় রাখতে ও রক্তের তারল্য ধরে রাখতে যেখানেই যাবেন বোতলে বিশুদ্ধ পানি সঙ্গে নিন, একটু পর পর নিজে পান করুন এবং আপনার সঙ্গে কোনো ছোট কেউ থাকলে তাকেও পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পানে উৎসাহিত করুন। ভ্রমণের সময় পোশাকের ব্যাপারেও সতর্কতা অবলম্বন করুন। খুব বেশি আঁটসাঁট পোশাক পরিধান করে ভ্রমণ করবেন না। বরং হালকা, আরামদায়ক ও সহজে বাতাস চলাচল করতে পারে_এমন পোশাক ভ্রমণের জন্য নির্বাচন করুন।
কোথাও যাওয়ার সময় কমবেশি মালপত্র সবার সঙ্গেই থাকে। আর যেহেতু নিজেদেরই বইতে হয়, তাই পাদুকাপুরাণ অর্থাৎ আপনি কোন ধরনের জুতা পরে বের হলেন, সেটাও খেয়াল করুন। জুতা জুতসই না হলে চলাফেরায় কষ্ট হবে। ভ্রমণের সময় মেয়েদের যতটা সম্ভব উঁচু হিলের স্যান্ডেল এড়িয়ে ফ্ল্যাট স্যান্ডেল পরা উচিত। কারণ দীর্ঘযাত্রার সময় পরে থাকা উঁচু হিলের জুতা পায়ের রক্ত চলাচলে বাধার সৃষ্টি করে এবং হাঁটুতে চাপ দেয়; ফলে পায়ের হাড়ে ব্যথা হতে পারে। আবার একেবারে নতুন জুতো পায়ে কোথাও রওনা হবেন না। এতে পায়ে ফোস্কা পড়তে পারে।
রোজা রেখে রওনা হলে অতিরিক্ত সতর্কতা হিসেবে কিছু খাবার সঙ্গে রাখুন, যেন ইফতারের সময় হয়ে গেলে বাইরের খাবার না খেতে হয়। অনেকেরই বাসে বা ট্রেনে উঠলে মাথা ঘোরে। একে মোশন সিকনেস বলে। বিভিন্ন কারণেই মোশন সিকনেস হতে পারে। বেশি খারাপ লাগলে কেউ কেউ বমিও করে থাকেন। তাঁরা রওনা হওয়ার আগেই অ্যাভোমিন জাতীয় ওষুধ খেয়ে নিতে পারেন এবং বিব্রতকর পরিস্থিতির হাত থেকে রক্ষা পেতে সঙ্গে প্লাস্টিকের প্যাকেট রাখুন।
বাসে বা ট্রেনে ওঠার আগে বেশ খানিকটা পথ রোদে হাঁটার প্রয়োজন হয় বা অনেকটা সময় বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, তাহলে সানবার্ন থেকে বাঁচতে ছাতা কিংবা রোদচশমা ব্যবহার করুন।
শিশুরা সব সময় ছাতার নিচে থাকতে রাজি না হলে বিকল্প হিসেবে তাদের হ্যাট পরাতে পারেন। ছাতা সঙ্গে রাখার আরেকটা উপকারী দিক হলো রওনা হওয়ার পর হুট করে বৃষ্টি-বাদল শুরু হলে সেটা আপনাকে ভিজে যাওয়া থেকে বাঁচাবে। নতুবা বাড়ি গিয়ে আনন্দ করার বদলে সর্দি-হাঁচি-কাশি-জ্বর এসবেই কাহিল হয়ে পড়বেন।
ঈদের সময় যেহেতু অনেক মানুষ একই বাড়িতে একত্র হন, ফলে যেখানে যাচ্ছেন সেখানে সব কিছু সব সময় হাতের নাগালে নাও পেতে পারেন। তাই যাওয়ার আগে গুরুত্বপূর্ণ কিটসমৃৃদ্ধ ফার্স্ট এইড বক্স নিতে কিছুতেই ভুলবেন না। মনে রাখবেন, ঈদের সকালে অসতর্কতাবশত হাত কেটে গেলে কিংবা আপনার সন্তান খেলতে গিয়ে হাঁটু ছিলে ফেললে এই ফার্স্ট এইড বক্সই হয়তো বড় বিপদ থেকে রেহাই দেবে।
এ ছাড়া একটি নোটবুকে আপনার পরিচিত চিকিৎসক ও হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ফোন নম্বর ও ঠিকানা লিখে রাখুন। এতে দুর্ঘটনা মোকাবিলা করা তুলনামূলকভাবে সহজ হবে।
ভ্রমণের সময়কোথাও রওনা হলে বারবার অল্প পরিমাণে পানি সঙ্গে রাখা যেমন অত্যাবশ্যক তেমনি প্রস্রাব খুব বেশিক্ষণ আটকে না রাখাও গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই শুচিবায়ুর জন্য যেখানে-সেখানে বাথরুমে যাওয়ার ভয়ে পানি কম খান, যা একেবারেই ঠিক নয়।
ভ্রমণকালে বাস বা ট্রেনের জানালা দিয়ে কখনো থুতু বা কফ বাইরে ফেলবেন না। এর মাধ্যমে বিভিন্ন রোগজীবাণু সংক্রমিত হতে পারে। হাঁচি এলে মুখে রুমাল ব্যবহার করুন। দীর্ঘ সময়ের ভ্রমণে আরেকটি সমস্যা দেখা দেয়, সেটা হলো পা ফুলে যাওয়া বা পায়ে পানি চলে আসা। বাসে বা ট্রেনে অনেকক্ষণ বসে থাকলে এমন হয়। এ জন্য টানা বসে না থেকে একটু হাঁটাচলা করতে পারেন। অবশ্য ট্রেনে বা লঞ্চে হাঁটাচলার সুযোগ পাওয়া গেলেও বাসে বা প্রাইভেটকারে তা পাওয়া যায় না। এ ক্ষেত্রে পায়ের কিছু ব্যায়াম আয়ত্ত করে নিতে পারেন, যেগুলো এক জায়গায় বসে থেকেই করতে পারবেন। এ ছাড়া আজকাল দূরপাল্লার প্রায় সব বাসই যাত্রাপথে কোথাও না কোথাও কিছু সময়ের জন্য বিরতি নেয়, সে সময় বাসে বসে না থেকে বা অলস সময় না কাটিয়ে হাঁটাচলার মাধ্যমে পায়ের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করে নিতে পারেন। প্রাইভেটকারে রওনা হলে পথে দু-এক জায়গায় থেমে একটু হাঁটাচলা করুন।
যাত্রাপথে অনেকেই বই পড়ে সময় কাটান। ভালো অভ্যাস কিন্তু আপনার যদি মোশন সিকনেস থাকে, তাহলে দয়া করে এ কাজটি করতে যাবেন না। ট্রেনে দুলনির সঙ্গে সঙ্গে বই পড়ার ফলে মাথা ঘোরা শুরু হতে পারে, যা থেকে পরে বমিও হতে পারে। মোশন সিকনেস থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বাস বা ট্রেন চলাকালে বাইরের দিকে তাকিয়ে না থেকে ও বই না পড়ে বরং চোখ বন্ধ রাখুন। সম্ভব হলে ঘুমিয়েও নিতে পারেন।
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয়, ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার সময় অপরিচিত কেউ কিছু দিলে খাবেন না। একই কথা প্রযোজ্য, ঈদ কাটিয়ে ফিরে আসার সময়ও।

শিশু ও বয়স্কদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দিন
ভ্রমণের সময় শিশুরা অধিক উত্তেজনাবশত প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলে। কখনো সে ব্যথা পায়, কখনো হারিয়েও যায়। এ জন্য আপনার সন্তান কোথায় যাচ্ছে, কী করছে, কার সঙ্গে খেলছে_সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখুন। একেবারে ছোট দুগ্ধপোষ্য শিশু নিয়ে ভ্রমণ না করাই উচিত। একান্ত প্রয়োজনে বের হতে হলে তাদের জন্য পর্যাপ্ত খাবারের ব্যবস্থা করে তবেই বাসা থেকে বের হোন। ভ্রমণের সময় শিশুদের ধুলাবালি থেকে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে, এদিকে সতর্ক থাকুন। শিশুদের বাইরের খোলা খাবার খাওয়ানো থেকে বিরত রাখার জন্য বাসায় তৈরি কিছু মুখরোচক খাবার সঙ্গে নিয়ে নিন। তারা যথেষ্ট পরিমাণে পানি ও তরল-জাতীয় খাবার খাচ্ছে কি না, সেদিকে সব সময় লক্ষ রাখুন।
বয়স্ক মানুষের জন্য বাসে বা ট্রেনে ওঠা কষ্টসাধ্য হয়ে থাকে। সে সময় তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। বাসের মধ্যেও যেন তারা একই ভঙ্গিতে বেশিক্ষণ বসে না থাকে, সে ব্যাপারে সজাগ থাকুন।

গর্ভাবস্থায় ভ্রমণে করণীয়
বিশেষ কিছু ক্ষেত্র ছাড়া অন্তঃসত্ত্বা মহিলারা বেশ নিরাপদেই ভ্রমণ করতে পারেন। তবে দেহে ঝাঁকির উদ্রেক হয়_এমন পথ যথাসম্ভব পরিহার করুন। প্রথম তিন মাস ও সাত মাস বা ২৮ সপ্তাহ পেরোনোর পর ভ্রমণ যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন। গর্ভাবস্থায় একা ভ্রমণের চিন্তা করা ঠিক নয়। নিরাপদ মাতৃত্বের স্বার্থে কোনো ধরনের বিপদের ঝুঁকি নেবেন না; এ জন্য যাঁরা ৩৫ বছর পেরোনোর পর প্রথমবারের মতো মা হচ্ছেন, যাঁদের উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যা আছে, যাঁরা মেরুদণ্ডের সমস্যায় আক্রান্ত এবং ইতিপূর্বে যাঁরা মাতৃত্বজনিত জটিলতার মুখোমুখি হয়েছেন, তাঁরা এবারে ঈদের আনন্দ বাড়িতে বসেই উপভোগ করুন। অন্য যেকোনো ধরনের সমস্যা সমাধানে সর্বদা চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলুন।  
ভ্রমণের সময় ব্যায়াম

বাসে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়ার সময় অনেকক্ষণ বসে থাকার জন্য অনেকেরই পা ফুলে যায়। গন্তব্য স্থলে যাওয়ার জন্য ছয়-সাত ঘণ্টার বেশি একনাগাড়ে বসে থাকার প্রয়োজন হলে এমন ঘটনা বেশি ঘটে। এ সময়ে শরীরে একধরনের জড়তাও ভর করে। এ ধরনের বিভিন্ন অসুবিধা দূর করতে কয়েকটা ব্যায়াম জেনে নিন, যেগুলো বাসে বা গাড়িতে বসেই করা সম্ভব। এতে ভ্রমণ আনন্দদায়ক হওয়ার পাশাপাশি দেহও সতেজ থাকবে ।
* কিছুক্ষণ পর পর স্ট্রেচিং বা আড়মোড়া ভাঙার চেষ্টা করুন।
* বসে থেকেই হাত কয়েকবার ওপর-নিচ করতে পারেন। এতে দেহের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকবে।
* দীর্ঘ সময় বসে থাকার ফলে অনেকেরই পা ফুলে যায়। এ সমস্যা এড়াতে বসে থেকেই একটু পর পর দুই পা গোড়ালির ওপর ভর করে কয়েকবার ঘুরিয়ে নিন।
* শূন্যে ঘুষি মারাও কিন্তু হাতের একধরনের ব্যায়াম। এর মাধ্যমে দুই বাহুতে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখা সম্ভব।
* বাস থামলে বা গাড়ি থামিয়ে সুযোগ পেলেই হাঁটাহাঁটি বা নড়াচড়া করে শরীরের অবসাদ দূর করুন। গ্রন্থনা : হুমায়রা ফেরদৌস

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Relaeted Other Islamic Blog

Other Blog-site: