Main Slogan:

হে ইমানদারগণ! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ কর (সূরা বাকারা : ২০৮)

শনিবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১০

ঈদের খাবার হিসাব করে খান



ঈদের খাবার হিসাব করে খান 
ঈদের আনন্দ ছোটদের সবচেয়ে বেশি। ছোট বলে তারা একটানা রোজা রাখে না, শখ করে দু-একটা রাখে, তাই রোজা শেষে ঈদের দিন মজার মজার খাবার তারা খেতে পারে। সাধারণত এতে ওদের সমস্যা কম হয়। তবে অতিভোজনে যে কারো মতো ছোটদেরও সমস্যা হতে পারে।
১৬ থেকে ৩০ বছর বয়সীরা সাধারণত রোজা রাখেন। তার পরও রোজার পর ঈদের খাওয়া-দাওয়া তাঁদের ওপর তেমন কোনো প্রভাব ফেলে না, কোনো শারীরিক সমস্যা না থাকা ও হজমে সহায়ক সব ধরনের এনজাইমের সঠিক নিঃসরণের কারণে। শরীরে তাঁদের অন্যান্য অসুখ না থাকলে গুরুপাক খাদ্যগুলো সহজে হজম হয়ে যায়।
তবে মলত্যাগের সময় পায়ুপথে ব্যথা, জ্বালাপোড়া ও কখনো কখনো রক্তক্ষরণ হতে পারে। এক মাস রোজায় দীর্ঘসময় পানি ও অন্যান্য তরল খাবার খাওয়া হয় না। ইফতারের পরও পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পান করা হয় না। ফলে শরীরের পানির ঘাটতি পুরোপুরি পূরণ হয় না। ইফতার ও সেহ্রিতে আমরা যে ধরনের খাবার যেমন ছোলা, পেঁয়াজু ইত্যাদি খেয়ে অভ্যস্ত, তাতে আমাদের শাকসবজির অভাবও থেকে যায়; তাই স্বাভাবিকভাবেই শতকরা ৪০ ভাগ মানুষের কোষ্ঠ কাঠিন্য অথবা অনিয়মিত পায়খানা হওয়ার অভ্যাস হয়।
অন্যদিকে ঈদের দিন প্রচুর তৈলাক্ত খাবার, পোলাও, বিরিয়ানি ও আমিষ জাতীয় খাবার, যেমন মুরগি, খাসি বা গরুর মাংস, কাবাব, রেজালা ইত্যাদি খাই। এসব খাবার অন্ত্র থেকে অতিরিক্ত পানি শোষণ করে। ফলে কোষ্ঠ কাঠিন্যের সমস্যা আরো বেড়ে যায় ও অ্যানাল ফিশার ও পায়ুপথে জ্বালাপোড়া, ব্যথা ইত্যাদি হতে পারে। যাদের আগে থেকেই হিমোরয়েড বা পাইলসের সমস্যা আছে তাদের পায়ুপথে রক্তক্ষরণ পর্যন্ত হতে পারে।যা করতে হবেঈদের নামাজ পড়তে যাওয়ার আগে অল্প করে সেমাই বা পায়েস খান। সেমাই ও পায়েসের সঙ্গে কিশমিশ, বাদাম ইত্যাদি খান, খাবার আগে ফলের জুস, যেমন পেঁপে, আম ইত্যাদি খেতে পারেন, তবে আনারসের জুস না খাওয়াই ভালো। খাবার আধঘণ্টা পর দেড় থেকে দুই গ্লাস পানি খেয়ে নামাজ পড়তে যান।
* দিনে বিভিন্ন ধরনের খাবার খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে প্রচুর পানি ও অন্যান্য তরল খাবার খান।
* একেবারে বেশি করে না খেয়ে অল্প অল্প করে বারবার খান।
* যারা ঈদের দিন চটপটি জাতীয় খাবার পছন্দ করেন তারা তেঁতুলের টক সঙ্গে নিন।
* পোলাও বা বিরিয়ানির সঙ্গে অবশ্যই সালাদ (টমেটো, শসা ইত্যাদি) খান।
* খাবারের পর ডেজার্ট হিসেবে দই খান।

মধ্যবয়সী (৩০ থেকে ৪৫ বছর বয়সীদের জন্য) মানুষের খাবার সম্পর্কে সচেতন থাকা প্রয়োজন। এমনকি হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিস, হাইপারকোলেস্টেরমিয়া ইত্যাদি না থাকা সত্ত্বেও এই বয়সের মানুষের ঈদের খাবারের ব্যাপারে বাড়তি সতর্ক থাকা দরকার। মধ্যবয়সীদের যে সমস্যাগুলো দেখা যায় তা হলো_
* পেট ভরা ভাব বা অস্বস্তিকর অনুভূতি বা ব্লটিং। রোজার পর হঠাৎ করে তৈলাক্ত, চর্বিযুক্ত খাবার অতিরিক্ত খাওয়া হয়। এসব খাবার পরিপূর্ণভাবে পরিপাক করতে অন্তত ১১ থেকে ১২ ঘণ্টা সময় লাগে। একবারে বেশি খাবার খাওয়ার জন্য পেটে অস্বস্তিকর অনুভূতি, ভরা ভরা ভাব, বারবার ঢেকুর ওঠা এমনকি বুকে ব্যথা পর্যন্ত হতে পারে।
* যাদের পেপটিক আলসার ডিজিজ আছে তাদের রোজার সময় দীর্ঘক্ষণ পেট খালি থাকার জন্য নিঃসরিত হাইড্রোক্লোরিক এসিড পাকস্থলী ও ডিওডেনামে ক্ষয় করে। ঈদের দিন তৈলাক্ত ও ঝাল মশলাযুক্ত খাবার খাওয়ায় পাকস্থলী ও ডিওডেনামের ক্ষতে পুনরায় প্রদাহের সৃষ্টি হয় ও বুক জ্বলা, পেট জ্বলা ইত্যাদি অনেক বেড়ে যায়।
* মহিলাদের সাধারণত আইবিএস বা ইরিটেবল বাওল সিনড্রোম দেখা যায়। অনেক ক্ষেত্রে দুগ্ধজাত খাবারগুলো যেমন পায়েস, সেমাই, হালুয়া ইত্যাদি খাবারে অস্বস্তি, ঘন ঘন মলত্যাগ ও অসম্পূর্ণ মলত্যাগের অনুভূতি হয়।
* কোষ্ঠ কাঠিন্য বা পায়ুপথে ব্যথা ও রক্তক্ষরণের সমস্যায় আক্রান্ত হন অনেকে।
যা করতে হবে
* অতিরিক্ত পোলাও, বিরিয়ানি জাতীয় খাবার খাবেন না।
* যাদের পেটে অস্বস্তি বা গ্যাস হয়েছে বলে মনে হচ্ছে তাঁরা মটিলিটি বাড়ানোর জন্য ডমপেরিডন জাতীয় ওষুধ খেতে পারেন।
* যাদের পেপটিক আলসার ডিজিজ আছে তারা সকালে উঠেই অ্যান্টিআলসারেন্ট-রেনিটিডিন, ওমিপ্রাজল বা প্যান্টোপ্রাজল গ্রুপের ওষুধ খান। ওষুধ খাওয়ার এক-দুই ঘণ্টা পরে খাবার খান। এন্টাসিড জাতীয় ওষুধও খেতে পারেন।
* যাদের আইবিএস আছে তারা দুগ্ধজাত খাবার এড়িয়ে চলতে চেষ্টা করুন।
* রাতে কোনো দাওয়াতে গেলে অল্প খাওয়ার চেষ্টা করুন। খেয়েই ঘুমিয়ে পড়বেন না। খাওয়ার অন্তত দুই ঘণ্টা পর বিছানায় যাবেন।
* ঈদের সময় সাধারণত সবাই একত্রে বসে খাওয়া হয় ও খাবার সময় গল্পগুজব করা হয়। এতে অতিরিক্ত বাতাস পাকস্থলীতে ঢুকে বার বার ঢেকুর তোলার সমস্যা হতে পারে। তাই খাবারের সময় যতটা সম্ভব কম গল্পগুজব করুন ও খাবার ভালো করে চিবিয়ে খান।
* খাবারের ফাঁকে ফাঁকে পানি খাবেন না, এতে হজম রসগুলো পাতলা হয়ে যায়। ফলে হজমে অসুবিধা হয়। তাই খাওয়ার অন্তত এক-ই ঘণ্টা পর পানি পান করুন।
* খাবারের মাঝে বোরহানি খেতে পারেন, তবে কোল্ড ড্রিংকস পরিহার করুন।
* খাবারের পর টকদই খান।

তবে ঈদের সময় বয়স্ক মানুষের জন্য ভারী খাবারগুলো অনেক ধরনের সমস্যা তৈরি করতে পারে। যেমন_
* বমি ভাব হওয়া ও বমি হওয়া
* ডায়রিয়া
* পেট ব্যথা
* বুক ব্যথা
* কোষ্ঠকাঠিন্য
* ইনটেস্টিনাল অবস্ট্রাকশনওহতে পারে

যা করতে হবেভারী খাবার না খাওয়াই ভালো। যদি একান্তই খেতে হয়, তবে পরিমাণে খুব কম খেতে হবে। যে খাবারে সমস্যা বেশি হয়, তা এড়িয়ে চলুন। পেটে গ্যাস হলে ডমপেরিডন জাতীয় ওষুধ, এসিডিটির সমস্যা হলে এন্টাসিড, রেনিটিডিন, ওমিপ্রাজল, প্যান্টোপ্রাজল ওষুধ খান। খাওয়ার পর দই বা টক দই খান। তবে সবচেয়ে ভালো ভারী খাবার এড়িয়ে ভাত, মুরগির মাংস বা মাছ খাওয়া। তাতে সমস্যা কম হবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Relaeted Other Islamic Blog

Other Blog-site: