সর্বপ্রথম হাদিসটি আবু হুরায়রা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত । তিনি বলেন আমার অন্তরঙ্গ বন্ধু হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) আমকে বলেছেন যেঃ
“ এই উম্মাহর মধ্যে একটি দল সিন্ধ এবং হিন্দ এর দিকে অগ্রসর হবে ”
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন আমি যদি এই অভিযানে শরীক হতে পারতাম এবং
শহীদ হতে পারতাম তাহলে উত্তম হত ; আর যদি আমি গাজী হয়ে ফিরে আসতাম তবে আমি
একজন মুক্ত হযরত আবু হুরায়রা হতাম, যাকে সর্বশক্তিমান আল্লাহ্
জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দিতেন ।
রেফারেন্সঃ
এই শব্দগুলো দিয়ে শুধুমাত্র ইমাম বিন হাম্বল (রঃ) তার ‘মুসনাদে’ হাদিসটি বর্ণনা করেছন ।
এবং ইবনে কাসির এই রেফারেন্সে হাদিসটির অনুলিপি তার ‘ আল-বিদায়া ওয়া নিহায়া ’ –তে উল্লেখ করেছেন ।
ক্বাজী আহমাদ শাকির এই হাদিসের একটি সুন্দর স্থায়িভাব দিয়েছেন ‘মুসনাদে আহমাদের’ ব্যাখ্যা ও খোঁজে।
ইমাম নিসাই হাদিসটি তার উভয় গ্রন্থঃ ‘ আস সুনান আল মুজতাবা ’ এবং ‘ আস সুনান আল কুবরা’ –তে বর্ণনা করেছেন ।
এর মাঝে নিম্নোক্ত শব্দ ব্যবহার করে উল্লেখ করেছেন যে, হযরত আবু
হুরায়রা (রাঃ) বলেন, হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) আমাদেরকে গাযওয়ায় হিন্দ
সম্পর্কে ওয়াদা করেছেন । আমি যদি এতে অংশগ্রহণের সুযোগ পেতাম তাহলে আমি এর
জন্য আমার সকল শক্তি ও সম্পদ ব্যয় করে দিতাম। যদি আমি এতে নিহত হতাম,
তাহলে আমি অতি উত্তম শহীদদের একজন হতাম । আর যদি ফিরে আসতাম তবে একজন মুক্ত
আবু-হুরায়রা হতাম ।
ইমাম বায়হাকি (রঃ) অনুরুপ শব্দগুলোর উল্লেখ করেছেন ‘ আস সুনান আল কুবরা’র। তার আরকটি বর্ণনায় একটি শব্দ যোগ হয়েছে ।
ইবনে দাউদের রেফারেন্সে, মাসদাদ আবু-ইসহাক ফাযারি সম্পর্কে বলেন যে তিনি
বলতেনঃ ‘ আমি যদি রোম শহরের যে গাযওয়াত গুলোতে অংশগ্রহণ করেছি তার বদলে
মারবাদ (ভারত থেকে আরবের পূর্বে কিছু অঞ্চল) এর গাযওয়াতে অংশগ্রহণ করতে
পারতাম’।
ইমাম বায়হাকি (রঃ) একই বর্ণনা সম্পর্কে তার ‘দালাইল আন নুবুওয়াহ’তে বলেছেন ।
এবং তার এই রেফারেন্সে, অনুরূপ বর্ণনা তুলে ধরেছেন ইমাম সুয়ুতি (র) ‘ইন আল খাসাইস আল কুবরা’তে ।
অধিকন্তু, নিম্নোক্ত হাদিস বর্ণনাকারীরা একই হাদিস সামান্য ভিন্ন শব্দ ব্যবহার করে বর্ণনা করেছেনঃ
• শায়খ আহমাদ শাকির (রঃ) এই হাদিসটিকে অনুমোদন করেছেন ।
• ইবনে কাসির অনুরূপ হাদিসটি ‘ আল বিদায়া ওয়া আন নিহায়া ’-তে ব্যবহার করেছেন ।
• আবু নাঈম (রঃ) এটি ‘হুলিয়াত উল আউলিয়া’তে বর্ণনা করেছেন
• ইমাম হাকিম (রঃ) এই হাদিসটি ‘আল মুস্তাদরাক আল সাহিহ’তে বর্ণনার পর নীরব থেকেছেন ।
• তথাপি, ইমাম যাহাবী (রঃ) তার মুস্তাদরাক এ এটি তুলে দিয়েছেন ।
• সাঈদ ইবন মানসুর এটি তার বই ‘আস সুনান’ -এ এটি বর্ণনা করেছেন ।
• খতীব বাগদাদী তার বাগদাদের ইতিহাসে লিখেছেন যে ‘ এর জন্য আমি নিজেকে অস্থির বানিয়ে ফেলতাম ’।
• নাঈম বিন হাম্মাদ; ইমাম বুখারীর শিক্ষক এটি ‘আল ফিতান’ -এ লিখেছেন ।
• ইবনে আসিম (রঃ) তার ‘আল জিহাদ ’ গ্রন্থে লিখেছেন ।
• ইবনে হাতীম (রঃ) তার ‘ আল লা’ল ’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন যে ‘ যদি আমি
নিহত হই, তবে আমি জীবিত থাকব আহার্য পেয়ে (শহীদ হিসেবে) এবং যদি ফিরে আসি,
তবে হব মুক্ত ।
• ইমাম বুখারী (রঃ) ‘আল তারিক আল কাবির ’-এ বর্ণনা করেছেন ।
• ইমাম মাযী করেছেন ‘তেহজিব উল কামাল’-এ এবং
• ইবনে হাযার আসকালানী হাদিসটি ‘ তেহজিব আল তেহজিব ’-এ বর্ণনা করেছেন ।
উপরোক্ত সকলের লিখা অনুযায়ী এই হাদিসটি পুরোপুরি সঠিক এবং সুন্দর।
(২) হযরত সা্ওবান (রাঃ) এর হাদিস
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) হিন্দুস্তানের কথা উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন,
“ অবশ্যই আমাদের একটি দল হিন্দুস্তানের সাথে যুদ্ধ করবে, আল্লাহ্ সেই দলের যোদ্ধাদের সফলতা দান করবেন, আর তারা রাজাদের শিকল/বেড়ি দিয়ে টেনে আনবে । এবং আল্লাহ্ সেই যোদ্ধাদের ক্ষমা করে দিবেন (এই বরকতময় যুদ্ধের দরুন)”। এবং সে মুসলিমেরা ফিরে আসবে তারা ঈসা ইবন-ই-মারিয়াম কে সিরিয়ায় (শাম) পাবে ।
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন,
“ আমি যদি সেই গাযওয়া পেতাম, তাহলে আমার সকল নতুন অ পুরাতন সামগ্রী বিক্রি করে দিতাম এবং এতে অংশগ্রহণ করতাম । যখন আল্লাহ্ (সুবঃ) আমাদের সফলতা দান করতেন এবং আমরা ফিরতাম, তখন আমি একজন মুক্ত আবু হুরায়রা হতাম; যে কিনা সিরিয়ায় হযরত ঈসা (আঃ) কে পাবার গর্ব নিয়ে ফিরত । ও মুহাম্মাদ (সাঃ) ! সেটা আমার গভীর ইচ্ছা যে আমি ঈসা (আঃ) এর এত নিকটবর্তী হতে পারতাম, আমি তাকে বলতে পারতাম যে আমি মুহাম্মাদ (সাঃ) এর একজন সাহাবী ।”
বর্ণনাকারী বলেন যে হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) মুচকি হাসলেন এবং বললেনঃ ‘ খুব কঠিন, খুব কঠিন ’ ।
রেফারেন্সঃ
• ইমাম আহমাদ (রঃ) ‘মুসনাদ’
• ইমাম নিসাই (রঃ) ‘আস সুনান আল মুজতাবা’
• শায়খ নাসিরুদ্দিন আলবানী (রঃ) হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন
• তদ্রূপ ‘আস সুনান আল কুবরা’
• ইবনে আবি আসিম (রঃ) ‘কিতাবুল জিহাদ’
• ইবনে আদি (রঃ) ‘আল কামিল ফী যাউফা আর রীযাল’
• তাবরানী (রঃ) ‘আল মজাম আল অস্ত’
• বায়হাকী (র) ‘আস সুনান আল কুবরা’
• ইবনে কাসীর (রঃ) ‘আল বিদায়া ওয়া নিহায়া’
• ইমাম ওয়েলমি (রঃ) ‘মুসনাদ আল-ফিরদাউস’
• ইমাম সুয়ুতি (রঃ) ‘আল জাম্য আল কাবীর’
• ইমাম মানভী (রঃ) আল জামায় আল কাবীরের তাফসীর ‘ফায়েয আল কাদের’
• ইমাম বুখারী (রঃ) ‘আল তারীক আল কাবীর’
• ইমাম মাযী (রঃ) ‘তেহজিব আল কামাল’
• ইবনে আসাকার (রঃ) ‘দামাস্কাসের ইতিহাস’
(৩) হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) এর দ্বিতীয় হাদিস
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) হিন্দুস্তানের কথা উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেনঃ
“ অবশ্যই তোমাদের একটি দল হিন্দুস্তানের সাথে যুদ্ধ করবে, আল্লাহ্ সেই দলের যোদ্ধাদের সফলতা দান করবেন, আর তারা এর রাজাদের শিকল/বেড়ি পরিয়ে টেনে আনবে । এবং আল্লাহ্ সেই যোদ্ধাদের ক্ষমা করে দিবেন (এই বরকতময় যুদ্ধের দরুন)”। এবং সে মুসলিমেরা ফিরে আসবে তারা হযরত ঈসা ইবন-ই-মারিয়াম কে সিরিয়ায় (শাম) পাবে ।
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন
“ আমি যদি সেই গাযওয়া পেতাম, তাহলে আমার সকল নতুন ও পুরাতন সামগ্রী বিক্রি করে দিতাম এবং এতে অংশগ্রহণ করতাম। যখন আল্লাহ্ (সুবঃ) আমাদের সফলতা দান করতেন এবং আমরা ফিরতাম, তখন আমি একজন মুক্ত আবু হুরায়রা হতাম; যে কিনা সিরিয়ায় হযরত ঈসা (আঃ) কে পাবার গর্ব নিয়ে ফিরত । ও মুহাম্মাদ (সাঃ) ! আমার তীব্র ইচ্ছা হয় সে সময়টা পেতে যখন আমি ঈসা (আঃ) এর এত নিকটবর্তী হতে পারতাম, আমি তাকে বলতে পারতাম যে আমি মুহাম্মাদ (সাঃ) এর একজন সাহাবী ।”
বর্ণনাকারী বলেন যে হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) মুচকি হাসলেন এবং বললেনঃ ‘ খুব কঠিন, খুব কঠিন ’
রেফারেন্সঃ
নাঈম বিন হাম্মাদ হাদিসটি উল্লেখ করেন তার ‘ কিতাব আল ফিতান ’ গ্রন্থে ।
ইসহাক বিন রাহুইয়া (রঃ) ও হাদিসটি উল্লেখ করেন তার ‘মুসনাদে’ , যেখানে
তিনি আরো কিছু বাড়তি কথা যোগ করেছেন, তাই আমরা এখানে সেই বর্ণনাটিও তুলে
ধরছিঃ
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, একদিন রাসুল (সাঃ) হিন্দুস্তানের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে বলেনঃ
“ অবশ্যই, তোমাদের একটি দল হিন্দুস্তানের সাথে যুদ্ধ করবে, আল্লাহ্ সেই দলের যোদ্ধাদের (মুজাহিদ) বরকত দান করবেন, আর তারা সিন্ধের রাজাদের শিকল পরিয়ে আনবে, আল্লাহ্ সেই যোদ্ধাদের ক্ষমা করে দিবেন । তারপর, তারা যখন ফিরে আসবে তখন তারা ঈসা ইবন-ই-মারিয়ামকে সিরিয়ায় পাবে ।
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন,
“আমি যদি সেই গাযওয়া পাই, তাহলে এতে অংশগ্রহণ করার জন্য আমার সকল নতুন ও পুরাতন সামগ্রী বিক্রি করে দিতাম । যখন আল্লাহ্ আমাদের সফলতা দান করতেন তারপর আমরা ফিরতাম, তখন আমি একজন মুক্ত আবু হুরায়রা হতাম, যে কিনা সিরিয়ায় আসত এবং সেখানে হযরত ঈসা (আঃ) এর সাক্ষাৎ পেতাম । ও আল্লাহ্র রাসুল (সাঃ)! সে সময়টায় আমার গভীর ইচ্ছা যে আমি ঈসা (আঃ) এর নিকটবর্তী হয়ে তাকে বলতে পারি যে, আমার সেই সম্মান হয়েছে মুহাম্মাদ (সাঃ) এর সাহচর্য পাওয়ার । বর্ণনাকারী বলেন যেঃ মুহাম্মাদ (সাঃ) এটি শুনে হাসলেন ।
(৪) হযরত কা’ব (রাঃ ) এর হাদিস
এটা হযরত কা’ব (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেনঃ
“ জেরুসালেমের (বাই’ত-উল-মুক্বাদ্দাস) একজন রাজা তার একটি সৈন্যদল হিন্দুস্তানের দিকে পাঠাবেন, যোদ্ধারা হিন্দের ভূমি ধ্বংস করে দিবে, এর অর্থ-ভান্ডার ভোগদখল করবে, তারপর রাজা এসব ধনদৌলত দিয়ে জেরুসালেম সজ্জিত করবে, দলটি হিন্দের রাজাদের জেরুসালেমের রাজার দরবারে উপস্থিত করবে, তার সৈন্যসামন্ত তার নির্দেশে পূর্ব থেকে পাশ্চাত্য পর্যন্ত সকল এলাকা বিজয় করবে, এবং হিন্দুস্তানে ততক্ষণ অবস্থান করবে যতক্ষন না দাজ্জালের ঘটনাটি ঘটে । ”
রেফারেন্সঃ
নাঈম বিন হাম্মাদ (রঃ) উস্তায ইমাম বুখারী (রঃ) এই হাদিসটি বর্ণনা করেন
তার ‘আল ফিতান’ গ্রন্থে । এতে, সেই উধৃতিকারীর নাম উল্লেখ নাই যে কা’ব
(রাঃ) থেকে হাদিসটি বর্ণনা করেছে । কিন্তু কিছু আরবী শব্দের ব্যবহার করা
হয়েছে, তাই এটা এর সাথে সংযুক্ত বলেই বিবেচিত হবে । এসব শব্দাবলী
নিম্নরূপঃ (আলমুহকামউবনু না’ফি-ইন আম্মান হাদ্দাসাহু আন কাবিরিন)।
(৫) হযরত সাফওয়ান বিন উমরু (রাঃ)
এই পঞ্চম হাদিসটি হযরত সাফওয়ান বিন উমরু (রাঃ) এবং হাদিসটি এর ক্রমানুযায়ী বিতর্কের পর্যায়ে আছে।
তিনি বলেন কিছু লোক তাকে বলেছেন যে রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ
“ আমার উম্মাহর কিছু লোক হিন্দুস্তানের সাথে যুদ্ধ করবে, আল্লাহ্ তাদের সফলতা দান করবেন, এমনকি তারা ইন্ডিয়ান রাজাদেরকে শিকলবদ্ধ অবস্থায় পাবে ”। আল্লাহ্ সেই যোদ্ধাদের ক্ষমা করে দিবেন। যখন তারা সিরিয়ার দিকে অগ্রসর হবে, তখন তারা ঈসা ইবনে মারিয়ামকে (আঃ) সেখানে পাবে”।
রেফারেন্সঃ
নাঈম বিন হাম্মাদ এই হাদিসটি ‘আল ফিতান’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন