Islam Entire

Main Slogan:

হে ইমানদারগণ! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ কর (সূরা বাকারা : ২০৮)

বৃহস্পতিবার, ৭ জুলাই, ২০২২

আরাফার দিনের রোজা’ কবে রাখব?

- মৌলানা আবু রায়হান বিন মুস্তাক


জিলহজের প্রথম দশ দিন অতি বরকতপূর্ণ। আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে মুমিনদের জন্য বিশেষ উপহার।
এই দশ দিনের আমল ও ইবাদত আল্লাহর কাছে বছরের অন্যান্য দিনের তুলনায় বেশি প্রিয়। কোরআন ও হাদিসের অসংখ্য বর্ণনায় জিলহজের দশ দিনের আমল-ইবাদতের ফজিলত বর্ণিত হয়েছে।
এই দশ দিনের পুরো সময়টাই তো আমলের। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম সব ধরনের আমলই এ সময়ে করতেন। রোজা রাখাও এ সময়ে তাদের গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল।
হাদিসে ইয়াওমে আরাফা বা ‘আরাফার দিনের রোজা’ রাখার ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব ও ফজিলত বর্ণিত হয়েছে।
আবু কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ‘আরাফার’ দিনে সিয়াম পালনের ফজিলতের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন- আমি মনে করি, আরাফার দিনে সিয়াম পালনে আল্লাহতায়ালা বিগত বছরের গুনাহ ও আগামী বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন। (সহীহ মুসলিম: হাদিস ১১৬২)
হযরত হাফসা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত- রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিলহজের নবম দিন সিয়াম পালন করতেন এবং সিয়াম পালন করতেন আশুরার দিনে৷ (সুনানে আবু দাউদ, নাসায়ী, মুসনাদে আহমাদ)
বিখ্যাত হাদিস বিশারদ আল্লামা মুবারকপুরী রহ. বলেছেন- হাফসা (রা.)-এর এ বর্ণনায় নবীজি জিলহজের নবম দিন রোজা রাখতেন; এটা সুনির্দিষ্টভাবে বলা হয়েছে এবং এই দিনটিই ‘ইয়াওমে আরাফা’ বা আরাফার দিন। (মিন্নাতুল মুনইম শরহু সহীহ মুসলিম ২/২১১)
উপরোক্ত উভয় হাদিসের বর্ণনায় বিষয়টি স্পষ্ট যে, ‘ইয়াওমে আরাফা’ বা আরাফার দিন হল সব জনপদের নিজ নিজ হিজরি তারিখ হিসেবে ৯ জিলহজ, ৮ জিলহজ নয়! কারণ এই রোজা আরাফা বা আরাফায় অবস্থান সংক্রান্ত আমল নয়।
বরং ৯ তারিখের বিশেষ আমল। কাজেই আমাদের দেশের হিসেবে ৮ জিলহজ সৌদি আরবে হাজীদের আরাফায় অবস্থান হলেও আমরা রোজা রাখব ৯ তারিখেই।
দুই.
‘ইয়াওমে আরাফা’ হচ্ছে ওই তারিখের (৯ জিলহজের) পারিভাষিক নাম।
যেহেতু হজের প্রধান রোকন ‘আরাফায় অবস্থান’ তারিখ হিসাবে ৯ জিলহজে আদায় করা হয়, তাই এ তারিখেরই নাম পড়ে গেছে ‘ইয়াওমে আরাফা’ বা আরাফার দিন।
এ কারণে যেসব আমল আরাফা বা আরাফায় অবস্থানের সঙ্গে বিশেষভাবে সংশ্লিষ্ট নয়; বরং জিলহজের ৯ তারিখের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, সেগুলোকেও ‘ইয়াওমে আরাফা’ বা আরাফার দিনের আমল হিসেবে উল্লেখ করা হয়ে থাকে।
তাই ৯ জিলহজের রোজাকে আরাফার দিনের রোজা হিসেবে অভিহিত করা হয়।
তিন.
ইয়াওমে আরাফা বা আরাফার দিন যে ৯ জিলহজ এর আরেকটি দৃষ্টান্ত হলো- ‘তাকবিরে তাশরিক’ সংক্রান্ত হাদিস।
এটি আরাফা বা হাজীদের আরাফায় অবস্থানের সঙ্গে সম্পৃক্ত কোনো বিশেষ আমল নয়। এটি শুরু হয় ৯ জিলহজ ফজর থেকে।
অথচ যে দলিল দ্বারা ৯ তারিখ থেকে তাকবিরে তাশরিক শুরু হওয়া প্রমাণিত তাতেও ‘ইয়াওমে আরাফা’ আরাফার দিন শব্দই আছে।
আলী রাদিআল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন- নবীজি ইয়াওমে আরাফা বা আরাফার দিন (৯ জিলহজ) ফজরের পর থেকে ১৩ জিলহজ আসর পর্যন্ত তাকবিরে তাশরিক পাঠ করতেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস: ৫৬৭৭)
এখানেও ‘ইয়াওমে আরাফা’ অর্থ ৯ জিলহজ। আর ৮ জিলহজ আরাফার দিনের রোজার প্রবক্তাদের কাছেও তাকবিরে তাশরিক ৯ জিলহজ থেকে শুরু হওয়ার বিষয়টি প্রমাণিত এবং এর স্বপক্ষে দলিলও উপরোক্ত এই হাদিস!
চার.
গোটা মুসলিম উম্মাহর ইজমা আছে যে, ইয়াওমে আরাফার পরের দিনটিই ইয়াওমুন নাহর। হাদিসেও এ ধারাবাহিকতা প্রমাণিত ‌রয়েছে।
এটি প্রমাণ করে, ‘ইয়াওমে আরাফা’ একটি তারিখের নাম। আর তা হচ্ছে ৯ জিলহজ আর ‘ইয়াওমুন নাহর’ও একটি তারিখের নাম। আর তা হচ্ছে ১০ জিলহজ ঈদের দিন।
কারণ আমাদের দেশের হিসেবে ৮ জিলহজকে ইয়াওমে আরাফা মেনে নিলে ইয়াওমে আরাফা ও ইয়াওমুন নাহরের মাঝে আরেকটি দিন স্বীকার করে নেয়া জরুরি। অথচ এটা ইজমার সরাসরি বিরোধী।
সুতরাং বোঝা গেল, এ জাতীয় বিচ্ছিন্ন চিন্তা ও বক্তব্য আরো কিছু ক্ষেত্রেও বিচ্ছিন্নতাকে অনিবার্য করে তুলবে।
কাজেই আমরা বিচ্ছিন্ন কথাকে না মেনে উম্মাহর ঐকমত্য সিদ্ধান্ত মেনে আগামী শনিবার ৯ জিলহজের এই ফজিলত পূর্ণ রোজা রাখার নিয়ত করি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে বোঝার এবং আমলের তাওফিক দান করুন আমিন।

শুক্রবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

আধ্যাত্মিকতা বিষয়ক বিশেষ ব্লগ- ব্রাউজ এবং শেয়ার করুন প্লীজ Spiritual A2Z

আধ্যাত্মিকতা দ্বীন ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই দ্বীনে আধ্যাত্মিকতা ও জাগতিকতার সুষম সমন্বয় রয়েছে। আধ্যাত্মিকতায় রয়েছে এই দ্বীনের বিশাল শক্তিমত্ত্বা। এই সম্পর্ক কিছু জানার জন্য এই ব্লগ ব্রাউজ করুন: 

https://spiritualaz.blogspot.com



মঙ্গলবার, ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

ইসলামে বেকারত্ব দূর করার উপায়

আমিনুল ইসলাম

বেকার সমস্যা বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়। বেকারত্বের হার বাংলাদেশে ক্রমে বেড়েই চলছে। এর মধ্যে যোগ হলো করোনা মহামারীর কারণে সৃষ্ট নতুন বেকারত্ব। করোনাভাইরাস বিশ্বব্যাপী আর্থিক সঙ্কট সৃষ্টি করেছে। চাকরিজীবী, শ্রমজীবীসহ প্রায় সব পেশার বহু মানুষ এতে কর্মহারা হয়েছে। তাই এই সঙ্কট থেকে উত্তরণের উপায় হিসেবে ইসলামের দৃষ্টিতে আমরা যা করতে পারি, তার একটা ধারণা এখানে আলোকপাত করা হলো:

এক. হতাশ না হয়ে মনোবল রাখা। দৃঢ় বিশ্বাস রাখা যে, এই সঙ্কট স্থায়ী নয়, সাময়িক। অচিরেই তা চলে যাবে, শিগগিরই আমরা সচ্ছলতা ফিরে পাবো ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ কুরআনে ইরশাদ করেছেন, কষ্টের সাথেই তো স্বস্তি আছে। অবশ্য কষ্টের সাথেই স্বস্তি আছে। (সূরা ইনশিরাহ-৫, ৬)
সুতরাং হতাশ না হয়ে বিশ্বাস রাখুন; বিপদ দূর হয়ে শান্তি আসবে।

দুই. লাজ না রেখে যেকোনো পেশায় আত্মনিয়োগ করা। ছোট-বড় কোনো পেশাকেই তুচ্ছ বা মর্যাদাহীন জ্ঞান না করে, নিজের যোগ্যতা সুবিধা ও পরিবেশের আলোকে যেকোনো পেশায় আত্মনিয়োগ করতে হবে। কামার, কুমার, ছুতার, জেলে, নাপিত ইত্যাদি কোনো পেশাই ইসলামের দৃষ্টিতে নিন্দনীয় নয়, যদি হালালভাবে হয়। বৈধ পন্থার সব পেশায় মুসলমান আত্মনিয়োগ করতে পারে। এতে অসম্মানের কিছু নেই। কুরআন কারিমে আল্লাহ এরশাদ করেন, সালাত সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর ফজল অনুসন্ধান করো। (সূরা জুমুআ-৯) মুফাসসিরে কেরাম বলেন, এ আয়াতে ‘ফজল’ দ্বারা ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে রিজিক সংগ্রহ করাকে বুঝানো হয়েছে। তাই ছোট-বড় সব হালাল ব্যবসাই সম্মানিত। হোক না তা ফুটপাথে। আরেক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, যখন তোমরা ইহরামমুক্ত হবে তখন শিকার করবে। (সূরা মায়িদা-২) এই আয়াতে শিকার পেশার কথা বলা হয়েছে। এতে বুঝা গেল মাছ শিকার বা জেলে পেশাও সম্মানিত।
হাদিস শরিফে নবীজী সা: এরশাদ করেছেন, হালাল রিজিক উপার্জন করা অপরাপর ফরজের পর একটি ফরজ কাজ। (মু’জামে কাবির-তাবারানি, হাদিস : ৯৯৯৩)
সুতরাং বেকারত্ব দূরীকরণে আমাদের হালাল উপায়ে যেকোনো একটি পেশা গ্রহণ করতে হবে।

তিন. কায়িক শ্রমের প্রতি অনীহা দূর করা। কায়িক শ্রমের প্রতি অনীহা আজকের বেকারত্বের হার বৃদ্ধির অন্যতম একটি কারণ। অভাব-অনটন সত্ত্বেও বর্তমান প্রজন্ম কায়িক বা শারীরিক পরিশ্রম করতে আগ্রহী নয়। পরিশ্রম করে নিজ উদ্যোগে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করতে চায় না। সবাই প্রাতিষ্ঠানিক চাকরির আশায় বেকার বসে থাকে। অথচ আল্লাহ তায়ালা কুরআন কারিমে ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তায়ালা কোনো সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজ অবস্থা নিজে পরিবর্তন করে। (সূরা রা'দ-১১) আরেক আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি কষ্টসহিষ্ণু করে। (সূরা বালাদ-৪)
এছাড়া বর্তমানে আমাদের শারীরিক সুস্থতা রক্ষার জন্যও কায়িক পরিশ্রম বা কাজ করা জরুরি।
অতএব প্রত্যেকটি বেকার লোক যদি প্রাতিষ্ঠানিক চাকরির আশায় বসে না থেকে, নিজের যোগ্যতার আলোকে ছোট বড় যেকোনো কাজে লেগে যায় এবং পরিশ্রম করে তাহলে বেকারত্ব দূর হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।

চার. নতুন নতুন আইডিয়া গ্রহণ করা। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতির ফলে পুরনো কাজগুলোই নতুনরূপে করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তাই এখন প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে হালালভাবে টাকা ইনকামের পথ সুগম হয়েছে। যেমন পরিবহন সেক্টরে উবার-পাঠাও, মার্কেটিং সেক্টরে অনলাইন শপ ইত্যাদি পেশাগুলো জাস্ট আইডিয়ার প্রয়োগ।
নতুন আইডিয়া প্রয়োগ করার ধারণা আমরা হাদিস থেকেই পাই। যেমন এক হাদিসে এসেছেÑ একবার নবীজী সা: সাহাবিদের মজলিসে বসা ছিলেন। এমন সময় একজন গরিব আনসার সাহাবি সেখানে হাজির হলেন। আনসারি তার কাছে কিছু ভিক্ষা চাইলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমার ঘরে কি কিছুই নেই?’ আনসারি বললেন, ‘শুধু নিম্নমানের একটা কম্বল আর একটা কাঠের পেয়ালা আছে। কম্বলের একদিক আমরা বিছাই এবং একদিক গায়ে জড়াই। আর কাঠের পেয়ালাটা পানি পান করার কাজে ব্যবহার করি।’
‘যাও, সে দুটি আমার কাছে আনো।’ প্রিয়নবী সা: সাহাবিকে হুকুম দিলেন। কিছুক্ষণের মধ্যে আনসারি সাহাবি কম্বল ও কাঠের পেয়ালা এনে প্রিয়নবীর সামনে রাখলেন। প্রিয়নবী সা: সে দুটি হাতে তুলে নিলেন। তিনি জিনিস দুটি নিলাম করলেন। ‘কে কিনবে এই জিনিস দুটি?’ তিনি আওয়াজ দিলেন। ‘আমি, হে আল্লাহর রাসূল! আমি এ দুটি জিনিস এক দিরহামে কিনে নিতে চাই।’ বললেন একজন সাহাবি। ‘কে এক দিরহামের বেশি দাম দিতে পারে।’ দু’বার, তিনবার প্রিয়নবী সা: আওয়াজ দিতে থাকলেন। ‘আমি দুই দিরহামে নিতে পারি।’ আরেকজন সাহাবি বলে উঠলেন।
তিনি দুই দিরহামের বিনিময়ে কম্বল ও পেয়ালাটি বিক্রি করে দিলেন। দিরহাম দুটি আনসারিকে দিয়ে বললেন, যাও, এক দিরহাম দিয়ে খাবার কিনে ঘরে নিয়ে যাও। আর অন্য দিরহামটি দিয়ে একটি কুঠার কিনে নিয়ে এসো। প্রিয় নবীর কথামতো আনসারি সাহাবি বাজারে গেলেন; এক দিরহাম দিয়ে খাবার কিনে ঘরে নিয়ে গেলেন। আরেক দিরহাম দিয়ে একটি লোহার কুঠার কিনে নিয়ে নবীর কাছে এলেন। প্রিয়নবী নিজের হাতে কুঠারটিতে কাঠের বাঁট লাগিয়ে দিলেন। ‘যাও, বনে যাও, কাঠ কাটতে থাকো এবং বাজারে এনে বিক্রি করতে থাকো।’ প্রিয়নবী সা: আনসারিকে হুকুম দিতে থাকলেন। ‘তবে হ্যাঁ, মনে রেখো আগামী ১৫ দিন তোমাকে যেন আর এদিকে না দেখি।’
আনসারি সাহাবি কুঠারটি হাতে নিয়ে বনের পথে চলে গেলেন। এরপর থেকে তাকে আর কারোর কাছে হাত পাততে দেখা যায়নি। বন থেকে কাঠ কেটে এনে বাজারে বিক্রি করতেন এবং তার বিনিময়ে যা পেতেন তা দিয়ে বেশ ভালোভাবে তার সংসার চলে যেত। এমনকি সংসারের খরচ চলার পরও প্রতিদিন কিছু পয়সা থাকত। ১৫ দিন পর যখন তিনি প্রিয়নবীর কাছে এলেন তখন তিনি বাড়তি ১০ দিরহামের মালিক। (সুনানে আবু দাউদ হাদিস ২১৯৮)
তাই বেকার বসে না থেকে, গবেষণা করে নতুন আইডিয়ার প্রয়োগ করে স্মার্টভাবে অনলাইন বিজনেসের মাধ্যমে বেকারত্ব দূর করে স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। আমীন।

লেখক : মুহাদ্দিস, জামেয়া রাহমানিয়া দারুল ইসলাম, দক্ষিণ কাজলা, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা

Please browse this link: 



মঙ্গলবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

মুসলিম ফ্যাশন: বছরে হাজার কোটি টাকার বাজার


 বেশ ক'বছর ধরে বিশ্বব্যাপী আলোচনা চলছে মুসলিম ফ্যাশন নিয়ে। এশিয়া ও আফ্রিকার মুসলিম মেয়েদের কিছুটা রক্ষণশীল পোশাক ক্রমে ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বব্যাপী।

এমনকি পশ্চিমের চোখ ধাঁধানো বিভিন্ন ফ্যাশন উইকেও মুসলমান মেয়েদের পোশাকের সেসব নকশা পেয়েছে কদর।

বলা হচ্ছে, মুসলমান মেয়েদের ফ্যাশনেবল কাপড়চোপড় আর অনুষঙ্গের বিশাল চাহিদা তৈরি হয়েছে বিশ্বব্যাপী, যা এতদিন হয়ত নজরেই আনেননি ডিজাইনার বা ব্যবসায়ীরা। একটা সময় পর্যন্ত ইসলামী অনুশাসন মেনে, একটু রক্ষণশীলভাবে কাপড়চোপড় পড়ার সঙ্গে ফ্যাশনের রীতিমত বৈরিতা ছিল বলে ধারণা করা হত। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেখা গেছে, মুসলমান মেয়েদের ফ্যাশনেবল পোশাক আর আনুষঙ্গিকের পেছনে এখন বছরে খরচ হয় হাজার কোটি টাকা।

বহুজাতিক বিজ্ঞাপনী সংস্থা ওগিলভির কর্মকর্তা শেলিনা জানমোহামেদ বলছেন, বিশ্বব্যাপী মুসলমান ভোক্তা ও ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতা বছর বছর বাড়ছে। এ খাতে এখন মানুষ বছরে দুইশো কোটি মার্কিন ডলার থেকে পাঁচশো কোটি ডলার পর্যন্ত খরচ করছে। টাকার অংকে যা কয়েক হাজার কোটি টাকায় দাঁড়াচ্ছে। কিন্তু মুসলিম ফ্যাশন বলতে আসলে ঠিক কি বোঝায়? সাধারণত কাপড়চোপড়ের মধ্যে শরীর ঢেকে একটু রক্ষণশীলভাবে পড়া জামা কাপড়, এবং মাথার চুল ঢেকে রাখার জন্য হিজাবকে ধরা হয়। এর মধ্যে ফুলস্লিভ অর্থাৎ লম্বা হাত-ওয়ালা এবং ঝুলেও একটু লম্বা গোছের জামা বা শার্ট রয়েছে।

শেলিনা বলছেন, এই বিশেষ ধরণের চাহিদার জন্য অনেকেই সাধারণ বাজার চলতি দোকান থেকে পছন্দসই পোশাক কিনতে পারেন না। বিশ্বের নামী সব ব্রান্ডগুলো এখন মুসলমান ক্রেতা আকৃষ্ট করতে নেমে পড়েছেন নতুন নতুন ধরণের আইডিয়া নিয়ে।  এতে করে সাধারণ মুসলমান নারীরা মনে করছেন প্রথমবারের মত ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে মুসলমান মেয়েদের বিবেচনায় আনা হয়েছে। একে সমাজের অংশ হয়ে ওঠার একটি প্রতীক হিসেবেও দেখছেন অনেকে।

Source: https://www.bbc.com/bengali/

ইসলামিক পোশাক?-Mizanur Rahman Azhari

রবিবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০২২

“আল্লাহর দ্বীনের হেফাজত কর, আল্লাহ তোমাকে হেফাজত করবেন”

রাছুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: “ইহ্ফাজিল্লাহা ইয়াহ্ফাজুকা” অর্থাৎ “আল্লাহর দ্বীনের হেফাজত কর, আল্লাহ তোমাকে হেফাজত করবেন” (মুসনাদে আহমদ, তিরমিযী, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বর্ণিত সহীহ হাদীস)।  আল্লাহর দ্বীন তথা দ্বীন ইসলামের হেফাজতের দায়িত্ব প্রত্যেক মুসলমানের। এক্ষেত্রে হকপন্থী আলেম-ওলামা ও ইসলামী সংগঠনের অগ্রগামী ও নেতৃত্বশীল ভূমিকা পালন করা উচিত। যদি মুসলমান এই দায়িত্ব পালন না করে তাহলে তারা আল্লাহ’র হেফাজত থেকে বঞ্চিত হবে। ফলে মুসলমান সমাজে পাপাচারের বিস্তৃতি, অপরাধী শক্তির প্রাধাণ্য, অন্য জাতির আধিপত্য প্রতিষ্ঠা - পরাধীনতা, নির্যাতন ইত্যাদি ভয়াবহ আযাব-গযবের আবির্ভাব ঘটবে। 

মঙ্গলবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০২২

ইসলামের দৃষ্টিতে সঞ্চয়


রাসুল (সা.)-এর সুন্নত অনুযায়ী যেভাবে সঞ্চয় করবেন

- মুফতি মুহাম্মাদ শোয়াইব

সম্পদ মানুষের জীবনের অনিবার্য প্রয়োজন। দ্বীনের ওপর চলার জন্য পার্থিব জীবনে অর্থেরও প্রয়োজন আছে। এই প্রয়োজন শুধু আমাদের এখনকার প্রাসঙ্গিকতা নয়; বরং আদিকাল থেকেই মানুষ উপার্জননির্ভর জীবনযাপন করছে।

আত্মমর্যাদার সঙ্গে সামাজিক জীবনযাপনের জন্য অর্থসম্পদকে উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। সৎ ও আদর্শবান মানুষের জন্য কপর্দকশূন্য জীবনযাপন করা ও জীবন-জীবিকার অর্থনৈতিক ভার অন্যের ঘাড়ে চড়ানো বা অন্যের ওপর নির্ভরশীল হওয়া সমীচীন নয়। সন্তানদের ভিখারিবেশে রেখে যাওয়াও মান-মর্যাদার পরিপন্থী।

ইসলাম মানুষের এই প্রয়োজন ও আত্মমর্যাদাকে উপেক্ষা করেনি। হাদিসের ভাষ্য দেখুন, সাদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বিদায় হজের সময় সেই অসুখে আল্লাহর রাসুল (সা.) আমাকে দেখতে এলেন, যে অসুখে আমি মৃত্যুর মুখে এসে দাঁড়াই। আমি তখন বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমার যন্ত্রণার অবস্থা আপনি দেখেছেন। আর আমি একজন সম্পদশালী মানুষ। আমার একমাত্র মেয়ে ছাড়া কোনো ওয়ারিশ নেই। আমি কি আমার দুই-তৃতীয়াংশ সম্পদ দান করে দেব? রাসুল (সা.) বললেন, না। আমি বললাম, তাহলে কি অর্ধেক সম্পদ দান করে দেব? বললেন, না। এক-তৃতীয়াংশ (দান করে দাও); আর এক-তৃতীয়াংশ অনেক। আর তুমি তোমার ওয়ারিশদের অসহায় এবং মানুষের দুয়ারে ভিক্ষা চেয়ে বেড়াচ্ছে— এ অবস্থায় রেখে যাওয়ার চেয়ে ধনী অবস্থায় রেখে যাওয়া ভালো। (মুসলিম, হাদিস : ১৬২৮; বুখারি, হাদিস : ১২৯৫)

হাদিসটিকে আমরা এ বিষয়ে মূলনীতির মর্যাদা দিতে পারি। এ হাদিসের শিক্ষা হলো, সম্পদ সঞ্চয় করা অবৈধ নয়। সন্তানের জন্য সঞ্চয় করে রেখে যাওয়াকে ইসলামও উৎসাহিত করেছে। উদারপ্রাণে সবকিছু বিলিয়ে দেওয়া, যাতে পরক্ষণেই অন্যের কাছে হাত পাততে হয়— তা কাম্য নয়।

রাসুল (সা.)-ও সম্পদ সঞ্চয় করেছেন বলে আমরা দেখতে পাই। উমর (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে আছে, রাসুল (সা.) বনু নজিরের খেজুর গাছ বিক্রি করে দিতেন, আর পরিবারের জন্য এক বছরের খাদ্য রেখে দিতেন। (বুখারি, হাদিস : ৫৩৫৭)

এ সম্পর্কে আরেকটি হাদিস উল্লেখ করা যেতে পারে। লাকিত ইবনে সাবুরা (রা.) বলেন, আমি বনু মুন্তাফিকের প্রতিনিধি কিংবা প্রতিনিধি দলের সদস্য হয়ে রাসুল (সা.)- এর খেদমতে গিয়েছিলাম। যখন রাসুল (সা.) কাছে এলাম তাকে তখন ঘরে পেলাম না। ঘরে পেলাম উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.)-কে। তিনি আমাদের জন্য গোশত ও ছাতুর মিশ্রণে ‘খাজিরা’ নামক খাবার তৈরির আদেশ দিলেন। সেই খাবার রান্না হলো এবং আমাদের সামনে পাত্রে করে তা পরিবেশিত হলো। তারপর রাসুল (সা.) আগমন করলেন। আর বললেন, তোমরা খাবার কিছু কি পেয়েছ? যা কিছুর আদেশ করা হয়েছে? আমরা বললাম, হ্যাঁ, আল্লাহর রাসুল! আমরা পেয়েছি।

আমরা রাসুল (সা.)-এর দরবারে বসে আছি। এরই মধ্যে রাখাল তার ছাগলগুলো ছাগলশালার দিকে তাড়িয়ে নিয়ে এলো। আর তার সঙ্গে ছিল একটি ছাগলছানা ম্যাঁ ম্যাঁ করছিল। রাসুল (সা.) রাখালকে ডেকে বললেন, ওহে কী বাচ্চা দিলো? বলল, মেয়ে ছানা। নবীজি (সা.) বললেন, এর জায়গায় আমাদের জন্য একটি ছাগল জবাই করে ফেল। তারপর আমাকে বললেন, তুমি মনে করো না যে— আমরা তোমার জন্য ছাগল জবাই করেছি। আসলে আমাদের ১০০টি ছাগল রয়েছে। আমরা এর সংখ্যা আর বাড়াতে চাই না। তাই আমাদের রাখাল যখন একটি বাচ্চার খবর দেয়, আমরা সেটির জায়গায় একটি ছাগল জবাই করে ফেলি। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ১৪২)

হাদিসটির মাধ্যমে জানা গেল, রাসুল (সা.) পরিবারের জীবিকার জন্য ১০০টি ছাগল পালতেন। সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একজন রাখালও নির্দিষ্ট করা ছিল। সেকালের জীবনমানের হিসেবে হয়ত এতটুকুই যথেষ্ট ছিল। কাজেই আজকের দিনের জীবনমানের বিবেচনায় উপার্জন ও সঞ্চয় করা দোষণীয় কিছু নয়। তবে স্বতঃসিদ্ধ কথা হলো, ইসলাম সম্পদের পাহাড় গড়তে অনুৎসাহিত করেছে। যা কামাই করব তা শুধুই সঞ্চয় করে রেখে দেব আর সম্পদের পাহাড় নির্মাণ করব— এটা ইসলামের দৃষ্টিতে চরম অপছন্দনীয়। কারণ, ইসলামের দৃষ্টিতে দুনিয়ার সঞ্চয়ের চেয়ে আখেরাতের সঞ্চয়টা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই ইসলাম অকৃপণ হাতে খরচ করতে উৎসাহিত করেছে।

নবী-পরিবারের মহান মুখপাত্র উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.)-এর ব্ক্তব্যে পাওয়া যায়, নবী-জীবনের জীবনযাত্রার মান ও জীবিকার রূপ। আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন, অথচ একই দিনে জায়তুনের তেল দিয়ে পেট ভরে দুইবার রুটি খেয়ে যাননি। (মুসলিম, হাদিস : ২৯৭৪)।

নবীজির ক্ষুধা ও অর্থদৈন্যের কথা ফুটে উঠেছে ওমর ফারুক (রা.)-এর বাণীতে। তিনি বলেন, আমি হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে দেখেছি— ক্ষুধায় বাঁকা হয়ে পুরো দিন পার করে দিচ্ছেন। উদরপূর্ণ করার মতো এক টুকরো খেজুরও তার ঘরে ছিল না।

লেখক : গবেষক, এমিরেটস সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ অ্যান্ড রিসার্চ (ইসিএসএসআর)


ইসলামী অর্থনীতিতে সঞ্চয়

যুবায়ের আহমাদ

ইসলাম মানুষকে কথাবার্তা, হাঁটা-চলায় মধ্যম পন্থার নির্দেশ দিয়েছে। পাশাপাশি ব্যয়ের ক্ষেত্রেও মধ্যপন্থা অবলম্বনের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছে। উপার্জন-চিন্তায় ইবাদত বাদ দেওয়া যেমন নিষিদ্ধ, তেমনি নামাজ সমাপনান্তে উপার্জন-চিন্তা বাদ দিয়ে মসজিদে বসে থাকাও নিষিদ্ধ। সম্পদ খরচের ক্ষেত্রে কৃপণ হওয়া যেমন নিষিদ্ধ, তেমনি প্রাচুর্যের সময় অপচয়-অপব্যয় করে সম্পদ খরচ করাও নিষিদ্ধ।


পবিত্র কোরআনুল কারিমে অপচয় ত্যাগের কঠোর নির্দেশ জারি করে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আহার এবং পান করো, আর অপচয় কোরো না; আল্লাহ অপচয়কারীদের ভালোবাসেন না। ’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৩২) অর্থোপার্জন, খরচ ও সঞ্চয়ের ব্যাপারেও মধ্যম পন্থার নির্দেশ ইসলামের। মনে রাখতে হবে, সঞ্চয় করতে গিয়ে যেন কৃপণের তালিকায় নাম না উঠে যায়। অনেকে মনে করেন, জন্মদিন, মৃত্যুদিবস, বিবাহবার্ষিকী, ‘ভালোবাসা’ দিবসের মতো বিভিন্ন দিবস-বার্ষিকীতে প্রয়োজন-অপ্রয়োজনে নির্বিচারে ধারদেনা করে হলেও টাকা উড়াতে পারাই ‘উদারতা’। ক্রমবর্ধমান এসব খরচের জোগান দিতে আনুষ্ঠানিকতায় তাল মেলাতে কালো টাকার পেছনে দৌড়ানো, চোরা পথ আবিষ্কার করাও যেন দোষের নয়! পক্ষান্তরে যিনি হালাল-হারাম, পাপ-পুণ্য, প্রয়োজন-অপ্রয়োজন বিবেচনা করে খরচ করেন এবং অপব্যয় ও অপচয় থেকে বিরত থাকেন, তাঁকে মনে করা হয় ‘কৃপণ’। আসলে স্ত্রী, সন্তানসন্ততির ভরণপোষণ, পিতা-মাতার সব চাহিদা পূরণের মতো আল্লাহ নির্দেশিত খাতে খরচ করতে অবহেলা করাই কৃপণতা। তাই হালাল-হারামের বিধিনিষেধ মেনে খরচকে সীমাবদ্ধ করে দিতে হবে। প্রাচুর্যের সময় খরচের উৎসবে মেতে না উঠে হারাম খরচ সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে মিতব্যয়িতার পথ অবলম্বন করে উদ্বৃত্ত অর্থ ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করা উচিত। যেন পরবর্তী সময়ে নিজের প্রয়োজনে অন্যের কাছে হাত পাতার মতো পরিস্থিতির মুখোমুখি না হতে হয়। পবিত্র কোরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘তুমি (কৃপণতাবশে) নিজের হাত ঘাড়ের সঙ্গে বেঁধে রেখে একেবারে ব্যয়কুণ্ঠ হয়ো না। আবার (অপব্যয়ী হয়ে) একেবারে মুক্তহস্তও হয়ো না, তাহলে তুমি তিরস্কৃত ও নিঃস্ব হয়ে বসে থাকবে। ’ (সুরা : বনি ইসরাইল, আয়াত : ২৯)

সন্তানদের জন্য কিছু সঞ্চয় করাও ইসলামের শিক্ষা। সন্তানদের কারো মুখাপেক্ষী রেখে যাওয়া নবীজি (সা.) কখনো পছন্দ করেননি। রাসুলে কারিম (সা.) বলেন, ‘তুমি তোমার উত্তরাধিকারীদের মানুষের করুণার মুখাপেক্ষী রেখে যাওয়ার চেয়ে তাদের সচ্ছল রেখে যাওয়াই উত্তম। ’ (বুখারি : ১/৪৩৫; মুসলিম : ৩/১২৫১)

ইসলাম সঞ্চয়কে কতটুকু গুরুত্ব দিয়েছে, তা আরো স্পষ্ট হয় রাসুলে কারিম (সা.)-এর এক হাদিস থেকে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘উত্তম দান তা-ই, যা নিজ অভাবমুক্ততা রক্ষার সঙ্গে হয়। ’ (বুখারি : ২/১১২) কারণ যদি সমুদয় সম্পত্তি দান করে দেওয়া হয়, তাহলে কোনো প্রয়োজন দেখা দিলে তা মেটাবে কোত্থেকে?

কৃপণ না হয়ে মিতব্যয়ী হয়ে সঞ্চয় করলে হাজার কোটি টাকার মালিক হতেও ইসলাম বাধা দেবে না। মহান ইমাম আবু হানিফা (রহ.) ধনী ছিলেন। ইরান, ইরাক, সিরিয়া ও হেজাজজুড়ে বিস্তৃত এলাকায় রেশমি কাপড়ের বিশাল ব্যবসা ছিল তাঁর। তাই তো তিনি রাষ্ট্রীয় হাদিয়া-তোহফার পরোয়া না করে নিজ উপার্জনে জীবিকা নির্বাহ, জ্ঞানের সেবা এবং গরিব শিক্ষার্থীদের যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করতেন। সঞ্চিত অর্থ থাকলেই তো অর্থনির্ভর সওয়াবের কাজগুলো করা যাবে। রোজাদারকে ইফতার করানো যাবে। হাদিয়া আদান-প্রদান করা যাবে। শরিক হওয়া যাবে জনকল্যাণমূলক কাজে। অর্থ ব্যয় করে সদকায়ে জারিয়ার অফুরন্ত সাওয়াব হাসিল করা যাবে। আবার উদ্বৃত্ত অর্থ যখন নিসাব পরিমাণ হবে এবং তা বর্ষপূর্তি হবে, তখন জাকাতের মাধ্যমে সে সম্পদের ৪০ ভাগের এক ভাগ গরিবদের মধ্যে দান করে লাভ করবে। অর্থ সঞ্চয় করলেই তো বাইতুল্লাহর পবিত্র চত্বরে প্রেমের মিছিলে শরিক হয়ে হজ ও ওমরার মাধ্যমে গুনাহ মাফ করিয়ে নেওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করা যাবে।

 লেখক : খতিব, বাইতুশ শফিক মসজিদ

বোর্ড বাজার (আ. গনি রোড), গাজীপুর

বুধবার, ২২ জুলাই, ২০২০

জীবন্ত নামাজ । অধ্যাপক গোলাম আযম । Jibonto Namaj । Professor Golam Azam ।

বুধবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৮

গণতন্ত্র, সহিংসতা ও ইসলামের দৃষ্টিতে আমাদের করণীয়

গণতন্ত্র, সহিংসতা ও ইসলামের দৃষ্টিতে আমাদের করণীয়
শাহাদাতুর রহমান সোহেল
Written Date: 1/7/14 









    মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা সম্প্রতি খালেদা জিয়ার সাথে এক সাক্ষাতে বলেন, ‘গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সাথে সহিংসতা সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।’ এটা সঠিক নয়। বর্তমান বিশ্বে নেলসন ম্যান্ডেলাকে গণতন্ত্রের শ্রেষ্ঠ পুরুষ হিসাবে গণ্য করা হচ্ছে। আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস (এএনসি)-এর নেতা, বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনের প্রবাদ পুরুষ ও শান্তিতে নোবেল জয়ী নেলসন ম্যান্ডেলা হলেন গণতান্ত্রিক দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিষ্ঠাতা। শ্বেতাঙ্গ শাসকদের কঠোর দমননীতিতে যখন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার শান্তিপূর্ণ সংগ্রাম বাধাগ্রস্ত হয় তখন নেলসন ম্যান্ডেলা সশস্ত্র অন্তর্ঘাতের পদ্ধতি গ্রহণ করেন। তিনি আত্মগোপনে থেকে নানা সময় নানা ছদ্মবেশ ধারণ করে তাঁর সংগ্রাম পরিচালনা করেন। পরে তিনি গ্রেফতার হন এবং শেষ পর্যন্ত তাঁর সংগ্রাম বিজয়ী হয়। তিনি প্রতিষ্ঠা করেন গণতান্ত্রিক দক্ষিণ আফ্রিকা। আরেকটি দৃষ্টান্ত হল, আধুনিক গণতন্ত্রের অন্যতম উৎপত্তিস্থল বৃটেনে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায়ও ভূমিকা রাখে সশস্ত্র যুদ্ধ। ওলিভার ক্রমওয়েল ১৬৪৬ সালের ১৪ জুন সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে রাজা প্রথম চার্লসকে পরাজিত করেন এবং পরে মৃত্যুদন্ড দেন। আর বৃটেনে প্রতিষ্ঠা করেন প্রথম সাধারণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। তাঁর এই প্রচেষ্টা বৃটেনে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কাজেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনার উক্ত কথা একদিক থেকে ভুলই বলা যায়। প্রয়োজনে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সহিংসতা অনিবার্য পদক্ষেপ হয়ে উঠতে পারে। আমরা তন্ত্র-মন্ত্র বুঝি না, আমরা বুঝি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে, জুলুমের অবসান ঘটাতে হবে, অবিচার বিদায় করতে হবে, দেশের স্বাধীনতা রক্ষা করতে হবে, ইসলামের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরী করতে হবে, সর্বোপরি ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এই জন্য প্রয়োজনে ন্যায়সংগত যেকোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। তবে সহিংসতা কারো কাম্য হওয়া উচিত নয়। রাছূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন: “লা তামান্না লি কায়াল আদুয়্যি, সালুল্লাহাল আফিয়াতা, ফায়িজা লাকিতুমুহুম ফাছবির। ওয়ালামু আন্নাল জান্নাতা তাহতা জিলালিছ ছুয়ুফ” অর্থাৎ “শত্রুতা কামনা করো না, আল্লাহ্’র কাছে শান্তি-নিরাপত্তা প্রার্থনা করো, তারপরও যদি যুদ্ধের সম্মুখিন হয়ে যাও তাহলে তাতে ধৈর্য-দৃঢ়তা অবলম্বন করো। জেনে রাখো, তরবারীর ছায়াতলেই বেহেস্ত” (সহীহ বুখারী, কিতাবুল জিহাদ)। মহান আল্লাহ তা’লা বাংলাদেশের সকল ইসলাম ও দেশের স্বাধীনতাকামী শক্তিকে সঠিক কর্ম-কৌশল গ্রহণের তৌফিক দান করুন এবং ঐ লক্ষ্যে পরিচালিত সকল সংগ্রামকে পূর্ণ সাফল্য দান করুন, আমীন।



রবিবার, ২৬ জুন, ২০১৬

ব ই প রি চি তি ­ তাজ্ওয়ীদসহ শব্দার্থে আল্ কুরআনুল কারীম

ব ই প রি চি তি ­
তাজ্ওয়ীদসহ শব্দার্থে আল্ কুরআনুল কারীম


দুনিয়াতে এ যাবৎ আল্ কুরআনুল কারীম এর অসংখ্য অগণিত অনুবাদ ও তাফসীর বিভিন্ন ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে। ভবিষ্যতে আরও হবে। এগুলোর প্রত্যেকটি ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের উপর লিখিত। এরই ধারাবাহিকতায় বিশিষ্ট আলেম ও বহুগ্রন্থ প্রণেতা মাওলানা মুজিবুর রহমান আযাদ অনবদ্য এক কাজ হাতে নিয়েছেন। যা বাংলা ভাষায় এ পর্যন্ত কেউ করেননি। তিনি আল্ কুরআনুল কারীম এর তিলাওয়াতের তাজ্ওয়ীদ ও শব্দার্থসহ অনুবাদের কঠিন কাজটি হাতে নিয়েছেন। ইতোমধ্যে প্রথম খ-ে প্রথম তিন পারা সন্নিবেশিত হয়েছে। ব্যতিক্রমী যে বৈশিষ্ট্য উল্লেখ রয়েছে তা হলোÑ ১. মাদ্দ, গুন্নাহ, পুর-বারীক, কলকলাসহ তাজওয়ীদের জরুরী নিয়মাবলী রং ও নম্বরের সাহায্যে বুঝানো হয়েছে। ২. যে সকল একাধিক শব্দ একসাথে কিংবা যুক্তভাবে লিখিত তা উচ্চারণের মাধ্যমে প্রতিটি শব্দকে পৃথক পৃথক করে দেখানো হয়েছে। ৩। শব্দের নিচে উচ্চারণ ও আভিধানিক অর্থসহ মর্ম ও ব্যাখ্যা বর্ণনা করা হয়েছে। ৪. আয়াতে ব্যবহৃত সর্বনাম দ্বারা যা উদ্দেশ্য তা নিচে উল্লেখ করা হয়েছে। ৫. প্রতিটি আয়াতের নিচে সরল ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে। ৬. আয়াতের শানে নুযূল ও প্রাসঙ্গিক ঘটনাবলী বর্ণনা করা হয়েছে। ৭. আয়াতের দুর্বোধ্য শব্দ বা বাক্য সহজে বুঝার জন্য বন্ধনী বা টীকার মাধ্যমে মর্ম ও ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।
যারা কুরআন তিলাওয়াতে দুর্বল বা শিখে ভুলে গিয়েছেন, তারা এই কুরআনের মাধ্যমে বিশুদ্ধভাবে শিখতে ও পড়তে পারবেন ইনশা-আল্লাহ। বয়স্ক শিক্ষা কোর্সের শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্য উপযোগী এই কুরআন। মাদরাসার ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য শব্দার্থ, আয়াতের মর্ম ও যমীরের মারজে‘ সম্পর্কে জানতে সহায়ক হবে।
নাম রাখা হয়েছে- তাজ্ওয়ীদসহ শব্দার্থে আল্ কুরআনুল কারীম। স্পষ্ট ও বড় অক্ষরে লিখিত ২২৪ পৃষ্ঠার এই অনুবাদকর্মটি পুরোটাই অফসেট কাগজে চার রঙ্গের মুদ্রিত। দৃষ্টিনন্দন চার রঙ্গা প্রচ্ছদ ও বোর্ড বাঁধাই এ অনুবাদ গ্রন্থটির (১ম খণ্ড ৩পারা) দাম রাখা হয়েছে চারশত টাকা। আলোচিত গ্রন্থটি আশা করি পাঠক মহলে সাড়া জাগাবে।
প্রকাশনায়: দারুল ইবতিকার, ১০৫ ফকিরাপুল (জামে মসজিদ সংলগ্ন পশ্চিমে), মালেক মার্কেট (নিচ তলা ও ২য় তলা), ঢাকা। মোবাইল: ০১৮১৭ ৫৩৮৫৬৭
-মাওলানা নূর মোহাম্মদ ফেনবী

মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৪

যাদের বিরুদ্ধে নবী মুহাম্মদ (সা) আল্লাহর দরবারে উম্মতের বিচারপ্রার্থী হবেন

যাদের বিরুদ্ধে নবী মুহাম্মদ (সা) আল্লাহর দরবারে উম্মতের বিচারপ্রার্থী হবেন

-জুলফিকার আহমদ কিসমতী
সাধারণভাবে মুসলমানদের মধ্যে প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা)-এর ব্যাপারে এই আকাক্সক্ষা সকলের মধ্যেই বিদ্যমান যে, কাল কেয়ামতের দিন বিপদের সময় তিনি আমাদের পাশে এসে দাঁড়াবেন, আমাদের জন্য আল্লাহর দরবারে সুপারিশ করবেন এবং ঐ মহা বিপর্যয়ের মুহূর্তে খুব পিপাসায় ক্লান্ত উম্মতদের তিনি হাউজে কাউসারের সুপেয় শরবত পান করাবেন। কিন্তু পবিত্র কুরআনের সূরা ফোরকানের ৩০-৩২ নম্বর আয়াতে নবী মুহাম্মদ (সা) যে তাঁর উম্মতের একটি শ্রেণীর বিরুদ্ধে আল্লাহর দরবারে মামলা-মোকদ্দমাও দায়ের করবেন, সে কথাটির চর্চা খুব কমই হয়ে থাকে। অথচ এটি এমন একটা ভয়ের কথা যেদিকে আমাদের দৃষ্টি অধিক থাকা দরকার। কারণ আল্লাহর যেই মহাগ্রন্থ কুরআন, সেটির প্রতি আমাদের অপরিসীম ভক্তি শ্রদ্ধা থাকলেও তার মর্মবাণী অনুধাবনের চেষ্টা আমরা খুব কম লোকই করে থাকি। কাজেই একথা জেনে নেয়া সকলের জন্য অপরিহার্য, তাঁর কোন্ চরিত্রের উম্মতের বিরুদ্ধে তিনি মামলা দায়ের করবেন। নবী জীবনের অবিস্মরণীয় ঘটনা মিরাজ রাজনীতে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ ও তাঁর সাথে কথা বলার মতো সৌভাগ্য অর্জনের মুহূর্তেও যিনি তাঁর উম্মতদের কথা ভুলেননি, আজ সেই দয়ালু নবী কেন ও কোন্ ধরনের উম্মতের বিরুদ্ধে রাগান্বিত হয়ে পরম প্রভুর কাছে অভিযোগ জানাবেন ও মামলা দায়ের করবেন, তা জানা সকলের একান্ত প্রয়োজন। মহানবী (সা) ‘কুরআন পরিত্যাগকারীদের বিরুদ্ধে যেই শব্দে আল্লাহর দরবারে মামলা করবেন, সেই দরখাস্তের শব্দাবলিও আল্লাহ আগে ভাগে সতর্ক হবার জন্যে কুরআন মজিদে উল্লেখ করেছেন, যার উদ্ধৃতি হলো এই : ইয়া রাববী! ইয়া কওমিত্তাখাযু হাযাল কুরআনা মাহজুরা অর্থাৎ ‘(সেদিন) রাসূলুল্লাহ বলবেন, ‘হে প্রভু! আমার উম্মতের (এ সমস্ত লোক) আল-কুরআনকে পরিত্যক্ত অবস্থায় রেখে দিয়েছিল’ (সূরা ফুরকান : ৩০-৩২)। ‘কুরআন পরিত্যাগ’ বলতে কি বুঝায় তা কেবল হাদিস এবং নিজের সাধারণ জ্ঞান দিয়ে নয়, খোদ পবিত্র কুরআনের অন্য বক্তব্যের আলোকে কি বুঝায় তাই এখানে উপস্থাপন করছি, যা সকল মুসলমানেরই গভীরভাবে ভেবে দেখা অত্যাবশ্যক।
কুরআন পরিত্যাগের অর্থ হলো : (১) কুরআন শরীফ বিশুদ্ধভাবে পাঠ না করা। কারণ সূরা মুয্যাম্মিল-এ আল্লাহ এ মর্মে নির্দেশ দিয়েছেন যে, ‘ওয়া রাত্তিলিল কুরআনা তারতিলা’- ‘আর তোমরা ‘তারতীল’ সহকারে শুদ্ধ ভাষায় কুরআন পাঠ করবে।’ ইলমে তাজভীদের পরিভাষায় ‘তারতীল’ শব্দের অর্থ হলো আরবি যেই অক্ষর জিহবার যেখান থেকে উচ্চারণ করার নিয়ম আরবি ধ্বনিতত্ত্ব অনুযায়ী সেই অক্ষর সেখান থেকেই উচ্চারণ করে পড়া। যেমন ‘যাল’ অক্ষরের স্থলে ‘জিম’ অক্ষর না পড়া, ‘আইন’ অক্ষরের স্থলে ‘হামযা’ অক্ষর উচ্চারিত না হওয়া ইত্যাদি।
(২) কুরআনের আয়াতের অর্থ না জানা। পবিত্র কুরআন আল্লাহর পক্ষ থেকে জিবরাঈল (আ)-এর মাধ্যমে মহানবী (সা)-এর ওপর বিশ্বমানবের কল্যাণে পথনির্দেশক এবং ন্যায়-অন্যায়, সত্য-অসত্য, বৈধ-অবৈধের মধ্যে পার্থক্যকারী পরিপূর্ণ বিধানগ্রন্থ। এর অর্থ জানার জন্য এ কারণেই আল্লাহর নির্দেশ হলো : ‘হাত্তা তা’লামূ মাতাকুলুন- নামাজে তুমি যেসব আয়াত পড়ে থাকো, তা যেন বুঝো।’ এ আয়াতটি নাযিলের প্রেক্ষাপট অন্য কিছু হলেও কুরআন যে বুঝে পড়তে হবে সে বিষয়ে কোনো ব্যত্যয় নেই। কেউ ভাষার বিভিন্নতা কিংবা তার কোনো অবৈধ খাদ্যের প্রতিক্রিয়ায় সৃষ্ট মাদকতার দরুন সাধারণ জ্ঞানশূন্যতা যে কারণেই হোক, কুরআনের অর্থ অনুধাবনে অপারগ হলে সেই বাধা তার দূর করতে হবে। অর্থাৎ যখন তার অর্থ অনুধাবনের অবস্থা বর্তমান থাকবে তখন কুরআন পাঠের সময় অর্থ বুঝার প্রতি মনোনিবেশ করতে হবে। তেমনি অর্থ বুঝতে ভাষাগত প্রতিবন্ধকতা থাকলে হয়তো কেউ বলতে পারেন, আমি অনারবি, কি করে অর্থ বুঝবো? এই বলে অর্থ অনুধাবন থেকে দূরে থাকতে চাইলে, এই অজুহাত গ্রহণযোগ্য না হবারই কথা। কারণ, তখন যদি আল্লাহ তাআলা পাল্টা প্রশ্ন করে বসেন যে, তুমি প্রাইমারি, হাইস্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটির নির্ধারিত সকল পাঠ্যবই পড়ার সময় পেলে, বহু সময় ব্যয় করে পত্রপত্রিকার খবর পড়ার সময় পেলে, রাত-দিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে বসে জাতীয় ও বিশ্বকাপের বিভিন্ন খেলা দেখার সময় পেলে, আমার কুরআন বুঝার জন্যে তুমি কি পরিমাণ সময় ব্যয় করেছিলে? তখন এ প্রশ্নের জবাব দেয়া কারো পক্ষে বোধ হয় সম্ভব হবে না। আসলে, এটাকে অনন্তকালের সুখ-শান্তির জন্যে জরুরি মনে করা হলে, এটা কোন সমস্যাই নয়। দেশের বড় বড় যোগ্য ইসলামী বিশেষজ্ঞ আলিমগণ স্থানীয় ভাষায় কুরআন মজিদ-এর একাধিক নির্ভরযোগ্য তরজমা রেখে গেছেন, যেগুলো বাজারে অতি সহজেই পাওয়া যায়। অন্তত একটি অনুবাদ সম্বলিত কুরআন শরীফ কিনেও তো নিজেও পরিবারের সকলে আল্লাহর এই নির্দেশের ওপর আমল করা যায়। তারপরও কেউ তা না করলে, কুরআন শুদ্ধ করে না পড়লে যেমন নবীর দায়েরকৃত মামলার আসামি হবে, তেমনি এভাবে অর্থ বোঝার জন্য সময় না দিলেও অভিন্ন কারণে অভিযুক্ত হবারই কথা।
৩. অর্থ বোঝার পর অতঃপর সে অনুযায়ী আমলে সালেহ বা আয়াতের আদেশ-নিষেধ অনুযায়ী আমল করার প্রশ্ন আসে। কারণ আল্লাহ বারবার পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘‘ইন্নাল্লাযিনা আমানু ওয়া আমেলুস সালেহাত’’- যারা সুষ্ঠু আমল করে, তাদের জন্যই জান্নাত। কেউ আমল করলো কিন্তু সেটা সালেহ বা সুষ্ঠু মানের হলো না, তাহলে আয়াতের অর্থ জানলেও আমল না করার এবং আমল করলেও তা সুষ্ঠু ও লক্ষ্য অর্জনের উপযোগী না হলে সেটাও আমল না করার পর্যায় বলে বিবেচিত হবে। যেমনÑ একজন রাজমিস্ত্রি একটি পাকা খুঁটি ইট, সিমেন্ট, বালু ইত্যাদি ব্যয় করে নির্মাণ করলো কিন্তু নির্মাণ উপায়-উপকরণাদি যথার্থ মানের না হওয়াতে সেটি এক মাস পর ধাক্কা দেয়ার সাথে সাথে ভেঙে পড়লো। এক্ষেত্রে বুঝা গেল, আমল বা কাজ হয়েছে সত্য কিন্তু তা ‘সালেহ’ সুষ্ঠু বা লক্ষ্য অর্জনের উপযোগী হয়নি। এটা যেমন সেই নামাজির মতো যিনি নামাজের বাহ্যিক সব আমল পালন করেছেন ঠিকই, কিন্তু ‘হুযুরি কলব’ অর্থাৎ আল্লাহকে ভয় করে, তাকে হাজির নাজির না জেনে নামাজ না পড়ায়, তার নামাজের ‘আমল’ হলেও মূল লক্ষ্য অর্জনের উপযোগী হয়নি। সুতরাং এক্ষেত্রে এটাও কুরআন পরিত্যাগের একটি কাজ করা হলো।
৪. তদরূপ পবিত্র কুরআনে আছে, ‘বাল্লিগ মা উনযিলা ইলাইক’- ‘তোমার নিকট যা নাযিল করা হয়েছে’, অর্থাৎ কুরআনের আয়াতে তার মাধ্যমে যেসব নিয়ম-নীতি ও শিক্ষা আদর্শ দেয়া হয়েছে, সেগুলোর তাবলিগ করো, নিজের সন্তান, পরিবার, প্রতিবেশী ও অন্যদেরকেও সব হুকুম-আহকাম পালনে অবাধ্যতাজনিত শাস্তির ব্যাপারে তাদের সতর্ক করো। কেউ যদি ইসলাম প্রচারের এই নির্দেশের ওপর আমল না করলো, ‘আমর বিল মারূফ’- ‘সৎ কাজের হুকুম’ বা দ্বীনের দাওয়াত অপরের কাছে না পৌঁছালো, তাহলে এক্ষেত্রে সে কুরআনের উক্ত হুকুম অমান্য করে কুরআনকে পরিত্যাগ করলো। সুতরাং কুরআন পরিত্যক্ত অবস্থায় রাখার অপরাধে সে অভিযুক্ত হলো।
৫. এভাবে পবিত্র কুরআনের অন্যত্র আল্লাহ নির্দেশ করেছেন, তিনি আল্লাহর রাসূলকে পাঠিয়েছেন দ্বীন তথা ইসলামী জীবনব্যবস্থা ও বিধি-বিধানসমূহকে ব্যষ্টি ও সমষ্টি জীবনে মানবরচিত অন্যান্য বিধি ব্যবস্থার ওপর বিজয়ী তথা এগুলোর শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য। যেমন সূরা সাফে ইরশাদ হচ্ছে : ‘‘হুয়াল্লাযি আনযালা রাসূলাহু বিল্হুদা, ওয়া দ্বীনিল হাক্কি, লেইউযহিরাহু আলাদ্দীনে কুল্লিহী ওলাও কারিহাল মুশরিকুন।’’ অর্থাৎÑ আল্লাহ সেই মহান সত্তা যিনি তাঁর রাসূলকে বিভিন্ন পথনির্দেশক বিধি-বিধান ও আইন-কানুন দিয়ে এ জন্য পাঠিয়েছেন, যেন তিনি আল্লাহর জীবন বিধানকে (মানবরচিত) বিধি-বিধান ও মতাদর্শের ওপর বিজয়ী করেন, যদিও তাকে মুশরিক (আল্লাহর অবাধ্যরা) অস্বস্তিবোধ করবে, জ্বলে পুড়ে মরবে।
সুতরাং কেউ উপরোক্ত চারটি কাজ সম্পাদন করলেও যদি ব্যষ্টি ও সমষ্টি জীবনে আল্লাহর দীনের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠার পঞ্চম কাজটি না করলো, ‘ইযহারে দীন’ ও ‘ইকামতে দীনে’র প্রচেষ্টা ও আন্দোলনে সক্রিয় সহযোগিতার দায়িত্ব পালন না করে নির্লিপ্ত ভূমিকা অবলম্বন করলো, তিনিও এ পর্যায়ের কুরআনি নির্দেশ অমান্য করে কুরআনকে পরিত্যক্ত অবস্থায় রেখে দেয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত হবেন।
উল্লিখিত পাঁচটি কারণই কুরআনের আয়াতনির্ভর। কাজেই এগুলো অস্বীকারের কোন উপায় নেই। বলাবাহুল্য, মহানবী (সা) ও তাঁর সঙ্গীদের একটি আদর্শ জাতি ও সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্যে তাঁদের জীবনের প্রতিটি কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে কুরআনের এই শিক্ষারই প্রোজ্ব¡ল দৃষ্টান্ত ভেসে ওঠে। অতএব, প্রতিটি ঈমানদার মুসলমানকে কেয়ামতের দিন মহানবী (সা) কর্তৃক আল্লাহর দরবারে আনীত মোকাদ্দমায় অভিযুক্ত আসামিদের তালিকা থেকে রক্ষা পেতে হলে তাদের প্রতি পবিত্র কুরআনের দাবি অবশ্যই পূরণ করতে হবে আর এ জন্য অধিক পরিমাণে কুরআন চর্চার প্রতি সকলকে মনোযোগী হতে হবে : ১. তাজভিদুল কুরআন ২. ফাহ্মুল কুরআন ৩. আমল বিল কুরআন ৪. তাবলিগুল কুরআন ও ৫. ইযহারুল কুরআনের এই ৫টি দাবি যথাযথভাবে সকলের পূরণ করা একান্ত জরুরি। অন্যথায় পবিত্র কুরআনে উল্লিখিত এই আয়াতের ভিত্তিতে তার ব্যতিক্রমকারীদের বিপদের আশঙ্কা আছে বৈ কি!

সোমবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৪

শিক্ষাপল্লীর সেবা নিন, ঘরে বসে বই কিনুন।



শিক্ষাপল্লীর সেবা নিন, ঘরে বসে বই কিনুন।
 এছাড়া www.ahsanpublication.com -এই ওয়েবসাইটের সাহায্যেও বই ক্রয় করতে পারেন। এখানে Contact পেজে যেয়ে যোগাযোগ করুন।

 এছাড়া www.rokomari.com থেকেও ইসলামী বই কিনতে পারেন। আল্লাহ আমাদের তৌফিক ও উত্তম হেদায়াত দান করুন, আমীন।



শনিবার, ২২ নভেম্বর, ২০১৪

যে চৌদ্দটি আমলে রিজিক বাড়ে



যে চৌদ্দটি আমলে রিজিক বাড়ে

লিখেছেনঃ আলী হাসান তৈয়ব

রহমান রহীম আল্লাহ্‌ তায়ালার নামে-
মুসলিম মাত্রেই বিশ্বাস করেন যে তার আয় ও উপার্জন, জীবন ও মৃত্যু,  এবং সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্য ইত্যাদি র্নিধারণ হয়ে যায় যখন তিনি মায়ের উদরে থাকেন। আর এসব তিনি লাভ করেন তার জন্য বরাদ্দ উপায়-উপকরণগুলোর মাধ্যমে। তাই আমাদের কর্তব্য হলো হাত গুটিয়ে বসে না থেকে এর জন্য র্নিধারিত উপায়-উপকরণ সংগ্রহে চেষ্টা করা। যেমন চাষাবাদ, ব্যবসায়-বাণিজ্য, শিল্প-চারু, চাকরি-বাকরি বা অন্য কিছু। আল্লাহ তা‌‘আলা বলেন,
﴿هُوَ ٱلَّذِي جَعَلَ لَكُمُ ٱلۡأَرۡضَ ذَلُولٗا فَٱمۡشُواْ فِي مَنَاكِبِهَا وَكُلُواْ مِن رِّزۡقِهِۦۖ وَإِلَيۡهِ ٱلنُّشُورُ ١٥﴾ [الملك: ١٥] 
‘তিনিই তো তোমাদের জন্য যমীনকে সুগম করে দিয়েছেন, কাজেই তোমরা এর পথে প্রান্তরে বিচরণ কর এবং তাঁর রিযক থেকে তোমরা আহার কর। আর তাঁর নিকটই পুনরুত্থান।’ {সূরা আল-মুলক, আয়াত : ১৫}
আজ আমরা রিজিক বৃদ্ধির উপায়সমূহের মধ্যে কুরআন ও হাদীস রোমন্থিত ১৪টি আমলের কথা আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।
প্রথম আমল : তাকওয়া ও তাওয়াক্কুল অবলম্বন করা
আল্লাহর ভয় তথা তাকওয়া অবলম্বন করা, তাঁর নির্দেশাবলি পালন ও নিষিদ্ধ বিষয়গুলো বর্জন করা। পাশাপাশি আল্লাহর ওপর অটল আস্থা রাখা, তাওয়াক্কুল করা এবং রিজিক তালাশে তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করা। কারণ, যে আল্লাহর ওপর ভরসা করে তিনিই তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন, ‌
﴿ وَمَن يَتَّقِ ٱللَّهَ يَجۡعَل لَّهُۥ مَخۡرَجٗا ٢ وَيَرۡزُقۡهُ مِنۡ حَيۡثُ لَا يَحۡتَسِبُۚ وَمَن يَتَوَكَّلۡ عَلَى ٱللَّهِ فَهُوَ حَسۡبُهُۥٓۚ إِنَّ ٱللَّهَ بَٰلِغُ أَمۡرِهِۦۚ قَدۡ جَعَلَ ٱللَّهُ لِكُلِّ شَيۡءٖ قَدۡرٗا ٣ ﴾ [الطلاق : ٢،  ٣]   
‘আর যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরী করে দেন। এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিযক দিবেন যা সে কল্পনাও করতে পারবে না। আর যে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তাঁর উদ্দেশ্য পূর্ণ করবেনই। নিশ্চয় আল্লাহ প্রত্যেক জিনিসের জন্য একটি সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন।’ {সূরা আত-তালাক, আয়াত : ২-৩}
অর্থাৎ যে আল্লাহকে ভয় করবে এবং আনুগত্য দেখাবে, আল্লাহ তার সকল সংকট দূর করে দেবেন এবং তার কল্পনাতীত স্থান থেকে রিজিকের সংস্থান করে দেবেন। আর যে কেউ তার উদ্দেশ্য হাসিলে একমাত্র আল্লাহর শরণাপন্ন হয় তিনিই তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান। বলাবাহুল্য এই তাকওয়ার পরিচয় মেলে হালাল উপার্জনে চেষ্টা এবং সন্দেহযুক্ত কামাই বর্জনের মধ্য দিয়ে।
দ্বিতীয় আমল : তাওবা ও ইস্তেগফার করা 
অধিক পরিমাণে ইস্তেগফার এবং বেশি বেশি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলেও রিজিক বাড়ে। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর অন্যতম নবী ও রাসূল নূহ আলাইহিস সালামের ঘটনা তুলে ধরে ইরশাদ করেন,
﴿ فَقُلۡتُ ٱسۡتَغۡفِرُواْ رَبَّكُمۡ إِنَّهُۥ كَانَ غَفَّارٗا ١٠ يُرۡسِلِ ٱلسَّمَآءَ عَلَيۡكُم مِّدۡرَارٗا ١١ وَيُمۡدِدۡكُم بِأَمۡوَٰلٖ وَبَنِينَ وَيَجۡعَل لَّكُمۡ جَنَّٰتٖ وَيَجۡعَل لَّكُمۡ أَنۡهَٰرٗا ١٢ ﴾ [نوح: ١٠،  ١٢]
‘আর বলেছি, ‘তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও; নিশ্চয় তিনি পরম ক্ষমাশীল’। (তাঁর কাছে ক্ষমা চাইলে) ‘তিনি তোমাদের উপর মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, ‘আর তোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও সন্তান- সন্ততি দিয়ে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের জন্য বাগ-বাগিচা দেবেন আর দেবেন নদী-নালা’। {সূরা নূহ, আয়াত : ১০-১২}
হাদীসে বিষয়টি আরেকটু খোলাসা করে বলা হয়েছে, আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« مَنْ لَزِمَ الاِسْتِغْفَارَ جَعَلَ اللَّهُ لَهُ مِنْ كُلِّ ضِيقٍ مَخْرَجًا وَمِنْ كُلِّ هَمٍّ فَرَجًا وَرَزَقَهُ مِنْ حَيْثُ لاَ يَحْتَسِبُ ».
‘যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার করবে আল্লাহ তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের সংস্থান করে দেবেন।’ [আবূ দাঊদ : ১৫২০; ইবন মাজা : ৩৮১৯; তাবরানী : ৬২৯১][1]  
অন্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,  
« مَنْ أَكْثَرَ الِاسْتِغْفَارَ جَعَلَ اللَّهُ لَهُ مِنْ كُلِّ هَمٍّ فَرَجًا وَمِنْ كُلِّ ضِيقٍ مَخْرَجًا وَرَزَقَهُ مِنْ حَيْثُ لاَ يَحْتَسِبُ».
‘যে ব্যক্তি বেশি বেশি ইস্তেগফার করবে আল্লাহ তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন।’ [বাইহাকী : ৬৩৬; হাকেম, মুস্তাদরাক : ৭৬৭৭ সহীহ সূত্রে বর্ণিত।]
তৃতীয় আমল : আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা
আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা এবং তাদের হক আদায়ের মাধ্যমেও রিজিক বাড়ে। যেমন : আনাস ইবন মালেক রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি তিনি ইরশাদ করেন,
« مَنْ سَرَّهُ أَنْ يُبْسَطَ لَهُ فِي رِزْقِهِ أَوْ يُنْسَأَ لَهُ فِي أَثَرِهِ فَلْيَصِلْ رَحِمَهُ».
‘যে ব্যক্তি কামনা করে তার রিজিক প্রশস্ত করে দেওয়া হোক এবং তার আয়ু দীর্ঘ করা হোক সে যেন তার আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখে।’ [বুখারী : ৫৯৮৫; মুসলিম : ৪৬৩৯]
চতৃর্থ আমল : নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর দরূদ পড়া
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি দরূদ পাঠেও রিজিকে প্রশস্ততা আসে। যেমনটি অনুমিত হয় নিম্নোক্ত হাদীস থেকে। তোফায়েল ইবন উবাই ইবন কা‘ব রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন,  
قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّى أُكْثِرُ الصَّلاَةَ عَلَيْكَ فَكَمْ أَجْعَلُ لَكَ مِنْ صَلاَتِى فَقَالَ « مَا شِئْتَ ». قَالَ قُلْتُ الرُّبُعَ. قَالَ « مَا شِئْتَ فَإِنْ زِدْتَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ ». قُلْتُ النِّصْفَ. قَالَ « مَا شِئْتَ فَإِنْ زِدْتَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ ». قَالَ قُلْتُ فَالثُّلُثَيْنِ. قَالَ « مَا شِئْتَ فَإِنْ زِدْتَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ ». قُلْتُ أَجْعَلُ لَكَ صَلاَتِى كُلَّهَا. قَالَ « إِذًا تُكْفَى هَمَّكَ وَيُغْفَرُ لَكَ ذَنْبُكَ ». قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ.
আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল, আমি আপনার প্রতি অধিকহারে দরূদ পড়তে চাই, অতএব আমার দু‘আর মধ্যে আপনার দরূদের জন্য কতটুকু অংশ রাখব? তিনি বললেন, তুমি যতটুকু চাও। কা‘ব বলেন, আমি বললাম, এক চতুর্থাংশ। তিনি বললেন, তুমি যতটুকু চাও। তবে যদি তুমি বেশি পড় তা তোমার জন্য উত্তম হবে। আমি বললাম, অর্ধেক? তিনি বললেন, তুমি যতটুকু চাও। তবে তুমি যদি বেশি পড় তা তোমার জন্য উত্তম হবে। কা‘ব বলেন, আমি বললাম, তাহলে দুই তৃতীয়াংশ? তিনি বললেন, তুমি যতটুকু চাও। তবে তুমি যদি বেশি পড় তা তোমার জন্য উত্তম হবে। আমি বললাম, আমার দু‘আর পুরোটা জুড়েই শুধু আপনার দরূদ রাখব। তিনি বললেন, তাহলে তা তোমার ঝামেলা ও প্রয়োজনের জন্য যথেষ্ট হবে এবং তোমার গুনাহ ক্ষমা করা হবে। [তিরমিযী : ২৬৪৫; হাকেম, মুস্তাদরাক : ৭৬৭৭ (আবূ ঈসা বলেন, হাদীসটি ‘হাসান’ সহীহ।)] 
পঞ্চম আমল : আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করা
আল্লাহর রাস্তায় কেউ ব্যয় বা দান করলে তা বিফলে যায় না। সে সম্পদ ফুরায়ও না। বরং তা বাড়ে বৈ কি। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
﴿ قُلۡ إِنَّ رَبِّي يَبۡسُطُ ٱلرِّزۡقَ لِمَن يَشَآءُ مِنۡ عِبَادِهِۦ وَيَقۡدِرُ لَهُۥۚ وَمَآ أَنفَقۡتُم مِّن شَيۡءٖ فَهُوَ يُخۡلِفُهُۥۖ وَهُوَ خَيۡرُ ٱلرَّٰزِقِينَ ٣٩ ﴾ [سبا: ٣٩]    
‘বল, ‘নিশ্চয় আমার রব তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার জন্য ইচ্ছা রিযক প্রশস্ত করেন এবং সঙ্কুচিত করেন। আর তোমরা যা কিছু আল্লাহর জন্য ব্যয় কর তিনি তার বিনিময় দেবেন এবং তিনিই উত্তম রিযকদাতা।’ {সূরা আস-সাবা’, আয়াত : ৩৯}
ষষ্ঠ আমল : বারবার হজ-উমরা করা
হজ ও উমরা পাপ মোচনের পাশাপাশি হজকারী ও উমরাকারীর অভাব-অনটন দূর করে এবং তার সম্পদ বাড়িয়ে দেয়। আবদুল্লাহ ইব্ন মাসঊদ রাদিআল্লাহু আনহুমা কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« تَابِعُوا بَيْنَ الْحَجِّ وَالْعُمْرَةِ فَإِنَّهُمَا يَنْفِيَانِ الْفَقْرَ وَالذُّنُوبَ كَمَا يَنْفِى الْكِيرُ خَبَثَ الْحَدِيدِ وَالذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ وَلَيْسَ لِلْحَجَّةِ الْمَبْرُورَةِ ثَوَابٌ إِلاَّ الْجَنَّةُ ».
‘তোমরা হজ ও উমরা পরপর করতে থাক, কেননা তা অভাব ও গুনাহ দূর করে দেয়, যেমন দূর করে দেয় কামারের হাপর লোহা, সোনা ও রুপার ময়লাকে।’ [তিরমিযী : ৮১৫; নাসাঈ : ২৬৩১]
সপ্তম আমল : দুর্বলের প্রতি সদয় হওয়া বা সদাচার করা
মুস‘আব ইবন সা‘দ রাদিআল্লাহু আনহু যুদ্ধজয়ের পর মনে মনে কল্পনা করলেন, তিনি বোধ হয় তাঁর বীরত্ব ও শৌর্য-বীর্য হেতু অন্যদের চেয়ে নিজেকে বেশি মর্যাদাবান। সেই প্রেক্ষিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
« هَلْ تُنْصَرُونَ وَتُرْزَقُونَ إِلاَّ بِضُعَفَائِكُمْ » .
‘তোমাদের মধ্যে থাকা দুর্বলদের কারণে কেবল তোমাদের সাহায্য করা হয় এবং রিজিক প্রদান করা হয়।’ [বুখারী : ২৮৯৬]
অষ্টম আমল : ইবাদতের জন্য ঝঞ্ঝাটমুক্ত হওয়া
আল্লাহর ইবাদতের জন্য ঝামেলামুক্ত হলে এর মাধ্যমেও অভাব দূর হয় এবং প্রাচুর্য লাভ হয়। যেমনটি বর্ণিত হয়েছে আবূ হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى يَقُولُ يَا ابْنَ آدَمَ تَفَرَّغْ لِعِبَادَتِى أَمْلأْ صَدْرَكَ غِنًى وَأَسُدَّ فَقْرَكَ وَإِلاَّ تَفْعَلْ مَلأْتُ يَدَيْكَ شُغْلاً وَلَمْ أَسُدَّ فَقْرَكَ ».
‘আল্লাহ তা‘আলা বলেন, হে আদম সন্তান, আমার ইবাদতের জন্য তুমি ঝামেলামুক্ত হও, আমি তোমার অন্তরকে প্রাচুর্য দিয়ে ভরে দেব এবং তোমার দারিদ্র ঘুচিয়ে দেব। আর যদি তা না কর, তবে তোমার হাত ব্যস্ততায় ভরে দেব এবং তোমার অভাব দূর করব না।’ [তিরমিযী : ২৬৫৪; মুসনাদ আহমদ : ৮৬৮১; ইবন মাজা : ৪১০৭]
নবম আমল : আল্লাহর রাস্তায় হিজরত করা
আল্লাহর সন্তুষ্টির নিমিত্তে হিজরত তথা স্বদেশ ত্যাগ করলে এর মাধ্যমেও রিজিকে প্রশস্ততা ঘটে। যেমনটি অনুধাবিত হয় নিচের আয়াত থেকে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ ۞وَمَن يُهَاجِرۡ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ يَجِدۡ فِي ٱلۡأَرۡضِ مُرَٰغَمٗا كَثِيرٗا وَسَعَةٗۚ وَمَن يَخۡرُجۡ مِنۢ بَيۡتِهِۦ مُهَاجِرًا إِلَى ٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ ثُمَّ يُدۡرِكۡهُ ٱلۡمَوۡتُ فَقَدۡ وَقَعَ أَجۡرُهُۥ عَلَى ٱللَّهِۗ وَكَانَ ٱللَّهُ غَفُورٗا رَّحِيمٗا ١٠٠ ﴾ [النساء : ١٠٠] 
‘আর যে আল্লাহর রাস্তায় হিজরত করবে, সে যমীনে বহু আশ্রয়ের জায়গা ও সচ্ছলতা পাবে। আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উদ্দেশ্যে মুহাজির হয়ে নিজ ঘর থেকে বের হয় তারপর তাকে মৃত্যু পেয়ে বসে, তাহলে তার প্রতিদান আল্লাহর উপর অবধারিত হয়। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ {সূরা আন-নিসা, আয়াত : ১০০}
আয়াতের ব্যাখ্যা আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস প্রমুখ সাহাবী রাদিআল্লাহু আনহুদ বলেন, স্বচ্ছলতা অর্থ রিজিকে প্রশস্ততা।
দশম আমল : আল্লাহর পথে জিহাদ
একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিলের জিহাদেও সম্পদের ব্যপ্তি ঘটে। গনীমত বা যুদ্ধলব্ধ সম্পদের মাধ্যমে সংসারে প্রাচুর্য আসে। যেমন ইবন উমর রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« وَجُعِلَ رِزْقِي تَحْتَ ظِلِّ رُمْحِي  ».
‘আর আমার রিজিক রাখা হয়েছে আমার বর্শার ছায়াতলে।’ [মুসনাদ আহমদ : ৫৬৬৭; বাইহাকী : ১১৫৪; শু‘আবুল ঈমান : ১৯৭৮৩]
একাদশ আমল : আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা
সাধারণভাবে আল্লাহ যে রিজিক ও নিয়ামতরাজি দান করেছেন তার জন্য আল্লাহর শুকরিয়া করা এবং তাঁর স্তুতি গাওয়া। কারণ, শুকরিয়ার ফলে নেয়ামত বৃদ্ধি পায়। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,   
﴿ وَإِذۡ تَأَذَّنَ رَبُّكُمۡ لَئِن شَكَرۡتُمۡ لَأَزِيدَنَّكُمۡۖ وَلَئِن كَفَرۡتُمۡ إِنَّ عَذَابِي لَشَدِيدٞ ٧ ﴾ [ابراهيم: ٧] 
‘আর যখন তোমাদের রব ঘোষণা দিলেন, ‘যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় কর, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের বাড়িয়ে দেব, আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চয় আমার আযাব বড় কঠিন।’ {সূরা ইবরাহীম, আয়াত : ০৭}
আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা শুকরিয়ার বদৌলতে নেয়ামত বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। আর বলাবাহুল্য আল্লাহর বাড়ানোর কোনো সীমা-পরিসীমা নাই।
দ্বাদশ আমল : বিয়ে করা
আজকাল মানুষের দুনিয়ার প্রাচুর্য ও বিলাসের প্রতি আসক্তি এত বেশি বেড়েছে, তারা প্রচুর অর্থ নেই এ যুক্তিতে প্রয়োজন সত্ত্বেও বিয়ে বিলম্বিত করার পক্ষে রায় দেন। তাদের কাছে আশ্চর্য লাগতে পারে এ কথা যে বিয়ের মাধ্যমেও মানুষের সংসারে প্রাচুর্য আসে। কারণ, সংসারে নতুন যে কেউ যুক্ত হয়, সে তো তার জন্য বরাদ্দ রিজিক নিয়েই আসে।আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,    
﴿ وَأَنكِحُواْ ٱلۡأَيَٰمَىٰ مِنكُمۡ وَٱلصَّٰلِحِينَ مِنۡ عِبَادِكُمۡ وَإِمَآئِكُمۡۚ إِن يَكُونُواْ فُقَرَآءَ يُغۡنِهِمُ ٱللَّهُ مِن فَضۡلِهِۦۗ وَٱللَّهُ وَٰسِعٌ عَلِيمٞ ٣٢ ﴾ [النور : ٣٢] 
‘আর তোমরা তোমাদের মধ্যকার অবিবাহিত নারী-পুরুষ ও সৎকর্মশীল দাস দাসীদের বিবাহ দাও। তারা অভাবী হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও মহাজ্ঞানী।’ {সূরা আন-নূর, আয়াত : ৩২}
উমর ইবন খাত্তাব রাদিআল্লাহু আনহুমা বলতেন, ওই ব্যক্তির ব্যাপার বিস্ময়কর যে বিয়ের মধ্যে প্রাচুর্য খোঁজে না। কারণ স্বয়ং আল্লাহ বলেছেন, ‘তারা অভাবী হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন।’
ত্রয়োদশ আমল : অভাবের সময় আল্লাহমুখী হওয়া এবং তার কাছে দু‘আ করা
রিজিক অর্জনে এবং অভাব দূরীকরণে প্রয়োজন আল্লাহর কাছে দু‘আ করা। কারণ, তিনি প্রার্থনা কবুল করেন। আর আল্লাহ তা‘আলাই রিজিকদাতা এবং তিনি অসীম ক্ষমতাবান। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَقَالَ رَبُّكُمُ ٱدۡعُونِيٓ أَسۡتَجِبۡ لَكُمۡۚ ﴾ [غافر: ٦٠] 
‘আর তোমাদের রব বলেছেন, ‘তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের জন্য সাড়া দেব।’ {সূরা আল-মু‘মিন, আয়াত : ৬০}
এ আয়াতে আল্লাহ দু‘আ করার নির্দেশ দিয়েছেন আর তিনি তা কবুলের জিম্মাদারি নিয়েছেন। যাবৎ না তা কবুলে পথে কোনো অন্তরায় না হয়।  যেমন ওয়াজিব তরক করা, হারাম কাজে জড়ানো, হারাম আহার গ্রহণ বা হারাপ পরিচ্ছদ পরা ইত্যাদি এবং কবুলকে খানিক বিলম্বিতকরণ। আল্লাহর কাছে দু‘আয় বলা যেতে পারে,
‘হে রিজিকদাতা আমাকে রিজিক দান করুন, আপনি সর্বোত্তম রিজিকদাতা। হে আল্লাহ আমি আপনার কাছে পবিত্র সুপ্রশস্ত রিজিক চাই। হে ওই সত্তা, দানের ঢল সত্ত্বেও যার ভাণ্ডারে কমতি হয় না। হে আল্লাহ, আমাকে আপনি আপনার হালাল দিয়ে আপনার হারাম থেকে যথেষ্ট করে দিন আর আপনার দয়া দিয়ে আপনি ছাড়া অন্যদের থেকে যথেষ্ট হয়ে যান। হে আল্লাহ আপনি আমাকে যে রিজিক দিয়েছেন তা দিয়েই সন্তুষ্ট বানিয়ে দিন। আর যা আমাকে দিয়েছেন তাতে বরকত দিন।’
অভাবকালে মানুষের কাছে হাত না পেতে আল্লাহর শরণাপন্ন হলে এবং তাঁর কাছেই প্রাচুর্য চাইলে অবশ্যই তার অভাব মোচন হবে এবং রিজিক বাড়ানো হবে। আবদুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« مَنْ نَزَلَتْ بِهِ فَاقَةٌ فَأَنْزَلَهَا بِالنَّاسِ لَمْ تُسَدَّ فَاقَتُهُ وَمَنْ نَزَلَتْ بِهِ فَاقَةٌ فَأَنْزَلَهَا بِاللَّهِ فَيُوشِكُ اللَّهُ لَهُ بِرِزْقٍ عَاجِلٍ أَوْ آجِلٍ ».
‘যে ব্যক্তি অভাবে পতিত হয়, অতপর তা সে মানুষের কাছে সোপর্দ করে (অভাব দূরিকরণে মানুষের ওপর নির্ভরশীল হয়), তার অভাব মোচন করা হয় না। পক্ষান্তরে যে অভাবে পতিত হয়ে এর প্রতিকারে আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল হয় তবে অনিতবিলম্বে আল্লাহ তাকে তরিৎ বা ধীর রিজিক দেবেন। [তিরমিযী : ২৮৯৬; মুসনাদ আহমদ : ৪২১৮]
চতুর্দশ আমল : গুনাহ ত্যাগ করা, আল্লাহর দীনের ওপর সদা অটল থাকা এবং নেকীর কাজ করে যাওয়া।
গুনাহ ত্যাগ করা, আল্লাহর দীনের ওপর অটল থাকা এবং নেকীর কাজ করা- এসবের মাধ্যমেও রিজিকের রাস্তা প্রশস্ত হয় যেমন পূর্বোক্ত আয়াতগুলো থেকে অনুমান করা যায়।
তবে সর্বোপরি আমাদের মনে রাখতে হবে আমরা দুনিয়াতে চিরদিন থাকার জন্য আসি নি। তাই দুনিয়াকে প্রাধান্য না দিয়ে উচিত হবে আখিরাতকে অগ্রাধিকার ও প্রাধান্য দেয়া। আমাদের এদেন অবস্থা দেখে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ بَلۡ تُؤۡثِرُونَ ٱلۡحَيَوٰةَ ٱلدُّنۡيَا ١٦ وَٱلۡأٓخِرَةُ خَيۡرٞ وَأَبۡقَىٰٓ ١٧ ﴾ [الاعلى: ١٦،  ١٧] 
‘বরং তোমরা দুনিয়ার জীবনকে প্রাধান্য দিচ্ছ। অথচ আখিরাত সর্বোত্তম ও স্থায়ী।’{সূরা আল-আ‘লা, আয়াত : ১৬-১৭}
আর পরকালের মুক্তি ও চিরশান্তিই যার প্রধান লক্ষ্য তার উচিত হবে রিজিকের জন্য হাহাকার না করে অল্পে তুষ্ট হতে চেষ্টা করা। যেমন : হাদীসে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবন আমর ইবন আ‘স রাদিআল্লাহু আনহুম থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« قَدْ أَفْلَحَ مَنْ أَسْلَمَ وَرُزِقَ كَفَافًا وَقَنَّعَهُ اللَّهُ بِمَا آتَاهُ ».
‘ওই ব্যক্তি প্রকৃত সফল যে ইসলাম গ্রহণ করেছে আর তাকে জীবন ধারণে (অভাবও নয়; বিলাসও নয়) পর্যাপ্ত পরিমাণ রিজিক দেয়া হয়েছে এবং আল্লাহ তাকে যা দিয়েছেন তাতে তুষ্টও করেছেন। [মুসলিম : ২৪৭৩; তিরমিযী : ২৩৪৮; আহমদ : ৬৫৭২]
পরিশেষে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা, তিনি যেন আমাদের এসব উপায়-উপকরণ যোগাড় করে রিজিক তথা হালাল উপার্জনে উদ্যোগী ও সফল হবার তাওফীক দান করেন। তিনি যেন আপনাদের রিজিক ও উপার্জনে প্রশস্ততা দান করেন।আমীন।

[1]. (শায়খ উসাইমীন বলেন, সনদগত দিক থেকে হাদীসটি দুর্বল কিন্তু এর মর্ম ও বক্তব্য সহীহ বা সঠিক। কুরআনের আয়াত ও হাদীসে এই বক্তব্যের সমর্থন বিদ্যমান। এই হাদীস সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনার পর শায়খ বিন বায বলেন, সর্বোপরি হাদীসটি তারগীব ও তারহীব তথা মানুষকে আখিরাতের আগ্রহ বা ভয় দেখানোর ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য। কারণ, এ ব্যাপারে কুরআন ও সুন্নাহে একাধিক বক্তব্য পাওয়া যায়। [ফাতাওয়া নূর আলাদ-দারবি (হাদীসের ব্যাখ্যা ও তার হুকুম।]  

Relaeted Other Islamic Blog

Other Blog-site: