Main Slogan:

হে ইমানদারগণ! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ কর (সূরা বাকারা : ২০৮)
রোজা-সদাকাতুল ফিতর-ঈদ লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
রোজা-সদাকাতুল ফিতর-ঈদ লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

বৃহস্পতিবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০১০

ঈদের গয়না আধুনিক ও নান্দনিক

ঈদের গয়না আধুনিক ও নান্দনিক

-আবু সুফিয়ান কবির


নারীদের প্রধান অনুষঙ্গ অবশ্যই গয়না। তবে গয়না বলতে এক সময় শুধু সোনা বা রুপার গয়না সবাই পরত। অনেক অতীতে ফুল দিয়ে নিজেকে সজ্জিত করার মাধ্যমে মানুষ গয়নার ব্যবহারের কথা উপলব্ধি করতে থাকে। ইতিহাস থেকে প্রমাণ পাওয়া যায়, গয়নার প্রচলন শুরু আজ থেকে প্রায় ছয় হাজার বছর আগে। বাংলাদেশে গয়না এখন একটি ডিজাইনেবল ও আকর্ষণীয় অনুষঙ্গ। বুটিক হাউসগুলোর মধ্যে আডং, কুমুদিনী, প্রবর্তনা, অরণ্য, আইডিয়া, মায়াসীর, যাত্রা নিজস্ব ডিজাইনের গয়না তৈরি ও বিপণন করে বেশ সুনাম কুড়িয়েছে। তৈরি করেছে নিজের ব্রান্ড ইমেজ। মাটির গয়না তৈরি করে জয়েদুর রহমান জয়েদ বেশ নাম করেছে তার প্রতিষ্ঠানের নাম ‘সেপ অ্যান্ড ফ্রম’। বাবুল মেটালের বাবুল এক অসাধারণ গয়না শিল্পী। এ শিল্পের সঙ্গে আরও যাদের নাম জড়িত তারা হলেন আবরারুর রহমান, পাপা, মিলিতা চৌধুরী, আদনাম রশীদ। বিগত কয়েক বছর ধরে গয়নার বাজারে যে প্রতিষ্ঠানটি বেশ সুনাম কুড়িয়েছে তার নাম ‘মম’। এখানকার ডিজাইন করা গয়না আধুনিক তরুণীদের রূপ সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতে বেশ সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। ‘মম’র প্রধান ডিজাইনার আনন্দ দাশ জানালেন, গয়নার বাজারে ইমিটেশন বা গোল্ড প্লেটেড গয়নার চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণ ও বর্তমান বাজার সম্পর্কে। তার মতে, “এক সময় সোনা বা রুপার গয়না দিয়ে নিজেকে সাজানোর প্রচলন ছিল। মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হলো ইমিটেশন গয়নার প্রচলন। আধুনিক আঙ্গিকে তৈরি বিভিন্ন রংয়ের গয়নার ওপর বিভিন্ন ধরনের স্টোন দিয়ে সাজিয়ে গয়না বিক্রির প্রক্রিয়া শুরু হয় ১০ বছর ধরে। এভাবে প্রথমে আমরা গয়নার বিভিন্ন ডিজাইনের ফিগার তৈরি করি। পরবর্তী সময়ে সেটার ওপর গোল্ডপ্লেট বার্নিশ দেয়া হয়। তারপর বিভিন্ন ধরনের পাথর দিয়ে তা সাজানো হয়। ফিগারের ওপর পাথর সাজানোর কাজটি বেশ দক্ষতার সঙ্গে করতে হয়। এখানেই একটি গয়নার সৌন্দর্য ফুটে ওঠে। তবে ফিগার তৈরি ও ফিনিশিংয়ের কাজটির প্রতিও বেশ নজর দিতে হয়। নারীদের সৌন্দর্য বিকাশে গয়নাটি যেন আকর্ষণীয় হয় সেদিকে বেশ খেয়াল রাখা প্রয়োজন গয়নার ডিজাইনারদের। স্টোনটি হতে হয় খাঁটি। এসব বিষয় খেয়াল রেখেই গয়না তৈরি করে ‘মম’।”
প্রচলিত মূল ধারার গয়নার বাইরে আরও আছে আদিবাসীদের গয়না। তারা সাধারণত পরে বিশেষ বৈশিষ্ট্যের গয়না, যার মোটিফ প্রমাণ করে এটা তাদের গয়না। তবে আদিবাসী গয়না ও অয়েস্টান গয়নার সঙ্গে আধুনিক গয়নার মিশেল ঘটিয়েছে নবীন গয়না ডিজাইনাররা।
আনন্দ আরও জানালেন, ‘মম’র উল্লেখযোগ্য গয়নার মধ্যে আছে কানের দুল, কানের ঝুমকা, নাকের নথ, টিকলি, গলার হার, গলার মালা, নেকলেস, বিছা, মল, আংটি, বাজুবন্ধ, অনন্ত, হাঁসুলি, চুরি ও বালা ইত্যাদি। বসুন্ধরা সিটির নিচতলায় অবস্থিত ‘মম’তে চাহিদামত পছন্দের স্টোন দিয়ে মাত্র আধঘণ্টার মধ্যে গয়না তৈরি করে দেয়া হয়। কেউ কেউ নিজের পোশাকের রংয়ের সঙ্গে মিল রেখে গয়না তৈরি করে থাকে। সে ক্ষেত্রেও ‘মম’র রয়েছে বিশেষ সুযোগ। কেননা ছয়জন কারুশিল্পী সব সময় আপনার পছন্দের গয়নাটি তৈরি করে দেবে—এ ক্ষেত্রে সময় লাগবে ২০ থেকে ৯০ মিনিট। যদি আপনি গর্জিয়াস ডিজাইনের গয়না তৈরি করতে চান তাহলে আপনার কাঙ্ক্ষিত ডিজাইনের নকশা তাদের দিয়ে আসতে হবে। এ ক্ষেত্রে ডিজাইনের নকশার ড্রইং করতে আপনাকে সাহায্য করেন ডিজাইনার আনন্দ নিজেই। অর্থাত্ আপনি যা চান তার হুবহু গয়না সরবরাহ করবে ‘মম’। আকার, ডিজাইন, মেটালের ব্যবহার ও কালার মেচিংয়ের ওপর গয়নার দাম নির্ধারণ করা হয়।’
বর্তমানে কারুশিল্পীরা যেসব উপকরণ দিয়ে গয়না তেরি করছে তার মধ্যে আছে—ফলের বীচি, কাঠ, ঝিনুক, কড়ি, নারকেলের খোল, কাঁসা ও মাটি। এ গয়নাগুলোর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—এগুলো পরিবেশবান্ধব। তবে নতুন প্রজন্মের ডিজাইনাররা বেশ সফল হচ্ছে। এখানে প্রায় প্রতি ব্যান্ড আইটেমের দোকানে পাওয়া যায় নিজস্ব ডিজাইনের পোশাক। যেসব শোরুমে নিজস্ব ডিজাইনের গয়না পাওয়া যাবে তার মধ্যে আছে অঞ্জন’স, কে ক্র্যাফট, দেশাল, নিপুণ, বাংলার মেলা, পিরান অন্যমেলা, নিত্যউপহারসহ আরও বেশকিছু ব্রান্ড আইটেমের দোকান। এছাড়া চাঁদনিচক, গাউছিয়া, নিউমার্কেটে পাওয়া যায় ইমিটেশনের গয়না।
গয়নার রং একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বর্তমানে সব ধরনের রংয়ের গয়না পাওয়া যায় যার। ডিজাইনার আনন্দ জানালেন, ‘বর্তমানে যেসব রং বেশি চলছে তার মধ্যে আছে ‘অলিভ, গোল্ডেন হলুদ, জাম, লাল, কমলা, মেরিগোল্ড, মেরুন, সাদা, অফহোয়াইট, কালো, পিচ, পেঁয়াজ, কাঁঠালি হলুদ, বটল গ্রিন, নীল, সবুজ, ফিরোজাসহ আরও অনেক ধরনের রং’।
বর্তমান গয়নার ডিজাইন শুধু নান্দনিক দিকটি ফুটে ওঠে না। একেকটি গয়না যেন সৃজনশীলতার প্রকাশ। নারীদের সৌন্দর্য বিকাশের প্রধান অনুষঙ্গ।

ফিতরার ১০ মাসআলা

ফিতরার ১০ মাসআলা

-আবু তাসনিয়া

এক. নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিকের ওপর সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব। জাকাত ও সদ্কায়ে ফিতরের মধ্যে পার্থক্য এই যে, জাকাত ওয়াজিব হওয়ার জন্য নিসাব পরিমাণ সম্পদ মালিকের কাছে পূর্ণ এক বছর থাকতে হবে। পক্ষান্তরে সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব হওয়ার জন্য বছর অতিক্রান্ত হওয়া আবশ্যক নয়; বরং ঈদের দিন সুবহে সাদিকের সময় কেউ নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে তার ওপরও সদ্কায়ে ফিতর ওয়াজিব হবে।
দুই. গম, গমের আটা, যব, যবের আটা, খেজুর, পনির ও কিশমিশ দিয়ে ফিতরা আদায় করা যায়। গম বা গমের আটা দ্বারা ফিতরা আদায় করলে অর্ধ সা (১ কেজি ৬৫০ গ্রাম) এবং যব বা যবের আটা, খেজুর, কিশমিশ কিংবা পনির দ্বারা আদায় করলে এক সা (৩ কেজি ৩০০ গ্রাম) দিতে হবে। রুটি, চাল বা অন্য খাদ্যদ্রব্য দিয়ে ফিতরা দিতে হলে মূল্য হিসেবে দিতে হবে।
তিন. ঈদের রাতে সুবহে সাদিকের আগে ভূমিষ্ঠ হওয়া শিশুর সদ্কায়ে ফিতর ওয়াজিব। আর সুবহে সাদিকের পর ভূমিষ্ঠ হওয়া শিশুর সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব নয়।
চার. ঈদের রাতে সুবহে সাদিকের আগে কেউ মারা গেলে তার ওপর সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব নয়। আর সুবহে সাদিকের পর মারা গেলে সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব হবে।
পাঁচ. একই হুকুম যে ব্যক্তি সুবহে সাদিকের আগে মুসলমান হবে তার ওপর সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব। সুবহে সাদিকের পর মুসলমান হলে ওয়াজিব নয়।
ছয়. ঈদের দিন ঈদের নামাজে যাওয়ার আগে সদকায়ে ফিতর আদায় করা উত্তম। যদি তা না করে তবে ঈদের নামাজের পর তা আদায় করতে হবে এবং যতক্ষণ পর্যন্ত সদকায়ে ফিতর আদায় না করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তা আদায় করা ওই ব্যক্তির জন্য আবশ্যক হবে।
সাত. নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক নয় অর্থাত্ যার ওপর কোরবানি ও সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব নয়, এমন ব্যক্তিকে সদ্কায়ে ফিতর দেয়া জায়েজ।
আট. নিজের আত্মীয়-স্বজনকে সদকায়ে ফিতর দেয়া যাবে, তবে বাবা-মা নিজ সন্তানকে এবং সন্তান নিজ বাবা-মা, দাদা-দাদি ও নানা-নানিকে সদকা দিতে পারবে না।
নয়. গরিব মুসলমানকে সদকায়ে ফিতরের মালিক বানিয়ে দিতে হবে। সদকায়ে ফিতরের টাকা সরাসরি মসজিদ-মাদ্রাসা ইত্যাদির কাজে লাগানো যাবে না।
দশ. এক ব্যক্তির সদকায়ে ফিতর একাধিক গরিবকে দেয়া যায় এবং একাধিক ব্যক্তির সদকায়ে ফিতর একজন গরিবকে দেয়া যায়।

নারীর ঈদ উত্সব

নারীর ঈদ উত্সব

-তাসলিমা সুলতানা


ঈদ উত্সব, ঈদের আনন্দ এবং ঈদের আমল শুধু পুরুষদের জন্যই নয়; বরং এসবে সমানভাবে নারীরাও অন্তর্ভুক্ত। দীর্ঘ একমাস সিয়াম সাধনার পর প্রতিটি ধর্মপ্রাণ মুসলমানের ঘরে আসে ‘ঈদুল ফিতর’ বা আনন্দের ঈদ। মুমিন মুসলমানের জীবনে নেমে আসে এক পূতপবিত্র আনন্দের পরশ। সিয়াম সাধনার পর আনন্দ করাটাই স্বাভাবিক। তবে তা অবশ্যই হতে হবে ইসলামী শরিয়তের গণ্ডির ভেতরে থেকে। ঈদের আনন্দে নারীদের সম্পৃক্তি একটি অপরিহার্য বিষয়। ঈদের দিন নারীদের দায়িত্ব পুরুষদের তুলনায় একটু বেশি। পরিবারের রান্নাবান্না, ছেলেমেয়েদের গোসল, তাদের সাজগোজ সবই তাদের করতে হয়। এসব দায়িত্ব পালনের সঙ্গে সঙ্গে তার নিজের জন্যও এ কাজগুলো সারতে হয়। এতসব সত্ত্বেও নারীকে ঈদের আমল ছেড়ে দিলে চলবে না। খুব সকালে উঠে প্রথমে যথাসময়ে ফজরের নামাজ আদায় করে নিতে হবে। পারিবারিক ঝামেলামুক্ত হয়ে নিজেও আতর সুগন্ধি ব্যবহার করবেন। ফিতরা ওয়াজিব হলে ফিতরা আদায় এবং দান-খয়রাত করতে হবে। নারীদের জন্য ঈদের নামাজ ওয়াজিব নয়। যদি নামাজ আদায়ের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা ঈদগাহে থাকে তবে তারাও নামাজ আদায় করতে পারেন। ঈদের আনন্দ ও ভালোবাসা পরিবারের মধ্যে বিলিয়ে দিতে পারেন একজন সফল নারী। নারীরা তাদের আমলটুকু সুন্দর ও পরিচ্ছন্নভাবে পালন করলেই গোটা সমাজ ব্যবস্থা হবে সুশৃঙ্খল। সুতরাং ঘরকে সুন্দর ও সুশৃঙ্খল করা একজন দায়িত্বশীল নারীর প্রধান কাজ।

ঈদের দিনের আমল

ঈদের দিনের আমল

ঈদুল ফিতর নেক বান্দাদের জন্য খুশির দিন। যারা রোজা পালন করেছেন তাদের জন্য আনন্দ ও উত্সবের দিন হচ্ছে ঈদুল ফিতর। আর পাপী-তাপীদের জন্য এই দিনটি হলো শাস্তি ও আজাবের। সাহাবি হজরত ওয়াহাব ইবনে মুনাব্বিহ (রা.) ঈদের দিন কাঁদছিলেন। কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, আজ খুশির দিন ওই ব্যক্তির জন্য, যার রোজা কবুল হয়েছে। ঈদুল ফিতরের দিন হলো পুরস্কার লাভের দিন। এদিন একদল ফেরেশতা দাঁড়িয়ে যান এবং বলতে থাকেন, ‘হে মুসলিম সম্প্রদায়! তোমরা দয়াময় প্রভুর দিকে ছুটে চলো। তিনি তোমাদের কল্যাণ দান করবেন। তিনি তোমাদের পুরস্কার দেবেন।’
ঈদের পূর্ণাঙ্গ আনন্দ-খুশি ও কল্যাণ অর্জন করতে হলে আরও ঘনিষ্ঠ করতে হবে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক, ঘনিষ্ঠ ও অন্তরঙ্গ করতে হবে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে হৃদ্যতা ও ভালোবাসার সম্পর্ক। উষ্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে বন্ধু-বান্ধব স্বজনদের সঙ্গে সহমর্মিতা ও সুন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে।
ঈদকে একটি পবিত্র উত্সব হিসেবে পালন করতে হবে। এর সুন্নত তরিকা হলো ঈদের নামাজের আগে গোসল করে নেয়া, ভালো পোশাক পরে আতর-সুগন্ধি মেখে ঈদগাহে যাওয়া, সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব হলে ঈদের নামাজের আগে তা আদায় করে দেয়া, পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া, সম্ভব হলে এক রাস্তায় যাওয়া, অপর রাস্তা দিয়ে ফিরে আসা, ঈদগাহে যাওয়ার আগে মিষ্টিমুখ করে নেয়া, ঈদগাহের দিকে ধীরস্থিরভাবে যাওয়া, নামাজ শেষে আত্মীয়-স্বজনের কবর জিয়ারত করা, ঘরে ফিরে চার রাকাত নফল নামাজ পড়া। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা তোমাদের ঈদকে তাকবির দ্বারা সৌন্দর্যমণ্ডিত কর।’ রাসুল (সা.) আরো ইরশাদ করেছেন, পাঁচটি রাত জেগে যে ব্যক্তি ইবাদত করবে, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হবে। রাতগুলো হলো—১. জিলহজের রাত, ২. আরাফার রাত, ৩. ঈদুল আজহার রাত, ৪. ঈদুল ফিতরের রাত, ৫. মধ্য শাবানের রাত। সুতরাং ঈদুল ফিতরের রাতে ইবাদত করা খুবই পুণ্যময় কাজ।
ঈদের অনাবিল সুখ-আনন্দ শুধু রোজাদারদের জন্য। যারা ইচ্ছাকৃত রোজা ছেড়ে দিয়েছেন তাদের জন্য এ আনন্দ নয়। ঈদের আনন্দ-খুশিতে ভরে উঠুক সারাদেশ, সমগ্র মুসলিম উম্মাহ।
নাজিয়া তাবাসসুম

মঙ্গলবার, ৩১ আগস্ট, ২০১০

সাহাবীদের রোজা পালন

সাহাবীদের রোজা পালন
-হোসাইন আল-খালদুন

সফরের এবং যুদ্ধের মত সংকটময় মুহূর্তেও সাহাবায়ে কিরাম সিয়াম ছাড়তেন না। যেমন আবূ বকর (রা.)-এর যুগে ইমামার যুদ্ধে এক সাহাবী আবদুলস্নাহ ইবনে মাখরামাহ (রা.) সিয়াম অবস্থায় যুদ্ধ করতে করতে খুব আঘাত পেয়ে যমীনে নেতিয়ে পড়েন। তাঁকে দেখে সাহাবী আবদুলস্নাহ ইবনে ওমর (রা.) তাঁর কাছে এলেন। তখন যখমে জর্জরিত ও পিপাসায় ব্যাকুলিত ইবনে মাখরামাহ (রা.) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, এমতাবস্থায় সিয়াম ভাঙ্গা যাবে কিনা? তিনি বললেন, হঁ্যা। তখন ইবনে মাখরামাহ (রা.) বললেন তাহলে ভাই! ঢালে করে একটু পানি এনে দাও। ইবনে ওমর (রা.) গেলেন এবং একটি হাওজ থেকে আঁজলভরে চামড়ার ঢালটি ভরলেন। অতঃপর পানি নিয়ে তিনি যখন এলেন তখন ইবনে মাখরামাহ (রা.) যখমে জর্জরিত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। ফলে তিনি রক্তাক্ত দেহে মাটিতে লুটোপুটি খেয়ে শহীদ হয়ে আলস্নাহ রাব্বুল 'আলামীনের কাছে ইফতার করতে গেলেন। (তারীখে বুখারী, ইসা-বাহ- ৩য় খণ্ড ২৬৬ পৃষ্ঠা) আর এক সাহাবী ইবনে আবী হাইয়্যাহ আহমাসী (রা.) একদা সিয়াম অবস্থায় যুদ্ধের মাঠে লড়ছিলেন। ভীষণ যুদ্ধ হচ্ছিল। লড়তে লড়তে তিনি আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে পড়লেন। তাঁর সঙ্গীরা তাকে নিজেদের জায়গায় নিয়ে আসলেন। অতঃপর তাঁরা তাঁকে পানি পান করতে দিলেন, কিন্তু সিয়াম ভেঙ্গে যাবে বলে তিনি তা পান করলেন না। কিছুক্ষণ পর তিনি দুনিয়া ছেড়ে চলে গেলেন তাঁরই কাছে যাঁর জন্য তিনি সিয়াম রেখেছিলেন। (ইসা-বাহ ফী মা'রি ফাতিস সাহা-বাহ)

সবাই দুনিয়াতে রোজা রাখে এবং দুনিয়াতেই ইফতার করে। কিন্তু এ সাহাবী (রা.) দুনিয়াতে রোজা রেখে আখিরাতে আলস্নাহ রাব্বুল 'আলামীনের কাছে ইফতার করতে গেলেন। তাই ওমর (রা.) যখন তাঁর শহীদ হবার খবর শুনলেন তখন বললেন, তিনি দুনিয়া দিয়ে আখিরাতকে ক্রয় করে নিয়েছেন।

হায়! আমার সিয়াম ত্যাগকারী ভাইয়েরা এত্থেকে কোন শিক্ষা নেবেন কি? আর তাঁদের সিয়াম রাখার সুমতি হবে কি?

বিশিষ্ট হাদীস বিশারদ হাফেজ ইমাম যাহাবী (রহ.) বলেন, যে ব্যক্তি বিনা অসুখে রমজানের সিয়াম ছেড়ে দেয় বরং তার ইসলাম সম্পর্কে সন্দেহ আছে। লোকেরা তাকে যিনদীক মনে করে। (ফিকহুস সুন্নাহ, ১ম খন্ড-৪৩৪ পৃষ্ঠা)

তিনি (স.) বলেন: আমার উম্মাতকে রমজান মাসে পাঁচটি জিনিস দান করা হয়েছে, যা আমার আগে কোন নাবীকেই দান করা হয়নি। প্রথম এই যে, রমজান মাসের প্রথম রাত যখন আসে তখন আলস্নাহ রাব্বুল 'আলামীন তাদের প্রতি দৃষ্টিপাত করেন। আর যার উপর তাঁর দৃষ্টি পড়ে তাকে তিনি কখনো শাস্তি দেবেন না। দ্বিতীয় হল, তাদের মুখের গন্ধ আলস্নাহর নিকট মেশ্কের সুবাসের চেয়ে সুগন্ধ। তৃতীয় হল, ফেরেশতারা তাদের জন্য প্রত্যেক দিন ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকে। চতুর্থ হল, আলস্নাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা জান্নাতকে নির্দেশ দিয়ে বলেন, তুমি আমার বান্দাদের জন্য তৈরী হও এবং সজ্জিত হও। অতি শীঘ্রই তারা দুনিয়ার ক্লান্তি থেকে আমার ঘরে ও আমার সম্মানে স্বস্তি চাইবে। পঞ্চম হল, যখন শেষ রাত আসে তখন তাদেরকে ক্ষমা করে দেয়া হয়। একজন সাহাবী জিজ্ঞেস করল, এটা কি ক্বদরের রাত? তিনি বললেন, না। তুমি কি মজদুরদের দেখনি যে, তারা যখন কাজ থেকে অবসর পায় তখন তাদের মজুরি পুরোপুরি প্রদান করা হয়। (বাইহাকীর শুআবুল ঈমান কানযুল উমমা-ল ৩০২ পৃষ্ঠা)

আবূ সাঈদ খুদরীর (রা.) বর্ণনায় রাসূলুলস্নাহ (স.) বলেন: নিশ্চয় আলস্নাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার কাছে (রমজানের) প্রত্যেক দিনে ও রাতে (জাহান্নাম থেকে) মুক্তি দেয়া অনেক দাস রয়েছে। ওর প্রত্যেক দিন ও রাতে প্রত্যহ মুসলিমের জন্য কবূলযোগ্য একটি দু'আ অবশ্যই রয়েছে। (মুসনাদে বাযযার, সহীহুত তারগীব, ১ম খণ্ড, ৪৯১ পৃষ্ঠা, হাদীস নম্বর-৯৮৮)

বর্জনকারীরাও কাফিরে পরিণত হয়। উক্ত দুই নির্দেশ লঙ্ঘনকারীর হুকুমের বিষয় বিনা ব্যবধানে একই। সালাত দিন ও রাতের কর্তব্য, যা প্রতিদিনে পাঁচবার এবং সিয়াম বাৎসরিক কর্তব্য, যা সারা বছরের মাত্র একবার অপরিহার্য। (বাযলুল মানফাআহ, ৭৮ পৃষ্ঠা)

আবূ 'উমামাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুলস্নাহ (স.) বলেনঃ একদা আমি স্বপ্নে দেখলাম যে, একটি সম্প্রদায় উল্টোভাবে ঝুলছে। তাদের গালটি ফাড়া। তা থেকে রক্ত ঝরছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এরা কারা? বলা হয় এরা তারা, রমজান মাসে বিনা ওজরে যারা সিয়াম রাখে না। (সহীহ ইবনে খুযাইমাহ, ৩য় খণ্ড, ২৩৭ পৃষ্ঠা, ইবনে হিব্বান, বাশারাতুল ফোসসাক- ৩৭ পৃষ্ঠা) রাসূলুলস্নাহ (স.) বলেনঃ বিনা ওজরে রমজানের সিয়াম ত্যাগকারী অবিশ্বাসীরূপে পরিগণিত। (ফিকহুস সুন্নাহ, ১ম খণ্ড, ৪৩৪ পৃষ্ঠা) যে ব্যক্তি শারীয়তী ওর ছাড়া এ মাসের একটি রোজাও ছেড়ে দিবে সে যদি সারা জীবনও সিয়াম পালন করে তবুও তার পাপের খেসারত হবে না। (বুখারী)।

সাহারী ও সেহ্রী শব্দের বিশেস্নষণ

সাহারী ও সেহ্রী শব্দের বিশেস্নষণ

-হোসাইন আল খালদুন

আরবী সাহরুণ অর্থ রাতের শেষ ভাগ। যেমন আলস্নাহ রাব্বুল 'আলামীন বলেন নাজ্জাইনাহুম বিসাহারিন অর্থাৎ আমি তাদের (লূত নবীর পরিবারবর্গকে) রাতের শেষ ভাগে মুক্তি দিয়েছিলাম। (সূরা কামার ৫৪ঃ ৩৪ আয়াত, তফসীর ইবনে কাসীর ৪র্থ খণ্ড, ২৬৬ পৃষ্ঠা)

একটি হাদীসে প্রিয় নবী (সা:) বলেন, আমাদের এবং আহলে কিতাবদের সিয়ামের মধ্যে পার্থক্য আকলাতুস সাহারী বা শেষ রাতের খাওয়া। (মুসলিম ১ম খণ্ড, ৩৫০ পৃঃ, তিরমিযী, ১ম খণ্ড, ৮৯ পৃঃ, আবূ দাউদ ১ম খণ্ড ৩২০ পৃঃ মিশকাত, ১৭৫ পৃঃ)। উক্ত আয়াত ও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সিয়াম রাখার উদ্দেশ্যে ভোর রাতে যে পানাহার করা হয় তাকে সাহারী বলা হয়। ঐ উচ্চারণটা 'সেহরী' কিংবা 'সাহ্রী' ঠিক নয়। কারণ সেহরুণ শব্দের অর্থ জাদু, ধোঁকা প্রভৃতি। যেমন কুরআনে আছে, ইয়ালামুনা নাসাস সেহ্রা" তারা লোকদেরকে জাদু শেখাত। সূরা বাকারা ২ঃ ১০২ আয়াত)

আর সাহরুণ শব্দের অর্থ ফুসফুস, বুকের উপর ভাগ, কণ্ঠনালীর নিম্নভাগ প্রভৃতি। যেমন একটি হাদীসে আছে 'আয়িশা (রা:) বলেন, নবী (সা:) আমার বুক ও কণ্ঠনালীর মাঝে মারা গিয়েছিলেন। (আননিহা-য়াহ ফী গালীবিল হাদীস ওয়াল আ-সার, ২য় খণ্ড, ১৬১ পৃঃ)

আলস্নাহর রাসূল (সা:) বলেন, তোমরা সাহারী খাও কারণ সাহারীর মধ্যে বরকত রয়েছে। (বুখারী, মুসলিম)

তিনি (সা:) বলেন, আহলে কিতাব অর্থাৎ ইয়াহূদী-খৃষ্টান ও আমাদের সিয়ামের মধ্যে পার্থক্যই হল সাহারী খাওয়া (মুসলিম, মিশাকাত, ১৭৫ পৃঃ) সিয়াম ও রামাযান

এ দু'টি হাদীস প্রমাণ করে, যারা সাহারী না খেয়ে সিয়াম রাখে তাদের সিয়াম এবং ইয়াহূদী ও নাসারাদের সিয়ামের মধ্যে কোন পার্থক্য থাকে না। আর যারা সাহারী না খায় সেই সিয়াম পালনকারী ব্যক্তি বরকত থেকেও বঞ্চিত হয়। সুতরাং যারা সিয়াম রাখেন তাদেরকে সাহারী অবশ্যই খেতে হবে। যদি কেউ একথা বলেন যে, ইফতারের পর ভাত খেলে বা অন্য কোন কারণে তার পেট ভরে থাকে তার সাহারী খাবার ইচ্ছা মোটেই হয় না। কিংবা সাহারী খেলে বদ হজম হয় বা অন্য কোন অসুবিধা দেখা দেয় তাহলে তিনি ইয়াহূদী ও নাসারা না হবার স্বার্থে ইফতারের পর কিছু খাবেন না, বরং কেবল সাহারীতে খাবেন। কারো যদি কোন কারণে এক আধ দিন সাহারী খাবার রুচি না হয় তাহলে তিনি অন্ততঃপক্ষে একটা খেজুর ও এক ঢোক পানি সাহারীর নিয়্যাত করে খেয়ে নিবেন। যাতে করে ইয়াহূদী ও নাসারার সাথে মিল না হয় এবং তিনি এ বরকত থেকেও বঞ্চিত না হন।

রবিবার, ২৯ আগস্ট, ২০১০

সাহারী ইফতারের মাহাত্ম্য ও তাৎপর্য



সাহারী ইফতারের মাহাত্ম্য ও তাৎপর্য

আলস্নাহ রাব্বুল আলামীন দয়া ও করুণার আধার। তিনি কখনই চান না তার কোন বান্দাকে শাস্তি দিতে। বরং তিনি সবসময় চান তার বান্দাদেরকে পাপমুক্ত করে জান্নাত লাভের উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে। সেজন্য তিনি ক্ষমা লাভের অবাধ সুযোগ দিয়েছেন প্রতি বছর রমজানুল মোবারকের মাধ্যমে। এর মধ্যে ইফতার ও সাহারী অন্যতম অবদান। নিম্নে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-

ইফতার: রসূল (স.) বলেনঃ কেউ যদি রমজান মাসে কোন রোজাদারকে ইফতার করায় তাহলে ঐ ইফতার করানোটা তার গুনাহ মাফের ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির কারণ হবে এবং সে একটি রোজার সওয়াব পাবে অথচ রোজা পালনকারীর নেকী মোটেই কমানো হবে না। সাহাবীরা বলেন, হে আলস্নাহর রসূল (স.) আমাদের এমন সংস্থান নেই, যা দিয়ে আমরা কাউকে ইফতার করাতে পারি? তিনি (স.) বলেন, আলস্নাহ তাকেও এই সওয়াব দেবেন, যে ব্যক্তি কোনো রোজা পালনকারীকে এক ঢোক দুধ অথবা একটা শুকনো খেজুর কিংবা এক চুমুক পানি দিয়েও ইফতার করাবে আর যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে পরিতৃপ্তিসহকারে খাওয়াবে আলস্নাহ তাকে আমার "হাউজে কাওছার" থেকে এমনভাবে পানি পান করাবেন যার ফলে সে জান্নাতে না পেঁৗছানো পর্যন্ত আর তৃষ্ণার্ত হবে না। (বায়হাকী ওয়াবুল ঈমান, মেশকাত ১৭৪ পৃষ্ঠা)

আলস্নাহর রসুল (স.) বলেনঃ লোকেরা ততক্ষণ কল্যাণে থাকবে যতক্ষণ তারা ইফতার জলদি করবে। (বুখারী, মুসলিম ১ খণ্ড-৩২১ পৃঃ মিশকাত ১৭৫ পৃঃ) আলস্নাহ রাব্বুল আলামীন বলেনঃ আমার নিকট সবচেয়ে প্রিয় সেই বান্দা যে ইফতার সঠিক সময়ে করে। (তিরমিযী ১ম খণ্ড, ৮৮ পৃঃ, মেশকাত ১৭৫ পৃঃ) সমস্ত নবীরও স্বভাব ছিল ইফতারে দেরী না করা। (তাবারানী কাবীর, মাজমাউজ যাওয়ায়িদ ২য় খণ্ড,. ১০৫ পৃঃ) এ হাদীসগুলো প্রমাণ করে যে, ইফতারের নির্দিষ্ট সময় থেকে দেরী করা মোটেই উচিত নয়। যদি কেউ ইচ্ছা করে ইফতারে দেরী করে তাহলে সে রসূলুলস্নাহ (স.)-এর নির্দেশ অনুযায়ী কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হবে এবং আলস্নাহর নিকট অপ্রিয় হবে। সুতরাং এ ব্যাপারে আমাদের সচেতন হওয়া উচিত।

আব্দুলস্নাহ ইবনে আবী আওফ (রা.) বলেন, একবার আমরা (রমজানে) আলস্নাহর রসূল (স.)-এর সাথে সফরে ছিলাম (তখন তিনি রোজা অবস্থায় ছিলেন)। অতঃপর (সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর) তিনি একজন সাহাবীকে বললেন, নামো এবং আমার জন্য ছাতু গুলে দাও। সাহাবী (সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর) লালিমা দেখে বলল, হে আলস্নাহর রসূল (স.) ঐ যে সূর্য (দেখা যায়) তিনি (তাঁর কথায় কান না দিয়ে) আবার বললেন, তুমি নামো এবং আমার জন্য ছাতু গুলো। এভাবে তিনবার বললেন। অতঃপর তিনি (বেলাল রা.) নামলেন এবং রসূলুলস্নাহ (স.)-এর জন্য ছাতু গুললেন। তিনি তা পান করলেন। তারপর তিনি পূর্বদিকে ইশারা করে বললেন, যখন তোমরা দেখবে যে, রাত ঐ দিক থেকে আসছে তখন বুঝবে সিয়াম পালনকরীর ইফতারের সময় হয়ে গেছে। (বুখারী ২৬০ পৃঃ মুসলিম ১ম খণ্ড ৩৫১ পৃঃ)

নবী (সঃ) মাগরিবের সালাত কখন পড়তেন সে সম্পর্কে রাফে ইবনে খাদীজ (রা.) বলেন, আমরা রসূলুলস্নাহ (স.)-এর সাথে মাগরিবের সালাত পড়তাম। তারপর আমরা কেউ তীর ছুঁড়লে সেই তীর পড়ার জায়গাটা দেখতে পেতাম। (বুখারী, মুসলিম, মেশকাত ৬০ পৃঃ) এ হাদীসটি প্রমাণ করে যে, নবী (স.)-এর মাগরিবের সালাত পড়ার পরও আলো থাকতো। একটু অন্ধকার হোক বলে তিনি মোটেই দেরী করতেন না। আনাস (রা.) বলেন, নবী (স.) মাগরিবের সালাতের আগেই ইফতার করতেন। (তিরমিযী, আবূ দাউদ, মেশকাত ১৭৬ পৃঃ) অন্য বর্ণনায় আছে, তিনি (স.) ইফতার না করা পর্যন্ত মাগরিবের সালাত পড়তেন না। যদিও তার ইফতার এক ঢোক পানি দিয়েও হতো। (সহীহ ইবনে খুযায়মা ৩য় খণ্ড, ২৭৬ পৃঃ) এ হাদীস দুটি প্রমাণ করে যে, মাগরিবের সালাত পড়ার আগে ইফতার করতে হবে। রসূল (স.) বলেন, আমার উম্মত ততক্ষণ আমার সুন্নাত ও নিয়মের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে যতক্ষণ তারা ইফতারের জন্য তারকা উদয়ের অপেক্ষা করবে না। (ইবনে খুযায়মা ৩য় খণ্ড, ২৭৫ পৃঃ)

রসুলুলস্নাহ (স.) বলেনঃ রমজানের প্রত্যেক রাতে আলস্নাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা বহু জাহান্নামীকে মুক্তি দেন (তিরমিযী ১ম খন্ড ৮৬ পৃ, আহমাদ, মেশকাত ১৭৩পৃঃ) । অন্য হাদীস দ্বারা জানা যায় যে, জাহান্নাম থেকে মুক্তি বিশেষ করে ইফতারের সময় হয়। (ইবনে মাজাহ ১২০পৃঃ, মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৪র্থ খণ্ড ১৭৬পৃঃ) রোজাদারের দু'আ সম্পর্কে নবী (স.) বলেনঃ সিয়াম পালনকারীর দু'আ ফেরত দেয়া হয় না। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ৩য় খন্ড, ৭ম পৃঃ) অন্য হাদীসে বলা হয়েছে যে, বিশেষ করে ইফতারের সময় তা রদ হয় না। যেমন তিনি (স.) বলেন, ইফতারের সময়ে দু'আ খুব তাড়াতাড়ি কবুল হয়। (বায়হাকী) উলেস্নখিত হাদীসগুলো আমাদের শিক্ষা দেয় যে, ইফতারের সামগ্রী সাজাতে কিংবা মিসওয়াক করতে অথবা আজেবাজে গল্পগুজবে সময় নষ্ট না করে ইফতারের ১০/১৫ মিনিট আগে ইফতারের খাদ্যদ্রব্য নিয়ে বসা এবং দু'আ তাসবীহ পাঠে রত হওয়া দরকার। এ সময় আলস্নাহ তায়ালা যেহেতু প্রতিদিন অসংখ্য জাহান্নামীকে মুক্তি দেন। সে কারণে প্রার্থনারত রোজাদারগণ জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে যেতে পারেন। হাদীসে খেজুর ও পানি দিয়ে ইফতার শুরু করার কথা বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে ইবনে কাইয়্যেম (রহ.) বলেন, খালি পেট মিষ্টি জিনিস পছন্দ করে এবং এর দ্বারা তা শক্তি সঞ্চয় করে। বিশেষ করে দৃষ্টিশক্তি এর দ্বারা সবল হয়। তাই খেজুর দিয়ে ইফতার শুরু করতে বলা হয়েছে। পানির ব্যাপার হলো রোজা রাখার ফলে পেটের মধ্যে শুষ্কতা সৃষ্টি হয়। পানি দ্বারা তা সতেজ হয়। এজন্য একজন ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত ব্যক্তির উচিত খাওয়া শুরু করার আগে সামান্য পানি পান করা, তারপর খাওয়া শুরু করা। আর তা যদি খেজুর ও পানি দিয়ে হয় তাহলে হূদয়কে সুস্থ করার ব্যাপারে একটা বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে। (যাদুল মা'আদ ১ম খণ্ড, ১৬০পৃঃ)

সাহারী:নবী (স.) বলেন, তোমরা দিনে শুয়ে রাতের সালাতের জন্যে এবং সাহারী খেয়ে দিনে রোজা রাখার জন্যে সাহায্য গ্রহণ কর। (ইবনে মাজা, ১২৩ পৃঃ, ইবনে খুযায়মা, ৩য় খণ্ড, ২১৪ পৃঃ মুসান্নাফ আঃ রাযযাক, ৪র্থ খণ্ড, ২২৯পৃঃ) নবী (স.) এও বলেন- তোমরা সাহারী খাও, যদিও তা এক ঢোক পানি হয়। (মুসান্নাফ আঃ রাযযাক, ৪র্থ খণ্ড, ২২৮ পৃঃ ইবনে আবী শায়বা ৩য় খণ্ড. ৮ম পৃঃ) অথবা একটা খেজুর হয় কিংবা কিসমিসের দানা হয়। (তাবারানী, আওনুল বারী ৪র্থ খণ্ড, ৩২১পৃঃ) কারণ, যারা সাহারী খায় তাদের ওপর আলস্নাহর রহমত বর্ষিত হয় এবং ফেরেশতারা তাদের জন্য মাগফিরাত কামনা করে। (আহমাদ, নায়লুল আওতার ৪র্থ খণ্ড, ১০৫ পৃঃ, ইবনে হিব্বান, তালখীসুল হাবীর ১৯৩ পৃঃ) রসুল (স.) তার সাহাবীদের বললেন, তোমরা এটাকে মোটেই ছেড়ো না । (মুসনাদে আহমাদ, নাসাঈ ১ম খণ্ড, ২৩৫)

সামুরাহ ইবনে জুনদুব (রা.) বলেন, রসুলুলস্নাহ (স.) বলেছেন ঃ বেলালের আজান তোমাদেরকে সাহারী খেতে কখনই যেন বাধা না দেয় (মুসলিম, তিরমিযী, মেশকাত, ৬৬ পৃঃ) ইবনে ওমর (রা.)-এর বর্ণনায় নবী (স.) বলেন ঃ বেলাল রাতে (সাহারী খাবার) আজান দেয়। তাই তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত খাও এবং পান কর যতক্ষণ ইবনে উম্মে মাখতুমের (ফজরের) আজান শুনতে না পাও। (বুখারী, মুসলিম, মেশকাত ৬৬ পৃষ্ঠা, নাসাঈ ১ম খণ্ড, ৭৫পৃঃ)

যায়েদ ইবনে সাবিত (রা.) বলেন, আমরা রসুলুলস্নাহ (স.)-এর সাথে সাহারী খেতাম, তারপরে সালাতে দাঁড়াতাম। কেউ যায়েদকে জিজ্ঞেস করলেন, সাহারী ও ফজরের নামাজের মধ্যে কত সময়ের পার্থক্য থাকতো? তিনি বলেন, ৫০টি আয়াত পড়ার সময় পরিমাণ। (বুখারী ২৫৭ পৃঃ, মুসলিম ১ম খণ্ড ৩৫০ পৃঃ, ইবনে মাজাহ ১২৩পৃঃ) সাধারণতঃ ৫০টি মধ্যম শ্রেণীর আয়াত পড়তে ১৫/২০ মিনিট সময় লাগে। তাই প্রতীয়মান হয় যে, আলস্নাহর রসুল (স.) ও সাহাবায়ে কেরাম ফজরের নামাজের মাত্র ১৫/২০ মিনিট আগে সাহারী খাওয়া শেষ করতেন। অতএব আমাদেরও উচিত রসুলুলস্নাহ (স.)-এর সুন্নত পালনার্থে ফজরের সালাতের ১৫/২০ মিনিট আগে সাহারী খাওয়া শেষ করা। দেরী করে সাহারী খাওয়ার ব্যাপারে নবী (স.) বলেন ঃ নবুওতের ৭০ ভাগের এক ভাগ হলো দেরীতে সাহারী খাওয়া এবং ইফতারে জলদি করা। ইফতারের নির্দিষ্ট সময় হলে ইচ্ছা করে বিলম্ব না করা। (মুসান্নাফ আঃ রাযযাক, ৪র্থ খন্ড, ২৩২ পৃঃ) সমস্ত নবীদেরই আদর্শ ছিল ইফতারে তাড়াতাড়ি এবং সাহারীতে দেরী করা। (মুসান্নাফ আঃ রাযযাক, ৪র্থ খণ্ড, ২৩২ পৃঃ ইবনে আবী শায়বা, ৩য় খণ্ড, ১৩ পৃঃ নাসবুর রা-য়াহ ২য় খণ্ড, ৪৭০ পৃঃ)

এজন্যই নবী (স.) সাহারীর খাবারকে বরকতময় প্রভাতী খাবার নামে অভিহিত করেছেন। (আবু দাউদ, নাসাঈ, মেশকাত, ১৭৬ পৃঃ ইবনে খুযাইমা ৩য় খণ্ড, ২১৪পৃঃ ইবনে আবী শায়বা, ৩য় খণ্ড ৯পৃঃ)

গ্রন্থনা
মাওলানা জাকির হোসাইন আজাদী

শনিবার, ২৮ আগস্ট, ২০১০

স্বাস্থ্যসম্মত সেহ্রি-ইফতারি


স্বাস্থ্যসম্মত সেহ্রি-ইফতারি
রোজার সময় সাধারণত যে ধরনের খাবার আমরা খাই, তা কতটুকু স্বাস্থ্যকর, তাদের পুষ্টিমূল্যই বা কেমন, তা নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. এম আখতারুজ্জামান-এর পরামর্শ তুলে ধরছেন হুমায়রা ফেরদৌস
সারা দিন রোজা রাখার পর ইফতারে আমাদের প্রত্যেকেরই কমবেশি ভাজা ও তেলযুক্ত বিভিন্ন খাবার যেমন পিঁয়াজু, পিঁয়াজ-মরিচ ও মুড়িসহযোগে লোভনীয় ছোলা ভাজা খাওয়া হয়। জিহ্বায় পানি আনা এসব মুখরোচক খাবার থেকে নিজেদের বিরত রাখা সত্যি বেশ কঠিন। তবে এসব খাবারের পুষ্টিমূল্য সম্পর্কে জ্ঞান থাকলে ইফতারে পদ নির্বাচন যেমন সুবিধাজনক হয় তেমনি স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী হয়।
ইফতারে বিভিন্ন ধরনের খাবার এবং এর পুষ্টিমূল্য
আমাদের দেশে ইফতারের অত্যন্ত সাধারণ একটি পদ হলো পিঁয়াজু। এটি ডালের সঙ্গে পেঁয়াজ ও অন্যান্য মসলা মিশিয়ে তেলে ভাজা একটি খাবার। আমরা বাড়িতে যে পদ্ধতিতে বুটের ডালের সঙ্গে মাংস মিশিয়ে টিকিয়া প্রস্তুত করি, পিঁয়াজুর প্রস্তুতপ্রণালীও অনেকটা সে রকম। পিঁয়াজু তৈরিতে বিভিন্ন ধরনের ডাল বেটে ব্যবহার করা হয়। ব্যবহৃত ডালের মধ্যে আছে মসুর, খেসারি প্রভৃতি। অনেকে মসুর ডালের পরিবর্তে বুটের ডালও ব্যবহার করে থাকেন। সব ধরনের ডালই হলো উদ্ভিজ্জ আমিষ, যা কি না দেহের ক্ষয় পূরণে সাহায্য করে। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, সারা দিনের রোজা শেষে ডালের বড়া বা পিঁয়াজু আমাদের দেহের জন্য কি আদৌ স্বাস্থ্যসম্মত? এর উত্তর নির্ভর করে আপনি পিঁয়াজু ভাজার জন্য কী ধরনের তেল ব্যবহার করছেন এবং দৈনিক কয়টি পিঁয়াজু খাচ্ছেন তার ওপর।
প্রতিদিনের পিঁয়াজু ভাজার জন্য যদি একই তেল একের অধিকবার ব্যবহার করা হয়, তাহলে সেটা স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বাইরের খোলা জায়গায় ভাজা পিঁয়াজুর ক্ষেত্রে ঠিক এ ব্যাপারটাই ঘটে থাকে। কারণ সেখানে একই তেল ভাজার জন্য বারবার ব্যবহার করা হয়। আবার কেউ যদি প্রতিদিনই একসঙ্গে অনেক পিঁয়াজু খেতে থাকেন, সেটাও পরবর্তী সময়ে এসিডিটিসহ দেহে নানা জটিলতা সৃষ্টি করবে। এ জন্য পিঁয়াজু খাওয়ার সময় পরিমাণের দিকে অবশ্যই লক্ষ রাখতে হবে।
এবার আসা যাক ছোলা ভাজা বা বুট ভাজা প্রসঙ্গে। এটিও যেহেতু ডাল দিয়েই প্রস্তুত করা হয়, তাই এরও পুষ্টিমূল্য পিঁয়াজুর মতোই। উদ্ভিজ্জ আমিষ হওয়ার কারণে বুটও আমাদের দেহের ক্ষয়রোধে সাহায্য করে। উপরন্তু ছয়-সাত ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখার ফলে এতে থাকা এনজাইমগুলো সক্রিয় হয়ে যায়, যা দেহের জন্য দারুণ উপকারী। অবশ্য ছোলার সঙ্গে ব্যবহৃত মুড়ির ব্যাপারে অধিক সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। কারণ বাজার থেকে কেনা মুড়িতে অনেক ধরনের ধুলাবালি-ময়লা মিশে যায়, যা পরে পেটের পীড়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অনেকেই আবার ইফতারে কাঁচা ছোলা খেয়ে থাকেন, সেটাও শরীরের শক্তিবর্ধনে বেশ সহায়ক। পিঁয়াজু বা ছোলা ছাড়াও আমরা বেসন দিয়ে ভাজা বেগুনি, আলুনি ইত্যাদি খেয়ে থাকি। বেসন ডালের গুঁড়ো দিয়ে প্রস্তুত করা হয় বলে এরও কার্যকারিতা পিঁয়াজু বা ডালের মতোই। কিন্তু তেলের ব্যাপারে অবশ্যই লক্ষ রাখা জরুরি। আর কোনো খাবারই যেন খুব বেশি পুড়ে না যায় সেদিকে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। কারণ অধিক পরিমাণে জারিত বা পুড়ে যাওয়া খাবার স্বাস্থ্যের জন্য হানিকর।
এ ছাড়া ইফতারের সময় অনেকেই বিভিন্ন ধরনের ফল যেমন শসা, কলা, খেজুর খেয়ে থাকেন, সেগুলোও শরীরের বিভিন্ন ধরনের ভিটামিনের অভাব পূরণ করে থাকে। খেজুর সহজপাচ্য হওয়ায় এটি হজমে বিশেষভাবে কার্যকর। ইফতারের আয়োজনে দু-একটি মিষ্টি-জাতীয় খাবার যেমন জিলাপি বা মিষ্টি থাকলে সেটা শর্করার অভাব পূরণে সাহায্য করবে। কিন্তু ক্ষতিকারক রং দিয়ে প্রস্তুত করা জিলাপি বা মিষ্টি গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন। তবে রোজার সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে দিকটি লক্ষ রাখতে হবে সেটি হলো, রক্তের তারল্য ও স্বাভাবিক তাপমাত্রা বজায় রাখা। এ জন্য প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে, শরবত-জাতীয় খাবার ইফতারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

কী পরিমাণ ইফতার করা স্বাস্থ্যসম্মত
অনেকেই মনে করে থাকেন, সারা দিন যেহেতু না খেয়ে থাকা হয়, তাই দেহের ঘাটতি পূরণে ইফতারের পর থেকে প্রচুর পরিমাণ খাওয়াদাওয়া করা উচিত, যা একটি ভুল ধারণা। এ ছাড়া রোজার দিনে অন্যান্য দৈনন্দিন কার্যক্রম বন্ধ করে বাসায় শুয়ে-বসে কাটানোও ঠিক নয়। এ সময়ও অন্য দশটি দিনের মতো সব কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকা উচিত।
স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য একজন মানুষের দৈনন্দিন ১৮০০ কিলো ক্যালরি শক্তি প্রয়োজন। লিঙ্গ, বয়স, ওজন, উচ্চতা ও কাজের ধরনভেদে এই পরিমাণের সামান্য তারতম্য হয় ঠিকই, কিন্তু রোজা রাখা হয় বলে শরীরের ক্যালরির চাহিদা বাড়ে না। এ সময় যদি চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ করা হয়, তাহলে উপকারের চেয়ে অপকারই হবে বেশি। বেশি খাবার খেলে তা চর্বি আকারে শরীরে জমা হয়। বিশেষ করে ইফতারের সময় একেবারে ভরপেট খেয়ে ফেলা কোনোমতেই বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক নয়। বরং ইফতারের দুই-আড়াই ঘণ্টা পর আমরা যে রাতের খাবারটুকু খেয়ে থাকি সেটা একটু ভারী করা যেতে পারে; কিন্তু তখনো যেন অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া না হয়, সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে।
সেহ্রির খাবার
সেহ্রির খাদ্যতালিকায় থাকবে মোট খাবারের তিন ভাগের এক ভাগ ফলমূল ও শাকসবজি। বাকি তিন ভাগের এক ভাগে রাখুন ভাত, রুটি, পাউরুটি, আলুর মতো কার্বহাইড্রেট-জাতীয় খাবার। এর সঙ্গে প্রোটিন হিসেবে রাখুন মাছ, মাংস, অল্প চর্বিযুক্ত খাবার, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার।
কার্বহাইড্রেট খাবার বাছাইয়ের সময় কমপ্লেক্স কার্বহাইড্রেট রাখলে সারা দিন শরীরে শক্তি পাওয়া যায়। কমপ্লেক্স কার্বহাইড্রেট ধীরে ধীরে দীর্ঘ সময় ধরে শক্তি উৎপাদন করে। ঢেঁকিছাঁটা চাল, বাসমতি চাল, ওট, লাল আটা কমপ্লেক্স কার্বহাইড্রেট-জাতীয় খাবার।
ফাইবারসমৃদ্ধ খাবারও ধীরে ধীরে হজম হয় এবং দীর্ঘ সময় শক্তি সরবরাহ করতে পারে। যেমন_ছোলা-বুট, শিমের বীজ, খোসাসহ আলু, শাকসবজি ও প্রায় সব ধরনের ফলই ফাইবারসমৃদ্ধ।

সতর্ক থাকুন কিছু বিষয়ে
রোজায় কিছু শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। সাধারণত খাবারদাবারে অনিয়ম ও অস্বাস্থ্যকর খাবার থেকেই এ সমস্যা দেখা দেয়।
সারা দিন খাওয়া হয় না; কিন্তু খাবারের কথা চিন্তা করা হয়, ক্ষুধা পায়_ফলে পাকস্থলীতে অন্য স্বাভাবিক দিনের মতোই এসিড নিঃসৃত হয়। কিন্তু পেট খালি থাকে বলে এই এসিড দিয়ে হজম হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় খাবার সেখানে থাকে না। তাই যাঁদের এসিডিটির সমস্যা আছে তাদের তো বটেই; যাঁদের এসিডিটি বা বুকজ্বলা সমস্যা নেই তাঁরাও বুকজ্বলা সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারেন।
ওষুধ খেয়ে বুকজ্বলা সমস্যা কমিয়ে রাখা যায়, তবে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে সমস্যাটি দূর করা বেশি ভালো। যাদের এসিডিটি সমস্যা আছে বা রোজায় খুব বেশি হয় তাঁদের তৈলাক্ত, ভাজাপোড়া, বাসি ও অধিক মসলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। বিশেষ করে ইফতারে। তাঁরা সহজপাচ্য খাবার খেলে উপকার পাবেন। শরবত, খেজুর ইত্যাদির সঙ্গে বিভিন্ন রকম ফল ও কম তেলযুক্ত খাবার তাঁদের জন্য বেশি দরকারি।
না খেয়ে থাকার জন্য যেমন ক্ষুধা লাগে তেমনি পানি পিপাসাও বোধ হয়। এর কারণ পানিশূন্যতা। এ সমস্যাটি প্রায় প্রত্যেক রোজাদারের হয়। প্রস্রাব ও ঘামের মাধ্যমে শরীর যে পরিমাণ পানি হারায় তা দিনের বেলা পূরণ হয় না বলে দিনের শেষভাগে (ইফতারের আগে) প্রবল পানি পিপাসা হয় ও শরীর দুর্বল হয়ে যায়।
অনেকের রোজার দিনে মাথাব্যথা সমস্যা খুব বেশি দেখা যায়। এর কারণও পানিশন্যতা। পাশাপাশি ঘুম কম হওয়া, রেস্ট কম নেওয়া, চা-কফি পান না করাও কারণ হিসেবে কাজ করে।
রোজার সময় পানিশূন্যতা পূরণের জন্য সেহ্রি ও ইফতারে পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। এ পানি একবারে পান না করে বারবার পান করা উচিত। ইফতারের পর থেকে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত বারবার পানি ও তরল খাবার খেতে পারেন। সেহ্রিতেও বেশি করে পানি পান করতে পারেন। বাড়তি সতর্কতা হিসেবে দিনের বেলা রোদ এড়িয়ে চলুন, শারীরিক পরিশ্রমের কাজ কমিয়ে দিন।
অনেকের কোষ্ঠকাঠিন্য বা কনস্টিপেশন হয়। সাধারণত সবজি ও আঁশযুক্ত খাবার কম খাওয়ার কারণে এবং পানিশূন্যতার জন্য এ সমস্যা হয়। যাঁদের বেশি হয় তাঁরা সেহ্রি, ইফতার ও রাতের খাবারে বেশি করে সবজি ও আঁশযুক্ত খাবার খান।
ডায়াবেটিস যাঁদের আছে তাঁরা দুবার করে রক্তে সুগারের মাত্রা পরিমাপ করুন। বিশেষ করে যাঁদের ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত থাকে তাঁদের অবশ্যই এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। যেহেতু ডায়াবেটিস রোগীরা সব ধরনের খাবার ইচ্ছেমতো খেতে পারেন না, তাই কতটা খেতে হবে, কিভাবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে, তা ডাক্তারের কাছ থেকে জেনে নিন।

মনে রাখবেন
এই এক মাসে যেন ইফতারে ও বাহ্যিক আয়োজনের অসুস্থ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে যায় সবাই। ইফতারির আয়োজন কার বাড়িতে কত বড়_সেটাও যেন হয়ে উঠে সামাজিকতা-লৌকিকতার একটা অনুষঙ্গ। খাবারের আয়োজনকে সংক্ষিপ্ত করলে রোজার প্রকৃত উদ্দেশ্য যেমন সফল হবে তেমনি শরীর থাকবে ভালো।

রোগীদের রোজা পালনের উপায়



রোগীদের রোজা পালনের উপায়
-ডা. সাকলায়েন রাসেল
বেশ কিছু অসুখের কারণে রোজা না রাখার কথা বলা আছে, তবে আমরা যারা ততটা অসুস্থ নই বা যারা কোনো কোনো অসুখে কিছুটা আক্রান্ত, তাদের রোজা রাখা সহজ করার জন্য নিচের টিপসগুলো কাজে লাগতে পারে :
পেপটিক আলসার বা এসিডিটি
খালি পেটে থাকলে এসিডিটির সমস্যা বাড়বে_অনেকের ভাবনা এ রকম। তাই রোজা হলে এ ধরনের রোগীরা দুশ্চিন্তায় পড়ে যান রোজা রাখবেন কি না। এ ব্যাপারে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. জাকির হোসেন জানান, রোজা রাখলে এসিডিটি বাড়বে, এমন কোনো সম্ভাবনা নেই। পেপটিক আলসারের রোগীদের প্রধান কাজ হলো নিয়মিত খাবার খাওয়া, নিয়মিত ঘুমানো এবং নিয়মিত ওষুধ গ্রহণ। রোজায় মানুষের জীবন একটা নিয়মে চলে আসে বিধায় এ সময় এসিডিটির সমস্যা অনেকাংশে কমে যায়। কেউ যদি ভয় পেয়ে যান এই ভেবে যে রোজায় তাঁর এসিডিটির সমস্যা বেড়ে যেতে পারে, তাহলে তিনি সেহরি ও ইফতারের সময় রেনিটিডিন বা ওমিপ্রাজল গ্রুপের ওষুধ একটা করে খেয়ে নিতে পারেন। পাশাপাশি অবশ্যই ভাজাপোড়াজাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে।

ডায়াবেটিস
বারডেম হাসপাতালের বিশিষ্ট ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ ডা. ফিরোজ আমিন জানান, রমজানে ডায়াবেটিক রোগীদের রক্তে সুগারের মাত্রা হঠাৎ কমে গেলে বা হঠাৎ করে অজ্ঞান হয়ে পড়লে রোজার কথা চিন্তা না করে দ্রুত এক গ্লাস শরবত খাইয়ে দিন।
তিনি জানান, সেহরির সময় রুটি খাওয়া বেশ ভালো। কেননা তা দীর্ঘ সময় পেটে থাকায় রক্তের গ্লুকোজ হঠাৎ করে কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে না।

হার্টের রোগ
এ বিষয়ে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালের কার্ডিওলজির স্পেশালিস্ট ডা. মোহাম্মদ সাইফউল্লাহ জানিয়েছেন, রোজা রাখার ক্ষেত্রে হার্টের রোগীদের নিদির্ষ্ট কোনো ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। যাঁরা রোগের তীব্র কোনো অবস্থায় নেই তাঁদের রোজা রাখতে কোনো বাধা নেই। তবে রোজায় আমাদের খাবারদাবারে কিছুটা পরিবর্তন আসে। আমরা অভ্যাসগত কারণে ভাজাপোড়া, চর্বিজাতীয় খাবারের প্রতি ঝুঁকে পড়ি। ফলে এ সময় রক্তের কোলেস্টেরল বেড়ে যেতে পারে। তা ছাড়া এ সময় ব্যায়াম ঠিকমতো করতে না পারায় এ সম্ভাবনা আরো বেড়ে যায়। এ ক্ষেত্রে পরামর্শ হলো, এ সময় ভাজাপোড়া এড়িয়ে চলা, চর্বিজাতীয় খাবার পরিহার করা এবং ইফতারের দুই ঘণ্টা পর একটু ব্যায়াম করা। তবে যাঁরা নিয়মিত তারাবির নামাজ আদায় করেন, তাঁরা ব্যায়াম নাও করতে পারেন।

কিডনি রোগ
কিডনি রোগ হলেই রোজা রাখা যাবে না, এমন কোন কথা নেই। তবে এ ক্ষেত্রে বেশ কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নেফ্রোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. এ এইচ হামিদ আহমেদ বলেন, কিডনি ফেইলুর রোগীদের সুনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন করতে হয়, নিয়মিত ওষুধ খেতে হয়, এমনকি পানি খাওয়ার ক্ষেত্রেও বিধিনিষেধ প্রয়োগ করা হয়। তাই রোজা রাখার ক্ষেত্রে তাদের বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। আশার কথা হলো, ইরান, লিবিয়া ও সৌদি আরবে কিডনি রোগীদের ওপর পরিচালিত এক বৈজ্ঞানিক সমীক্ষায় দেখা গেছে, অল্প থেকে মধ্যম মাত্রার কিডনি ফেইলুর রোগীরা রোজা রাখলে কোনো ক্ষতি হয় না। সামান্য যা হয়, রোজার মাস শেষ হয়ে গেলে ১৫ দিনের মধ্যেই তা আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে যায়। তবে যাঁদের কিডনি ফেইলুরের মাত্রা একেবারে শেষ পর্যায়ে, তাঁদের পক্ষে রোজা রাখা সম্ভব নয়। তেমনি যাঁরা ডায়ালাইসিসের রোগী অথবা ইতিমধ্যে কিডনি প্রতিস্থাপন করেছেন, ঘড়ির কাঁটা দেখে ওষুধ খেতে হয় বলে তাঁদের পক্ষেও রোজা রাখা প্রায় অসম্ভব। তবে শারীরিক অবস্থা যা-ই থাকুক না কেন, সর্বাবস্থায় আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রোজা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়াই শ্রেয়।

গর্ভকালীন রোজা
এ ব্যাপারে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগের কনসালট্যান্ট ডা. মুশাররাত সুলতানা সুমি জানান, গর্ভবতী মায়ের যদি শারীরিক কোনো জটিলতা না থাকে তাহলে রোজা থাকতে কোনো বাধা নেই। রোজা রাখবেন কি রাখবেন না এটা নির্ভর করে রোগীর ওপর। প্রয়োজনে এ বিষয়ে রোজার মাস আসার আগেই আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন এমন মা
অনেকে মনে করেন, রোজা রাখলে বুকের দুধ কমে যায়। ফলে সন্তান দুধ থেকে বঞ্চিত হয়। এ ব্যাপারে ডা. মুশাররাত সুলতানা সুমি জানান, বিষয়টি একদম ভুল। কেননা রোজা রাখলে বুকের দুধ কমার কোনো আশঙ্কা নেই । এ ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই সেহরি ও ইফতারের সময় প্রচুর তরল খাবার খেতে হবে। ইফতারের পর শোয়া পর্যন্ত ঘণ্টায় ঘণ্টায় অল্প অল্প করে পানি খেতে হবে।

অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্টের রোগী
রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকলে অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্টের রোগীদের রোজা রাখতে কোনো বাধা নেই। রোজা রাখা অবস্থায় ইনহেলার নেওয়া যাবে কি না, এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেসপিরেটরি ডিজিজ বিভাগের প্রধান ডা. এ কে এম মোশারফ হোসেন জানান, ইনহেলার নিলে রোজা নষ্ট হবে কি না চিকিৎসক হিসেবে তা বলা মুশকিল। যতটুকু জানি, ওষুুধ সরাসরি রক্তে মিশে গেলে রোজা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে সঠিক নিয়মে ইনহেলার নিলে রক্তে ওষুধ মিশতে পারে না বা নগণ্য পরিমাণ মিশতে পারে। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমার পরামর্শ হলো, সেহরি ও ইফতারের সময় ইনহেলার নিন। আর হঠাৎ তীব্র শ্বাসকষ্ট হলে দেরি না করে রোগীকে হাসপাতালে নিন।

চোখের রোগী
রোজায় চোখের রোগীরা যে সমস্যায় পড়েন সেটি হলো রোজা রাখা অবস্থায় ড্রপ ব্যবহার করতে পারবেন কি না। এর কারণ, চোখে ড্রপ দিলে তা মুখে চলে যেতে পারে, যা রোজার জন্য ক্ষতিকর। বিষয়টি নিয়ে বিশিষ্ট চক্ষু বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ জানান, চোখের সঙ্গে নাকের যোগাযোগকারী একটি নালি আছে। কেউ কাঁদলে চোখের পানি তাই নাকে চলে আসে। তাই চোখে ড্রপ দেওয়ার সময় চোখের ভেতরের কোনায় (নাকের পাশে) চেপে ধরলে নালিটি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ওষুধ নাকে বা গলায় যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা থাকে না। সে ক্ষেত্রে রোজা রেখে আপনি অনায়াসে চোখে ড্রপ দিতে পারেন। প্রয়োজনে পদ্ধতিটি রপ্ত করার জন্য আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

ডায়াবেটিস ও রোজা



ডায়াবেটিস ও রোজা
-ডা. আহসানুল হক আমিন

সারা বিশ্বে টাইপ টু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মুসলমানদের ৮০ শতাংশ এবং টাইপ ওয়ানের প্রায় ৪৫ শতাংশ সিয়াম সাধনা করে থাকে। কিন্তু এর আগে ডায়াবেটিক রোগীদের রোজা রাখার বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা ছিল না। বিগত বছরগুলোতে মুসলিম বিশ্বে ব্যাপক গবেষণার মাধ্যমে কিছু নিয়ম নির্ধারণ করা হয়েছে, যেগুলো অনুসরণ করে ডায়াবেটিক রোগীরা সিয়াম পালনরত অবস্থায় জটিলতা এড়িয়ে চলতে পারেন।
রমজানে দীর্ঘ সময় অভুক্ত অবস্থার পরপরই ১০ ঘণ্টার মধ্যে তিনবার খাদ্য গ্রহণের প্রয়োজন হয়। ইফতারের তিন-চার ঘণ্টা পর রাতের খাবার, অতঃপর সূর্যোদয়ের আগে সেহরি, তদুপরি এর সঙ্গে যুক্ত হয় পরিবর্তিত খাদ্য উপাদান। বিশেষত প্রচলিত ইফতারে মুখরোচক মিষ্টি, তৈলাক্ত, শর্করাসমৃদ্ধ খাদ্যের আধিক্য থাকে। দীর্ঘস্থায়ী তারাবির নামাজ ও অন্যান্য ইবাদত, ঈদুল ফিতরের প্রস্তুতি, গ্রামের বাড়িতে যাতায়াত ইত্যাদি কারণে জীবনযাত্রার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। ফলে শরীরে গ্লুকোজ, ইনসুলিন ও চর্বির উল্লেখযোগ্য তারতম্য দেখা দেয়।
ডায়াবেটিক রোগীর জন্য রোজা রাখা নিষিদ্ধ নয়, অসম্ভবও নয়। রমজান শুরু হওয়ার আগে থেকে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্রস্তুতি নিয়ে সহজ ও নিরাপদ উপায়ে রোজা পালন করা যায়। যেসব রোগী শুধু ব্যায়াম ও খাদ্য নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করেন এবং যাঁরা সেনসিটাইজার-জাতীয় ওষুধ (মেটফরমিন ও গি্লটাজন) ব্যবহার করেন, তাঁদের ক্ষেত্রে ঝুঁকির মাত্রা কম। অন্যদিকে সালফোনাইল ইউরিয়া ও ইনসুলিন ব্যবহারকারীরা জটিলতার সম্মুখীন হতে পারেন।

জটিলতা ও প্রতিকার
হাইপোগ্লাইসেমিয়া
দীর্ঘ সময় অভুক্ত থাকা, অতিরিক্ত ও অপরিকল্পিত শারীরিক পরিশ্রম এবং ভুল মাত্রার ওষুধ গ্রহণ শরীরে গ্লুকোজের পরিমাণ আশঙ্কাজনকভাবে কমিয়ে দিতে পারে। এর লক্ষণগুলো হচ্ছে_অস্থির বোধ করা, অতিরিক্ত ঘাম, বুক ধড়ফড়, চোখে ঝাপসা দেখা, অত্যধিক ক্ষুধা, অস্বাভাবিক আচরণ ইত্যাদি। এ লক্ষণগুলো দেখা গেলে অথবা রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ ৩ দশমিক ৫ মিলিমোল/লিটারের নিচে কমে গেলে তাৎক্ষণিকভাবে রোজা ভেঙে ফেলতে হবে।
এক গ্লাস পানিতে চার থেকে ছয় চামচ চিনি গুলিয়ে খাওয়ানো উত্তম। এর অনুপস্থিতিতে যেকোনো ধরনের খাবার (প্রধানত শর্করা ও চিনিসমৃদ্ধ) দেওয়া যেতে পারে। অজ্ঞান রোগীর ক্ষেত্রে মুখে খাবার না দিয়ে চিকিৎসাকেন্দ্রের সহায়তায় শিরায় গ্লুকোজ প্রয়োগ করা জরুরি। এ কারণে সিয়াম পালনরত অবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী গ্লুকোমিটারের মাধ্যমে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নির্ধারণ করে সঠিক মাত্রার ইনসুলিন অথবা মুখে খাওয়ার ওষুধ গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয়।

হাইপারগ্লাইসেমিয়া
রমজানে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বাড়ার আশঙ্কা কয়েক গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। অপরিকল্পিতভাবে ইনসুলিনের মাত্রা হ্রাস এবং শর্করাজাতীয় খাদ্যের আধিক্য এর কারণ। এর লক্ষণগুলো হলো বমিভাব, মাথা ঘোরা, পানির পিপাসা, দুর্বলতা ইত্যাদি। রক্তে কিটোনবডির মাত্রা অত্যধিক বেড়ে গেলে কিটোএসিডোসিসের মতো জীবন সংশয়কারী অবস্থা তৈরি হয়। কাজেই লক্ষণগুলো প্রকাশ পাওয়ায় সঙ্গে সঙ্গে গ্লুকোমিটার ও রক্ত পরীক্ষা, ইনসুলিন গ্রহণ এবং দ্রুত হাসপাতালে যোগাযোগ করতে হবে।

রোজা পালন যাঁদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ
* পূর্ববর্তী তিন মাসের মধ্যে মারাত্দক হাইপোগ্লাইসেমিয়া অথবা কিটোএসিডোসিস আক্রান্ত রোগী, যাঁদের ব্লাড সুগার ব্যাপকভাবে ওঠানামা করে।
* ডায়াবেটিসের সঙ্গে যাঁরা অন্যান্য জটিলতায় ভুগছেন (যেমন_হার্টের সমস্যা, স্ট্রোক, স্নায়ুরোগ ইত্যাদি)।
* অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস।
* যারা বারবার গ্লুকোজস্বল্পতায় (হাইপোগ্লাইসেমিয়া) ভোগেন।
* কিডনি বৈকল্যজনিত অবস্থা, বিশেষত যাঁরা ডায়ালাইসিস গ্রহণ করেন।
* গর্ভাবস্থা।
* বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তি, বিশেষত যাঁরা একাকী বাস করেন।

রমজান শুরু হওয়ার আগে জেনে নিন
* খাদ্য নিয়ন্ত্রণ ও ব্যায়ামের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রিত রোগীদের খাদ্য ও তরল খাবার সম্পর্কে ডাক্তারের কাছ থেকে চার্ট করে নিন।
* মুখে গ্রহণকৃত ওষুধের ধরন ও মাত্রা পরিবর্তন করতে হবে কি না। সাধারণত সকালের ডোজ সামান্য কম মাত্রায় ইফতারের সময় এবং রাতের ডোজ অর্ধেক মাত্রায় সেহরির সময় খেতে বলা হয়।
* ইনসুলিনের ক্ষেত্রে সকালের ডোজ ইফতারের সময় এবং রাতের ডোজ কিছুটা কম পরিমাণে সেহরির সময় নিতে হয়।
* সম্ভব হলে আধুনিক, দীর্ঘস্থায়ী ইনসুলিন (গ্লারজিন ও ডেটেমির) এবং যেসব মুখে খাওয়ার ওষুধ রমজানে বিশেষ উপযোগী (গি্লক্লাজাইড এমআর, গি্লমেপেরাইড) সেগুলোর ব্যবহার করা দরকার।
* দিনের বেলায় ব্যায়াম পরিত্যাগ করে ইফতার অথবা রাতের খাবারের পর আধা ঘণ্টা ব্যায়াম করা যেতে পারে। উল্লেখ্য, তারাবির নামাজে পর্যাপ্ত ব্যায়াম হয়ে থাকে।

রমজান মাসে ডায়াবেটিক রোগীর খাবার
* রমজানের আগে যে পরিমাণ ক্যালরি গ্রহণ করা হতো, তা বজায় রেখে খাবারের ধরন ও সময় বদলাতে হবে। প্রয়োজনে পুষ্টিবিদ অথবা ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা বাঞ্ছনীয়।
* ইফতারে অতিরিক্ত মিষ্টি ও তৈলাক্ত খাবার খাবেন না।
* সেহরি যত বিলম্বে গ্রহণ করা যায় ততই ভালো।
* পর্যাপ্ত পানি ও তরল, ফল, শাকসবজি, ডাল গ্রহণ করতে হবে। ডাবের পানি, সুইটনার ব্যবহৃত শরবত ইফতারের জন্য উপযোগী। তেলে ভাজা খাদ্য (পেঁয়াজু, বেগুনি, পুরি, পরোটা) অল্প পরিমাণে গ্রহণ করা ভালো।
* ইফতারে অধিক ভোজন ও সেহরিতে স্বল্প আহার পরিত্যাগ করুন।

রক্ত পরীক্ষা ও ইনসুলিন গ্রহণ
* রোজা পালনরত অবস্থায় রক্তের গ্লুকোজ মাপা ও চামড়ার নিচে ইনসুলিন গ্রহণ করা জায়েজ বলে দেশের ও মুসলিম বিশ্বের আলেমরা মত দিয়েছেন।
* সেহরির দুই ঘণ্টা পর এবং ইফতারের এক ঘণ্টা আগে গ্লুকোজ পরীক্ষা করে ওষুধের মাত্রা ঠিক করতে হবে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের মূলমন্ত্র সুশৃঙ্খল জীবনপদ্ধতি। সঠিক নির্দেশনা অনুযায়ী সিয়াম সাধনা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের একটি উত্তম সুযোগ। এতে রক্তে গ্লুকোজ ও চর্বির পরিমাণ হ্রাস পায় এবং ওজন কমানোর ক্ষেত্রেও এর প্রভাব দেখা যায়।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক এবং ডায়াবেটিস ও হরমোন রোগ বিশেষজ্ঞ
বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল
গ্রন্থনা : হুমায়রা ফেরদৌস

শুক্রবার, ২০ আগস্ট, ২০১০

রোজা রাখার ক্ষেত্রে রোগীদের কোনো নিষেধ আছে কি?



রোজা রাখার ক্ষেত্রে রোগীদের কোনো নিষেধ আছে কি?

রোজা না রাখার ব্যাপারে অনেকেই অজুহাত খোঁজেন ৷ বিশেষ করে কারও যদি সামান্য কোনো অসুস্ট্হতা থাকে তাহলে তিনি রোজা না রাখার পেছনে সেই অজুহাতকেই হাতে তুলে নেন ৷ অথচ সত্যি কথা হচ্ছে সামান্য অসুস্ট্হতা দহৃরে থাক, অনেক কদ্ধনিক রোগ অর্থাত্ দীর্ঘস্ট্হায়ী নিয়ল্পপণযোগ্য বিভিল্পম্ন রোগেও রোজা রাখার ব্যাপারে কোনো নিষেধ নেই ৷ বরং বিভিল্পম্ন রোগে রোজা রাখার ব্যাপারে উত্সাহিত করা হয়েছে ৷ আর সুস্ট্হ অবস্ট্হায় রোজা রাখা যে শরীরের জন্য উপকারী সে কথা এখন প্রায় সবারই জানা ৷ রোজার সঙ্গে যেহেতু না খেয়ে থাকার একটা সম্ঙ্র্ক রয়েছে ৷ তাই পেপটিক আলসার কিংবা বদহজম ও বুকজ্বলার সমস্যায় আকদ্ধাল্পস্ন রোগীদের অনেকেই বলে থাকেন রোজা রাখলে এ সমস্যা বেড়ে যাবে ৷ আর এ কারণে তারা রোজা রাখেন না ৷ আসলে এ ধারণা কিল্পস্নু একদম সত্যি নয় ৷ বিশেষজ্ঞদের মতে এ জাতীয় সমস্যায় আকদ্ধাল্পস্ন রোগীদের জন্য রোজা ভালো ৷ তবে এসব সমস্যার জন্য কেউ যদি ওষুধ খেয়ে থাকেন তাহলে তাকে সে ওষুধ কিল্পস্নু খেতে হবে ৷ ডায়াবেটিক রোগীদের অনেকেই রোজা না রাখার পেছনে এই রোগটিকে দায়ী করে থাকেন ৷ কিল্পস্নু বিশেষজ্ঞদের মতে ডায়াবেটিক আকদ্ধাল্পস্ন রোগীদের ক্ষেত্রে রোজা রাখতে কোনো নিষেধ নেই ৷ মোটামুটিভাবে নিয়ল্পিপত ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে খুব সহজেই রোজা রাখা সল্ফ্ভব ৷ তবে রোজা রাখার জন্য ডায়াবেটিস নিয়ল্পপণের ইনসুলিন কিংবা কোনো ওষুধ গ্রহণের সময়টাকে একটু পরিবর্তন করে সাহরি ও ইফতারের সঙ্গে সমল্প্বয় করে নিতে হবে ৷ এ ব্যাপারে একজন হরমোন বিশেষজ্ঞ কিংবা মেডিসিন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আলোচনাসাপেক্ষে সিদব্দাল্পস্ন নেয়া যেতে পারে ৷ আমাদের দেশে অনেক হাঁপানি রোগী আছেন ৷ হাঁপানি রোগীদের কেউ কেউ মনে করেন রোজা না রাখার কারণ হিসেবে হাঁপানির কথা বলে থাকেন ৷ আসলে রোজা কোনোভাবেই হাঁপানি রোগ বাড়িয়ে দিতে কোনো ভহৃমিকা রাখে না ৷ বরং বিশেষজ্ঞদের মতামত হচ্ছে রোজা হাঁপানি রোগীকে কিছুটা স্ট্বস্টিস্ন এনে দেয় ৷ হূদরোগীদের জন্য রোজা রাখা খুবই উপকারী ৷ উচ্চ রক্তচাপ নিয়ল্পপণসহ কোলেস্টেল্টরলের মাত্রা নিয়ল্পপণেও রোজা বিশেষ গুরুত্ম্বপহৃর্ণ ভহৃমিকা পালন করে থাকে ৷ এক গবেষণায় দেখা গেছে, রোজা রাখার মাধ্যমে রোগীদের কোলেস্টেল্টরল মাত্রা প্রায় ১০-২০ শতাংশ কমে গেছে ৷ একইসঙ্গে তাদের উচ্চ রক্তচাপের প্রবণতাও কমে যায় ৷ আজকাল অনেকেই স্ট্বাস্ট্হ্যসল্ফ্মত জীবন-যাপনের কথা ভাবেন ৷ সুস্ট্হভাবে বেঁচে থাকার চেদ্বা করেন, ঠিক রাখতে চান ফিগারটিকেও ৷ এ সবকিছুর ক্ষেত্রে রোজা ইতিবাচক ভহৃমিকা রাখতে পারে ৷ তবে প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই রোজা রাখার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার গ্রহণের ব্যাপরেও সচেতন হতে হবে ৷ অপরিমিত অস্ট্বাস্ট্হ্যকর ইফতার গ্রহণ রোজার সুফলকে মাটি করে দিতে পারে ৷ শেষ কথা হচ্ছে নিয়ল্পপণযোগ্য রোগে কিংবা সামান্য অসুস্ট্হতায় রোজা রাখতে কোনো নিষেধ নেই বরং রোজা রাখা রোগ নিয়ল্পপণে সাহায্য করে ৷ তবে তীব্র অসুস্ট্হতায় কিংবা জটিল রোগে রোজা রাখা ঠিক হবে না ৷ তবে এ বিষয়ে সিদব্দাল্পস্ন দেবেন সংশি্নদ্ব চিকিত্সক ৷

বুধবার, ১৮ আগস্ট, ২০১০

INCOME IN IIDUL FITR (ঈদের আয়-রোজগার)



ঈদের আয়-রোজগার
ঈদ সামনে রেখে বাজার এখন গরম। ক্রেতারা ঘরে থাকতে পছন্দ করছে না, বিক্রেতারাও পথের ধারে জমিয়ে বসেছে। পোশাকে ব্লকের কাজ করে আপনিও এ সময়ে ভালো আয় করতে পারেন। বিস্তারিত জানাচ্ছেন জোবায়দা লাবনী
প্রথমেই ক্রেতাশ্রেণী নির্দিষ্ট করুণ। ক্রেতাদের রুচি-পছন্দ জানতে বিভিন্ন পোশাকের দোকানে দিনকয়েক টহল দিতে পারেন। সে অনুযায়ী পোশাকের রং ও নকশা করতে হবে। আপনি যেহেতু নতুন তাই কিছু প্রচারণাও চালাতে হবে। প্রথম পর্যায়ে আত্দীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে কিছু অর্ডার নিতে পারেন। যেহেতু কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা ব্লকের পোশাক ব্যবহার করেন বেশি তাই তাঁদের হোস্টেলগুলোর সামনে বসার জায়গা ঠিক করে নিতে পারেন। আপনি নিজে না বসতে চাইলে হোস্টেলের কারো সঙ্গে চুক্তিতেও আসতে পারেন।
পুঁজি কেমন লাগবে
অল্প পুঁজিতেই এ ব্যবসা শুরু করা যায়। শুধু অর্ডার অনুযায়ী যদি কাজ করতে চান, তবে প্রাথমিকভাবে দুই হাজার টাকা দিয়েই শুরু করতে পারেন। আর যদি আনস্টিচ পোশাকে ব্লক করে বিক্রি করতে চান তবে পাঁচ হাজার টাকাই যথেষ্ট।
দরদাম
একরঙা শাড়ি পাইকারি দরে কিনতে হলে ১২ থেকে ৩৬টি কিনতে হয়। একটি শাড়ির দাম ১৮০ থেকে ২৫০ টাকা। গজ কাপড় পাইকারি মূল্যে কিনতে হলে একসঙ্গে কমপক্ষে ৩০ গজ কিনতে হবে। সে ক্ষেত্রে এক গজ সুতি কাপড় ৩৫ থেকে ৬০ এবং সিনথেটিক কাপড় ৫০ থেকে ৮০ টাকা। ওড়না পাইকারি দরে কিনতে চাইলে একই ধরনের ওড়না কমপক্ষে ১২টি নিতে হবে। একটির দাম পড়বে ৮০ থেকে ১৫০ টাকা। এক্রামিন কালার ও রাসায়নিক দ্রব্যগুলো পাইকারি কিনতে হলে প্রতিটি কমপক্ষে এক কেজি কিনতে হবে। এক কেজি অ্যাক্রামিন কালারের মূল্য ১৪০ থেকে ৪২০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। এক কেজি বাইন্ডার ১৫০, হোয়াইট পেস্ট ১৮০, নিউটেক্স ৬০, এনকে ১৮০, এপিজোন ৮০ ও ম্যাটপেস্ট ৩২০ টাকায় বিক্রি হয়। নকশার জন্য বাজারে আম ও শিশু এই দুই ধরনের কাঠের ডাইস বিক্রি হয়। শিশু কাঠের ডাইস চারটির এক সেটের মূল্য ৩২০ থেকে ৩৭০, তিনটির সেটের মূল্য ২৮০ থেকে ৩০০ ও দুইটির সেটের মূল্য পড়বে ২০০ থেকে ২২০ টাকা। আম কাঠের তৈরি ডাইস চারটির এক সেট ২২০ থেকে ২৫০, তিনটির সেট ১৮০ থেকে ২০০ ও দুইটির সেট ৯০ থেকে ১২০ টাকা দরে বিক্রি হয়। এ ছাড়া ছোট ছোট একক ডাইস পাঁচ থেকে ১০ টাকায় বিক্রি হয়।

যেখান থেকে কিনতে পারেন
ব্লক প্রিন্ট করার জন্য একরঙা শাড়ি কিনতে পারেন ধানমণ্ডি হকার্স মার্কেট, এলিফ্যান্ট রোডের নূরানী মার্কেট, গাউছিয়া মার্কেট, ইসলামপুর ও চকবাজার থেকে। গজ কাপড় ও ওড়না কিনতে পারেন গাউছিয়া, চাঁদনী চক, নিউমার্কেট, চকবাজার ও ইসলামপুর থেকে। বৃহৎ পরিসরে ব্যবসাটি শুরু করতে চাইলে ব্লকের ডাইস কিনতে পারেন নরসিংদীর মাধবদী থেকে আর বিভিন্ন ধরনের রং ও রাসায়নিক দ্রব্য কিনতে পারেন নারায়ণগঞ্জ অথবা কামরাঙ্গীরচর থেকে। তবে ছোট ও মাঝারি পরিসরে ব্যবসার জন্য এগুলো কিনতে পারেন এলিফ্যান্ট রোডের নূরানী মার্কেট, চকবাজার ও গুলিস্তানের গাউসুল আজম মার্কেট থেকে।

কেমন কাপড় লাগবে
সুতি ও সিনথেটিক উভয় ধরনের কাপড়ের ওপরই ব্লক প্রিন্ট করতে পারেন। শাড়ি, থ্রিপিস, ফতুয়ার পাশাপাশি বাচ্চাদের পোশাক, বিছানার চাদর, বালিশ, কুশন কভার, ওয়ালম্যাট প্রভৃতিতে এ প্রিন্ট করতে পারেন।

যা কিছু কিনতে হবে
কোন ধরনের পোশাক তৈরি করবেন তার ওপর ভিত্তি করে প্রথমেই আপনাকে একরঙা শাড়ি, গজ কাপড়, ওড়না ইত্যাদি কিনতে হবে। কিনতে হবে ব্লকের রং বা অ্যাক্রামিন কালার। এ রঙের বৈচিত্র্য ও স্থায়িত্ব বাড়াতে রঙের সঙ্গে মেশানোর জন্য কিনতে হবে বাইন্ডার, এনকে, হোয়াইট পেস্ট, ডিপ নিউটেক্স, ম্যাটপেস্ট প্রভৃতি রাসায়নিক দ্রব্য। নকশা করার জন্য কিনতে হবে বিভিন্ন আকার ও নকশার ডাইস।

জানতে হবে যেসব বিষয়
কাপড়ের ধরন অনুযায়ী রং ও রাসায়নিক দ্রব্যের অনুপাত নির্ধারিত হয়। এগুলো কী অনুপাতে মেশাতে হবে, সে বিষয়ে ধারণা থাকতে হবে। বাজারে মাত্র ৮-১০টি অ্যাক্রামিন কালার বিক্রি হয়। বাকি রংগুলো বিভিন্ন রঙের সমন্বয়ে নিজেকেই তৈরি করতে হবে। সে ক্ষেত্রে কোন কোন রঙের সমন্বয়ে কী রং উৎপন্ন হয় সেটি জেনে নিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, একই পোশাকে একই নকশার ক্ষেত্রে রংগুলো যেন একটি থেকে অন্যটি বেশি হালকা বা গাঢ় না হয়ে যায়

শুক্রবার, ৬ আগস্ট, ২০১০

রোজার মাসে সুস্থ থাকুন

 

রোজার মাসে সুস্থ থাকুনরোজায় খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসে। এর প্রভাব পড়ে শরীরে। অনেকেই নানাবিধ শারীরিক সমস্যায় ভোগেন। কিন্তু কয়েকটি বিষয় জানা থাকলে এসব সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব। লিখেছেন ডা. মুজাহিদ আকাশ
ভালো থাকার জন্য সুস্থতা জরুরি। প্রবাদ আছে, অসুস্থ মানুষ কোনো সুখ উপভোগ করতে পারে না। কিন্তু সুস্থ থাকা কি সহজ কাজ? আরো কঠিন হয় যদি উপায় জানা না থাকে। কারণ বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য গ্রহণ করতে হয়, আর সব খাবারই শরীরের ওপর কোনো না কোনো প্রভাব ফেলে। মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ আল-কোরআনে খাদ্য সম্পর্কে বিভিন্ন নির্দেশনা আছে। হাদিসে আছে অসুখ হওয়ার আগে ভালো খাবার খেয়ে প্রতিরোধের কথা। শুধু খাবারে নয়, দৈনন্দিন জীবনযাপনও যাতে স্বাস্থ্যপ্রদ হয়, সে বিষয়ে বলা আছে ধর্মগ্রন্থে।
অথচ মুসলমানরা বেশি পুষ্টিহীনতায় ভোগে। স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি, এ রকম অভ্যাসের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তির সংখ্যাও তাদের মধ্যে বেশি। বিশেষ করে এশিয়ার মুসলিম দেশগুলোতে। দ্য হেলথ সার্ভে অব ইংল্যান্ডের গবেষণা অনুযায়ী, এশিয়ার মুসলিম দেশগুলোতে গড়ে ২৪ শতাংশ লোক ধূমপান করে। বাংলাদেশে এই হার ৪০ শতাংশ।
একই জরিপে জানা যায়, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে ডায়াবেটিসের হার অনেক বেশি। পাকিস্তান ও বাংলাদেশে ডায়াবেটিসে আক্রান্তের হার বিশ্বে অন্যান্য দেশের চেয়ে প্রায় পাঁচ গুণ বেশি।
গবেষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশের মাত্র ২৮ শতাংশ লোক প্রয়োজনীয় পুষ্টিসম্পন্ন ফলমূল, শাকসবজি খায়, পাকিস্তানে এই হার ৩৩ শতাংশ।
ব্যালান্সড ডায়েট ও লাইফস্টাইলের মান বাড়াতে রমজান মাসের রোজা কাজে লাগতে পারে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে এটাই সত্য।
রোজা রাখার মাধ্যমে খাদ্য গ্রহণ করার ইচ্ছাকে সংবরণ করা যায়। ফলে সেটি একটি ভালো অভ্যাসে পরিণত হয় এবং অপ্রয়োজনে বেশি করে খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়।

রোজায় শরীরে কী কী স্বাভাবিক পরিবর্তন ঘটে
অনেকেই প্রশ্ন করেন, রোজার সময় না খেয়ে থাকা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, না ক্ষতিকর? এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে জানা দরকার রোজা বা না খেয়ে থাকার সময়টাতে শরীরে কী কী পরিবর্তন ঘটে।
এই পরিবর্তন নির্ভর করে কতটা সময় না খেয়ে থাকা হলো তার ওপর। খাদ্য গ্রহণ বন্ধ করার সঙ্গে সঙ্গেই কিন্তু শরীর অনশন (ফাস্টিং স্টেট) অবস্থায় যায় না। সর্বশেষ খাবার গ্রহণের মোটামুটি আট ঘণ্টা পর ফাস্টিং স্টেট শুরু হয়। অর্থাৎ খাবার গ্রহণের আট ঘণ্টা পর্যন্ত ওই খাবার শরীরে হজম হয়, তা থেকে শক্তি সঞ্চিত হতে থাকে। আট ঘণ্টা পর ওই খাবারের সরাসরি প্রভাব শরীরে থাকে না।
স্বাভাবিক সময়ে লিভার ও মাংসপেশিতে জমে থাকা গ্লুকোজ ভেঙে শক্তি উৎপন্ন হয়। এটাই শরীরের শক্তির প্রধান উৎস। রোজার সময় প্রথমে জমে থাকা গ্লুকোজ শক্তি উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত হয়। গ্লুকোজ শেষ হয়ে গেলে শরীরে জমে থাকা চর্বি ভেঙে শক্তি তৈরি হয়। আরো কিছু শারীরিক প্রক্রিয়ায় লিভারে সামান্য কিছু গ্লুকোজও এ সময় তৈরি হয় এবং তা থেকে শক্তি উৎপন্ন হয়।
যদি দীর্ঘ সময় (২৪ ঘণ্টার বেশি থেকে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত_সাধারণত আমরণ অনশনকারীরা যেটা করেন) না খেয়ে থাকা হয়, তবে ধীরে ধীরে শরীরের প্রোটিন ভাঙতে শুরু করে। এভাবে না খেয়ে থাকার ফলে শরীরে মাংসপেশি শুকিয়ে যেতে থাকে, শরীরে মারাত্দক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। কোনোমতেই এ ধরনের দীর্ঘমেয়াদি অনশন স্বাস্থ্যকর নয়_স্বাস্থ্যহানিকর ও কখনো কখনো প্রাণঘাতী।
রোজায় যেহেতু সূর্যোদয় (সুবহে সাদিক) থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকতে হয়, তাতে মাত্র কয়েক ঘণ্টা ফাস্টিং বা অনশন স্টেটে থাকতে হয়। তাই সুবহে সাদিক ও ইফতারে যে খাবার গ্রহণ করা হয়, তা থেকেই শরীর প্রয়োজনীয় গ্লুকোজ জোগাড় করতে পারে। সেহরিতে খাওয়া খাদ্যের গ্লুকোজ যখন আট ঘণ্টা পর শেষ হয়, তখন শরীরে সঞ্চিত চর্বি ভেঙে শক্তি তৈরি হয়। এ কারণেই রোজায় শরীরের ওজন খানিকটা কমে। মাংসপেশির প্রোটিন কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। শরীরের বাড়তি এই চর্বি কমে যাওয়ার ফলে কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস পায়, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। একই সঙ্গে শরীরে ডিটক্সিফিকেশন ঘটে। ডিটক্সিফিকেশন অর্থ শরীরে জমে থাকা কিছু ক্ষতিকর পদার্থ বডি ফ্লুইডের সঙ্গে দ্রবীভূত হয়ে শরীর থেকে বের হয়ে যাওয়া।
কয়েক দিন রোজা পালনের পর রক্তে এনডোরফিনসের মতো কয়েকটি হরমোনের মাত্রা বাড়ে। এই হরমোনটি মানুষকে বেশি সচেতন করে, শরীর ও মনকে প্রফুল্ল রাখে।
রোজায় সেহরি ও ইফতারে পুষ্টিকর খাবার ও পানির বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। শরীরের পানি ও খনিজ লবণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে কিডনি কাজ করে, বিশেষ করে সোডিয়াম ও পটাশিয়ামের ভারসাম্য বজায় রাখতে। ঘামের মাধ্যমে যে লবণ বের হয়, তার বেশির ভাগই সোডিয়াম ও পটাশিয়ামের যৌগ। তাই রোজার সময় যাতে অতিরিক্ত ঘাম হয়ে শরীরে লবণ ও পানির ঘাটতি না হয়, সে জন্য খাদ্যতালিকায় কিছু কার্বহাইড্রেট, চর্বি, লবণ ও পর্যাপ্ত তরল থাকতে হবে।

যে খাবারে উপকার, যে খাবারে ক্ষতি
রোজা শরীরের জন্য উপকারী হতে পারে, যদি সঠিক খাদ্যতালিকা মেনে চলা যায়। খাদ্যতালিকা সঠিক না হলে বরং ক্ষতি হতে পারে। মনে রাখতে হবে, রোজা রাখা মানে কিন্তু শুধু না খেয়ে থাকা নয়; বরং শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা রোজায় অর্জনের জন্য বিশেষভাবে বলা আছে।
রোজার সুফল পেতে হলে সঠিক খাবার পরিমিতভাবে খেতে হবে। কারণ অস্বাস্থ্যকর খাবার শরীর খারাপ করে, মনকে অস্থির রাখে; যা রোজার ধর্মীয় উদ্দেশ্যর একেবারে বিপরীত। পরিমাণে কম হলেও ব্যালান্সড ডায়েট বা পুষ্টিকর খাবার শরীর ঠিক রাখে। স্বাভাবিক সময়েও প্রত্যেকেরই বিজ্ঞানসম্মত পুষ্টিকর খাবার খাওয়া দরকার। তেমনিভাবে রোজায় খাবার অন্য সময়ের চেয়ে খুব বেশি আলাদা হওয়ার দরকার নেই। খাবারের ধরনের অভ্যাস পরিবর্তন হলে বরং তা স্বাস্থ্যে কিছু ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।
রমজানের খাদ্যতালিকায় থাকবে মোট খাবারের তিন ভাগের এক ভাগ ফলমূল ও শাকসবজি। বাকি তিন ভাগের এক ভাগে রাখুন ভাত, রুটি, পাউরুটি, আলুর মতো কার্বহাইড্রেট-জাতীয় খাবার। এর সঙ্গে প্রোটিন হিসেবে রাখুন মাছ, মাংস, অল্প চর্বিযুক্ত খাবার, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার।
কার্বহাইড্রেট খাবার বাছাইয়ের সময় কমপ্লেক্স কার্বহাইড্রেট রাখলে সারা দিন শরীরে শক্তি পাওয়া যায়। কমপ্লেক্স কার্বহাইড্রেট ধীরে ধীরে দীর্ঘ সময় ধরে শক্তি উৎপাদন করে। ঢেঁকিছাঁটা চাল, বাসমতি চাল, ওট, লাল আটা কমপ্লেক্স কার্বহাইড্রেট-জাতীয় খাবার।
ফাইবারসমৃদ্ধ খাবারও ধীরে ধীরে হজম হয় এবং দীর্ঘ সময় শক্তি সরবরাহ করতে পারে। যেমন_ছোলা-বুট, শিমের বীজ, খোসাসহ আলু, শাকসবজি ও প্রায় সব ধরনের ফলই ফাইবারসমৃদ্ধ।
তবে রোজার সময় বেশ কিছু খাবার খাওয়া স্বাস্থ্যসম্মত নয়। দুঃখজনক হলো, এই খাবারগুলোই আমাদের দেশের মানুষ খেতে পছন্দ করে। যেমন_বেশি করে ভাজা খাবার (পিঁয়াজু, বেগুনি, পাকোরা, সিঙাড়া, সমুচা ইত্যাদি), ভুনা মাংস বা মাংসের ফ্রাই, বেশি তেলযুক্ত বা বেশি তেলে রান্না করা খাবার, উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার (পেস্ট্রি), উচ্চমাত্রার চিনিযুক্ত খাবার (সব রকম মিষ্টি, জিলাপি), বেশি মসলাযুক্ত খাবার, রিফাইন্ড সুগারসমৃদ্ধ খাবার বা প্রসেস করা খাবার ও ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় (চা, কফি, কোলা)। ক্যাফেইনযুক্ত খাবারে ডাইইউরেটিকস থাকে বলে প্রস্রাবের পরিমাণ বেশি হয়, শরীর থেকে প্রয়োজনীয় পানি রোজার সময় বের হয়ে যায়।
সেহরিতে খাবার খুব বেশি খেয়ে ফেলবেন না। সারা দিন শক্তি পাওয়ার জন্য বরং এই বেলার খাবারে কমপ্লেক্স কার্বহাইড্রেট ও ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার রাখুন। অন্যদিকে ইফতারে দ্রুত শক্তি দিতে পারে এমন খাবার খাওয়া উচিত। তাই খেজুর, ফলের জুস, চিনিযুক্ত লেবুর শরবত সবচেয়ে ভালো। খেজুর ভেঙে খুব সহজেই গ্লুকোজ উৎপন্ন হতে পারে বলে এটি খুব অল্প সময়ের মধ্যে শরীরে শক্তি সরবরাহ করতে পারে। এটি খাওয়া সুন্নতও। ইফতারে ভাজাপোড়াজাতীয় খাবার খেতে যতই মজা পাওয়া যাক না কেন, তা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী নয়।
এবার দেখা যাক কোরআন ও হাদিসে কোন ধরনের খাবার খেতে বলা হয়েছে এবং কিভাবে খেতে বলা হয়েছে। রাসুল (সা.) দুধ ও দুগ্ধজাতীয় খাবার, খেজুর, ভেড়া, দুম্বা, ছাগল ও উটের মাংস খেতেন। ইসলামে স্বাস্থ্যকর খাবার হিসেবে উল্লেখ করা আছে ফলমূল, শাকসবজি, অলিভ, পেঁয়াজ, শসা, আঙুর, খেজুর ও মাছের কথা।

ধর্ম ও খাদ্য
ইসলামে খাদ্যের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে খাবারের রয়েছে বিশেষ সম্পর্ক। কোরআনে বলা আছে, সেই খাবারগুলো খেতে হবে, যা হালাল করা হয়েছে এবং তা খেতে হবে পরিমিতভাবে। ইসলামে অতিভোজনকে নিরুৎসাহ করা হয়েছে।
মানুষ যে খাদ্য গ্রহণ করে, তা তার শারীরিক ও মানসিক অবস্থার ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। খাবার তার আচরণ ও ব্যক্তিত্বেও প্রভাব ফেলে। পরিমিত ও পুষ্টিকর খাবার শরীর ও মনকে প্রফুল্ল রাখে। ইসলামে সুস্থতা বলতে সব সময়ই শরীর ও মন উভয়কেই সুস্থ রাখার কথা বলা হয়েছে।
তিরমিজি হাদিসে বর্ণিত আছে, আদম-সন্তানরা যেন জাহাজের মতো পেট ভরাট না করে। তার সেটুকুই খাওয়া উচিত, যা তার জীবনধারণের জন্য দরকার।
বলা হয়েছে পেটের তিন ভাগের এক ভাগ খাবার দিয়ে, এক ভাগ পানি দিয়ে পূর্ণ করতে এবং বাকি এক ভাগ খালি রাখতে।

রোজায় শারীরিক কিছু সমস্যা ও তার প্রতিকার
নিয়ম মেনে রোজা পালন করলে সাধারণত সমস্যা হয় না। তার পরও কিছু সমস্যা হতে পারে দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকার কারণে।

হার্টবার্ন বা বুকজ্বলা
পাকস্থলীতে সব সময় এসিড থাকে। এতে খাদ্য হজম হয় ও খাদ্যে থাকা ব্যাকটেরিয়া মারা যায়। কিন্তু পাকস্থলীর গাত্রে থাকা বিশেষ পিচ্ছিল আবরণের জন্য এসিডের কারণে পাকস্থলী ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। তবে কোনো কারণে প্রয়োজনের অতিরিক্ত এসিড তৈরি হলে বা পাকস্থলীতে খাবার না থাকার সময় এসিড নিঃসরণ হলে অথবা পাকস্থলী থেকে এসিড ইসোফেগাসে (খাদ্যনালির অংশ) চলে এলে বুক জ্বলে। রোজার সময় এই হার্টবার্ন বা বুকজ্বলা সমস্যাটি অনেকের হয়।
সাধারণত রোজা রাখলে এসিড কম তৈরি হওয়ার কথা, কিন্তু ক্ষুধা পেলে ও খাবারের কথা চিন্তা করার কারণে কারো কারো এসিড নিঃসরণ বেড়ে যায়। তাঁদের হার্টবার্ন বা বুকজ্বলা সমস্যা বেশি হয়।
এ সমস্যায় অ্যান্টাসিড, রেনিটিডিন, ওমিপ্রাজল ও ইসোমিপ্রাজল ওষুধ খাওয়া যেতে পারে। সেহরি খাওয়ার সময় এ-জাতীয় ওষুধ খাওয়া যেতে পারে।
তবে ওষুধ খেয়ে হার্টবার্ন দূর করার চেয়ে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে করা বেশি ভালো। পরিহার করতে হবে তৈলাক্ত, ভাজাপোড়া, বাসি ও অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার। তা ছাড়া ধূমপান করার অভ্যাস থাকলে তা থেকে এই সময়টায় বিরত থাকতে হবে।
যাঁদের টক ঢেঁকুর আসে, বুক জ্বলে, তাঁরা শোয়ার সময় একটু উঁচু বালিশ ব্যবহার করলে উপকার পাবেন।

অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস
রোজায় খাবার কম খাওয়া হয় বলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকার কথা। কিন্তু সেহরি ও ইফতারে অনিয়ন্ত্রিত খাওয়ার কারণে রক্তে সুগার বাড়তে পারে এবং দুপুরে না
খাওয়ায় সুগার হঠাৎ কমে যেতে পারে। আবার যাঁরা হেঁটে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখেন, রোজার কারণে এ সময় তা সম্ভব হয় না।

মাথাব্যথা
রোজায় খুব কমন সমস্যা এটি। বেশ কিছু কারণে মাথাব্যথা হয়। বড় কারণ পানিশূন্যতা, ক্ষুধা, ঘুম ও রেস্ট কম হওয়া, চা-কফি পান না করা।
এ সমস্যাটি কম হবে, যদি সেহরি মিস না হয়, ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত পানি ও তরল বেশি করে পান করা যায়। যাঁদের মাথাব্যথার সমস্যা রোজায় প্রতিদিনই হয়, তাঁরা সেহরিতে একটা প্যারাসিটামল ট্যাবলেট খেতে পারেন। রোদে সরাসরি যাবেন না, ছাতা ও সানগ্লাস ব্যবহার করবেন। যাঁদের মাইগ্রেনের সমস্যা আছে, তাঁরা চিকিৎসকের পরামর্শমতো রোজা রাখুন।

পানিশূন্যতা
রোজা রাখায় পানিশূন্যতা দেখা দেয়। সারা দিন ঘাম, প্রস্রাব ও শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে প্রচুর পানি শরীর থেকে বেরিয়ে যায়; কিন্তু রোজা রাখায় তা আর পূরণ করা সম্ভব হয় না। বয়স্কদের এ সমস্যা বেশি হয়। আবার যাঁরা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ডাইইউরেটিকস ওষুধ সেবন করেন, তাঁদেরও হয়।
সেহরি ও ইফতারের মধ্যে রাতে পানি বেশি করে পান করুন। বারবার পান করুন। যাঁদের ওষুধ সেবনজনিত পানিশূন্যতা হয়, তাঁরা সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

কনস্টিপেশন বা কোষ্ঠকাঠিন্য
রোজায় বিরক্তিকর এ সমস্যাটি বেশি হয়। এর কারণ পানিশূন্যতা ও ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার কম খাওয়া। এ সময় বেশি শাকসবজি ও ফলমূল খেতে হবে। লাল আটা ও ঢেঁকিছাঁটা চাল খেতে পারলে উপকার পাবেন। তার পরও সমস্যা থাকলে ল্যাক্সেটিভ ওষুধ খেতে পারেন।

স্ট্রেস
খাবার ও পানি কম হওয়া, ঘুম ও বিশ্রাম কম হওয়া, জীবনযাপনের রুটিন পরিবর্তন হওয়ায় স্ট্রেস বা মানসিক চাপ বাড়ে। তাই রোজা শুরু হওয়ার একটু আগে থেকে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করলে উপকার পাওয়া যায়। বিশেষ করে দুপুরের খাবার ও সকালের চা। চেষ্টা করুন রোজা শুরু হওয়ার আগেই এ দুটি খাবার না খেতে বা যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে। সন্ধ্যার পর থেকে পানি বেশি খাওয়ার অভ্যাসটাও করে নিতে পারেন।
রোজার সময় রাতে উঠতে হয় বলে ঘুম কম হয়, বিকেলে ক্ষুধা বেশি লাগে বলে শরীর দুর্বল হয় ও বিশ্রামের প্রয়োজন হয়। তাই সকালে একটু বেশি সময় ঘুমিয়ে নিন বা বিকেলে একটু রেস্ট নিন অথবা রাতে এক ঘণ্টা আগে ঘুমাতে যান।

তথ্য ও পরামর্শ সহায়তা
ড. এ এম এম মোকাররম হোসেন
অধ্যাপক, খাদ্য ও পুস্টি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

Relaeted Other Islamic Blog

Other Blog-site: